গাড়ির চাকা চললে আমগো পেট চলে

সৈয়দ মিঠুন, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: ওরা নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ। দিন আনে দিন খায়। রোজগার না হলে ঘরে চুলা জ্বলে না। অভুক্ত থাকতে হয় পরিবারের লোকদের। উপায় নেই, তাই খেয়ে না খেয়ে পার করতে হয় দিন। খাবার না পেয়ে ক্ষুধার্ত শিশুদের কান্নায় বুক ফেটে যায় অসহায় বাবা-মাদের। চলমান লকডাউনে কাজ না থাকায় এই মর্মপীড়া তাদের মনে বেশি করে বাজছে। গৃহহীন ও নিম্নয়ায়ের মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছে ঘাটাইল উপজেলায়। রিকশাচালক থেকে শুরু করে, ঠেলাগাড়িচালক, হকারি, ফুটপাতে সবজিসহ তরকারি বিক্রি, দোকানপাটে কর্মচারী, হোটেল শ্রমিক ও পরিবহন শ্রমিকসহ নানা পেশায় জড়িয়ে রয়েছে তারা।

বর্তমান করোনাকালে কঠোর বিধিনিষেধে এসব পেশার নিম্নআয়ের মানুষের কর্মের পরিধি সংকুচিত হওয়ায় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কর্মের সুযোগ না থাকায় আয়ের পথ বন্ধ হয়ে পড়েছে। তাদের দিন যাচ্ছে অনাহারে-অর্ধহারে। পায় না কোনো সরকারি-বেসরকারি সাহায্য সহযোগীতা। পাশে এসে দাঁড়ায়নি সমাজের বিত্তশালীরা। খোঁজ নেয়নি জনপ্রতিনিধিরাও। কর্মহীন এসব নিম্নআয়ের মানুষের কষ্টমাখা জীবনের গল্প শনবে কে? এ যেনো শুনার কেউ নেই

লকডাউনে শ্রমজীবী মানুষের দিন কেমন চলছে- তা খোঁজ নিতে বুধবার দুপুরে ঘাটাইল প্রধান বাসস্ট্যান্ডে সরজমিনে গিয়ে সেখানে দেখা যায়, বেশ জটলা বেধেই অলস সময় পার করছে কিছু শ্রমিকরা। তাদের মধ্যেই একজন শ্রমিক ৪০ বছর বয়সি হারুন। তিনি বাসের ড্রাইভার। বাস ড্রাইভার তিনি আক্ষেপের সুরে বললেন, ‘গাড়ি বন্ধ মানে আমগো সবই বন্ধ। গাড়ির চাকা চললে আমগো পেট চলে, ঘরে চুলা জ্বলে, দু’মুঠ ডাইল ভাত পেটভরে খেতে পাই। খুব কষ্টের মধ্যে দিন পার করছি। দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় সরকার লকডাউন দিছে। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছি। যতদিন লকডাউন প্রয়োজন থাকুক। কিন্তু লকডাউনের জন্য কি আমরা মরমু? সরকার ঘরে ঘরে খাবার যেন পৌঁছে দেয় এই দাবি জানাই।’

কথা হয় বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষের সাথে। তারা বলেন, মা-বাবা ও স্ত্রী-সন্তান নিয়েই তো আমাদের সংসার। প্রতিদিনই পরিবারের জন্য কিছু না কিছু প্রয়োজন হয়। প্রতিদিনের রোজগার দিয়ে আমরা প্রতিদিনের বাজার সদাই করে সংসার চালাই । গত ১সপ্তাহ ধরে প্রশাসনের নির্দেশে চা দোকানসহ প্রায় সকল প্রকার দোকান বন্ধ, যাত্রী নাই, কোন মাল আনানেওয়া হচ্ছে না। তাই কোন আয় নাই। পরিবারের সকলকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটছে।এখন শুধু ধার দেনা করে সংসার চলছে। এভাবে আর কতদিন ধার করে সংসার চালানো যায় বলুন। আর কিছু দিন এই রকম থাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। করোনার ভয়ে ঘরের বাহির হতে মন চায় না, আবার অভাবের কারণে বেরনা হলেউ চলেনা।

এদিকে বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের তান্ডবে লন্ডভন্ড শুধু শিক্ষা ও জনজীবনই নয়। প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতেও। আজকের এই সুন্দর সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে সবচেয়ে বেশি অবদান শ্রমজীবী মানুষের। করোনা ভাইরাস আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে এই শ্রমজীবি মানুষের জীবনে। তাই আগের মতো ফিরে আসুক দিনগুলো আগের মতো যেনো কামাই রোজগার করে খেতে পারি।