খালেদার নির্দেশেই অলির উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : মধ্যরাতে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কর্নেল অলির বৈঠকের খবর পাওয়া গেছে। এই বৈঠকে কর্নেল অলির যে নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ, তার সঙ্গে বিএনপির এই বিক্ষুব্ধ নেতাদের কেউ যুক্ত হতে পারেন সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

যদিও বিএনপির অধিকাংশ নেতাই এই বৈঠকের কথা অস্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, কর্নেল অলির এই মঞ্চের সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে বিএনপির অন্তত এক ডজন শীর্ষস্থানীয় নেতা কর্নেল অলির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং তাদের মধ্য থেকে অন্তত ছয়জন উপস্থিত ছিলেন। কর্নেল অলি বিএনপির এই নেতাদের তথ্য প্রমাণ দিয়ে দাবি করেছেন যে, বেগম খালেদার জিয়ার নির্দেশেই কর্নেল অলি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। বেগম জিয়া জেল থেকে কর্নেল অলিকে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বলেও তিনি বিএনপি নেতাদের কাছে দাবি করেছেন। এর সাপক্ষে বেগম জিয়ার লেখা এক চিরকুটও তিনি বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দেখিয়েছেন বলেসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। তবে কর্নেল অলি এ সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, কর্নেল অলি যে ৩টি দাবিতে নতুন মঞ্চ করেছে। সে তিনটি দাবির মধ্যে অন্যতম হলো বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, বিএনপিতে তারেকেরে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কোন তৎপরতা নেই বলেই বেগম খালেদা জিয়া মনে করছেন। বিএনপির সংসদে যাওয়া , উপনির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং সংরক্ষিত নারী কোটায় মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি বেগম খালেদা জিয়া ভালোভাবে নেননি। এব্যাপারে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি মনে করছেন যে, তারেক এবং ফখরুলের নেতৃত্বে যে বিএনপি সেই বিএনপি তাঁর মুক্তির জন্য কিছু করার সক্ষমতা হারিয়েছে। খালেদাপন্থি বিএনপিরা বিএনপিতে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। এই বাস্তবতায় কর্নেল অলির নেতৃত্বে তিনি বৃহত্তর একটি মঞ্চ করতে চাইছেন।

অন্য একটি সূত্র বলছে যে, বিএনপি এবং জামাতের সম্পর্ক নিয়ে অনেক রাজনৈতিক দলই জোট বাধতে অস্বস্তি প্রকাশ করছে বিশেষ করে বামফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জামাতের ব্যাপারে সুস্পষ্ট আপত্তি জানিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতার কারণে এবং রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে জামাতকে বাদ দিতে পারছে না বিএনপি। যেকারণে কর্নেল অলির নেতৃত্বে একটি আলাদা মঞ্চ করা হয়েছে যেখানে জামাত থাকবে না এবং এই মঞ্চটিকে ঘিরে খালেদার মুক্তির একটি জাতীয় প্লাটফরম তৈরি করা হচ্ছে বলে সূত্রগুলো বলছে। তবে কর্নেল অলির উদ্যোগকে বিএনপির একটি অংশ সরকারের এজেন্ডা এবং বিএনপি ভাঙার চক্রান্ত বলে মনে করছে। গতকালকের বৈঠকের পর এধরণের গুঞ্জন বিএনপিতে আরো বেড়ে গেছে। কর্নেল অলি জিয়াউর রহমানের অত্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন এবং খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসার পর যারা খালেদা জিয়াকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে তাঁদের মধ্যে কর্নেল অলি ছিলেন অন্যতম। খালেদা জিয়ার কিচেন ক্যাবিনেটে তিনি ছিলেন অন্যতম। যেকারণে বিএনপি থেকে চলে গেলেও খালেদা জিয়ার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা রয়েছে বলেও কর্নেল অলির ঘনিষ্ঠরা বলেছেন। কর্নেল অলির ঘনিষ্ঠ একজন নেতা বলেছেন, কর্নেল অলির সমস্যা হলো তারেক জিয়ার সাথে, খালেদা জিয়ার সাথে নয়। তারেকের কারণে তিনি বিএনপি ছেড়েছেন, তবে জিয়ার আদর্শ তিনি ত্যাগ করেননি। কর্নেল অলি আহমেদের ঘনিষ্ঠরা আরো বলছেন যে, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য একটি জাতীয় জাগরণ তৈরী করতে হবে। সেটা বিএনপির দ্বারা সম্ভব নয়। এই বাস্তবতায় বিএনপির একাধিক সদস্য যারা খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া বিএনপি অস্তীত্বহীন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন, তারাও কর্নেল অলির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। এরফলে বিএনপি ভাঙ্গবে কিনা সেটা স্পষ্ট না হলেও একটা বিষয় স্পষ্ট যে, বিএনপিতে একটা নতুন মেরুকরণ তৈরী হবে এবং সেই মেরুকরণের ফলে বিএনপির যে শক্তি বা সামর্থ্য যা প্রায় নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে, সেটা আরো নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি।