একটি ব্যর্থ আর অকম্মা প্রকল্প

হাসানুর রহমান এজাজী : গন্তব্য ছিল চন্ডিপুর বাজার। বহুদিন শহর ছেড়ে বের হতে পারি না। অনেকটা রিলাক্সড মুডে ছিলাম। পথ ভুলে ঢুকে পড়ি মহারাজপুর ইউনিয়নের গাছা কুতুবপুর গ্রামে। পার হবো সিরিষকাঠ খাল। খালটি দুইটি ইউনিয়নকে বিভক্ত করেছে। ওপারে কুমড়াবাড়িয়া আর এপারে মহারাজপুর ইউনিয়ন। কুতুবপুর থেকে ওপারে যেতে সিরিষকাঠ খালের উপর সুন্দর একটি ব্রীজ। ওপারে গিয়ে কোন পথ পেলাম না। তার মানে পথহীন খালের উপর ৩০ লাখ ৯০ হাজার টাকার একটি ব্রীজ করা হয়েছে, যেটি ইউনিয়ন বাসি তো দুরের কথা নুন্যতম কোন মানুষের কাজে আসছে না। ব্রীজের পশ্চিমে গভীর একটি পরিত্যক্ত পুকুর। পুকুরের পাড়ে সারি সারি গাছ। আছে গোরস্থান। ব্রীজটি পার হয়েই এতোগুলো বাধা। আছে মাত্র একজন মানুষ চলার গেঁয়ো পথ। সেই পথ দিয়ে কেবল পাড়া প্রতিবেশিরা চলাচল করেন। দুর্য়োগ ব্যাবস্থাপনা অধিদপ্তরের করা এই ব্রীজটি নির্মানের নুন্যতম কোন যুক্তি বা প্রয়োজনীয়তা মনে করেন না দুই গ্রামের মানুষ। তারপরও ব্রীজটি নির্মান করে সরকারের প্রায় ৩১ লাখ টাকা পানিতে ফেলা হয়েছে। আর যদি সেখানে সংযোগ সড়ক করতেই হয় তবে ডেফলবাড়ি গ্রামের হতদরিদ্র ছানারুদ্দীনের ঘরবাড়ি ভাঙ্গতে হবে। তোতালেব হোসেনের পুকুর ভরাট করতে হবে। কিন্তু তারা রাস্তা করতে জমি দিবেন না। তাহলে কেন এই সরকারী টাকার অপচয় ? ঝিনােইদহ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস কি কারণে ব্রীজটি করেছে সেই যুক্তিও তাদের কাছে নেই। তাদের বক্তব্য স্থানীয় মহারাজপুর ইউনিয়নের একজন সাবেক চেয়ারম্যান নিজের ক্ষমতা জাহির করতে গিয়ে সরকারের এতাগুলো টাকা পানিতে ফেলেছেন। আর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস হালুয়া রুটির ভাগ পেতে একবার প্রকল্প বাতিল করেও পরে তা পাশ করিয়ে আনে। সেলকুাস ! একেই বলে সরকারী মাল দরিয়ামে ঢাল। আমরা শাস্তি চাই এই প্রকল্পের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের, যারা শ্রমিক, কৃষক আর দিনমজুরের রক্ত পানি করা টাকায় এমন একটি ব্যর্থ আর অকম্মা প্রকল্প সফল বলে চালিয়ে দিয়েছেন। এখানে বলে রাখা ভাল এর আগেও সদর উপজেলার সাধুহাটী ইউনিয়নের মাগুরাপাড়া পোতাহাটী গ্রামের ৩ ফুট খালে ৫০ ফুট ব্রীজ নির্মান করেছিল দুর্য়োগ ব্যাবস্থাপনা অধিদপ্তর। সেখানে উপকার ভোগী মাত্র একজন।