করোনা কমলে পর্যায়ক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তা

গত বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরুর দিকে মানুষের ব্যাপক চাপ ছিল, কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত বন্ধ করা হচ্ছে না। আর এখন বন্ধের ১৭ মাস পর দাবি উঠছে, কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খোলা হচ্ছে না। এমন অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে নানা আলোচনা হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের পরিকল্পনা হলো করোনার সংক্রমণ কমলে পর্যায়ক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। কিন্তু সেটি কবে কমবে, তা কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে না পারায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সময়ও সুনির্দিষ্ট করা যাচ্ছে না।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত টিকা দিতে পারলে প্রথম পর্যায়ে আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার একটি আলোচনা চলছে। সেটিও নির্ভর করছে এ মাসে কী পরিমাণ শিক্ষার্থীকে করোনার টিকা দেওয়া যাবে তার ওপর। ফলে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সময়টি এখনো অনির্দিষ্টই থাকছে।

ইউনিসেফ ও ইউনেসকো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়ে আসছে। এ বছরের জানুয়ারিতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানসহ একাধিক শিক্ষা গবেষক ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। কারণ, সরকারের সিদ্ধান্ত হলো তারা শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না। একাধিক নীতিনির্ধারকের মতো হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শিশুরা আক্রান্ত হলে তখন দায় সরকারের ঘাড়ে পড়বে। এ জন্য তারা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে।

সাধারণত, বেশ কিছুদিন করোনার সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে সেটিকে নিয়ন্ত্রণ বলা হয়।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গতকাল বুধবার বলেছেন, সংক্রমণ কমলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারবেন। কিন্তু কবে নাগাদ সংক্রমণের হার সে পর্যায়ে নামবে, তা তো তাঁরা জানেন না।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী এ ছুটি আছে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। দীর্ঘ ১৭ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে দেশের প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীর পড়াশোনা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। পরীক্ষাগুলো বাতিল বা পিছিয়ে যাচ্ছে। করোনার এমন বাস্তবতায় বিকল্প উপায়ে টিভি, অনলাইন, অ্যাসাইনমেন্টসহ বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো শ্রেণিকক্ষে যেভাবে পড়াশোনা হতো, তা এসবের মাধ্যমে হচ্ছে না। আবার সবাই এসবের সুবিধাও পাচ্ছে না। বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এমন অবস্থায় বিধিনিষেধ শেষে এখন প্রায় সবকিছু খুলে দেওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে জোরেশোরে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে সরকারের ভেতরও নানা রকম আলোচনা চলছে। এসএসসি, এইচএসসিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা নিয়েও নানা ধরনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত হলো আবাসিক শিক্ষার্থীদের (প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার) করোনার টিকা দিয়ে খুলে দেওয়া। ইতিমধ্যে এ পর্যায়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে।

খোলার বিষয়ে গত শনিবার শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছিলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোন স্তরে কতটুকু পরিমাণ খুলবে, অর্থাৎ খোলার পরিধি কতটুকু হবে, সেটা নির্ভর করছে এ মাসে কী পরিমাণ টিকা দেওয়া যাবে এবং সংক্রমণের হার কত থাকবে, তার ওপর। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাপঞ্জির সঙ্গে সমন্বয় করে খোলার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

সরকারের ভেতরে একটি আলোচনা আছে—পর্যাপ্ত টিকা দিতে পারলে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে পরিস্থিতি দেখা। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। তখনো একসঙ্গে সব শ্রেণির ক্লাস শুরু না করে বিভিন্ন শ্রেণির ক্লাস দিয়ে এটি শুরু করা। পরে পর্যায়ক্রমে সব শ্রেণির ক্লাস শুরু করা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা হলো ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকবে। এর মানে, সরকারের চিন্তা হলো সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা। কিন্তু এমনভাবে তো এর আগেও অনেকবার চিন্তা করা হয়েছিল; বাস্তবে খোলা যায়নি। আসলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ওপরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি নির্ভর করছে।