উপজেলা নির্বাচনে এমপিরা কোন প্রার্থীকে সমর্থন দিতে পারবেন না

নিজস্ব প্রতিবেদক

উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ নির্দলীয়ভাবে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে যে উপজেলা নির্বাচনে নৌকা বা দলীয় প্রতীক তারা ব্যবহার করবে না। এরপর গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন যে, উপজেলা নির্বাচনে কোন প্রার্থীকেই আওয়ামী লীগ দলগত ভাবে সমর্থন দেবে না। তারপরও আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন এর ফলে উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে সারাদেশে আওয়ামী লীগের কোন্দল আরও ব্যাপক বিস্তার লাভ করতে পারে। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে দলীয় শৃঙ্খলা এবং নীতিমালার ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা তৈরি করতে চাচ্ছে। এই নির্দেশনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল যে উপজেলা নির্বাচনে যারা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হবেন তাদের কাউকেই আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সমর্থন দিতে পারবেন না। তারা প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে কোনো উপজেলা প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা বা তার নিজস্ব প্রার্থী এ রকম বক্তব্য রাখতে পারবেন না। যদি তারা রাখে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

একইভাবে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জেলা নেতৃবৃন্দ বা গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কোনো প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে কোন প্রচারে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। আওয়ামী লীগের কোন পর্যায়ের নেতারাই কোন দলীয় পদ পদবি ব্যবহার করে কোনো প্রার্থীর জন্য প্রকাশ্যে ভোট চাইতে পারবেন না বা কোনরকম নির্বাচনী প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ড করতে পারবেন না।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এই নীতিমালাগুলো চূড়ান্ত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে চূড়ান্ত করে এই নির্দেশনা সারাদেশে উপজেলা পর্যায়ে দেওয়া হবে। কেউ যদি এটা লঙ্ঘন করে তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে থেকে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ উন্মুক্ত করে দেয়। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারার অঘোষিত ভাবে স্থগিত করে যারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করার নীতি গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে আওয়ামী লীগ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যার ফলে অনেকে দলীয় পদ ব্যবহার করে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেছে।

নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। এখন নির্বাচনের পর এই কোন্দল সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফলে নানা রকম সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ঠেকাতে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এই উপজেলা নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে করার সিদ্ধান্তের পর কোন্দল আরও বেড়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মহল থেকে।

তারা বলছেন, এর ফলে এমপিরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থন দেবেন, অন্যদিকে এমপি বিরোধীরা আরেকজন প্রার্থী দেবে। প্রতিটি উপজেলায় চার থেকে পাঁচ জন আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়ে যেতে পারেন এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় এমপিরা স্বপ্রণোদিত হয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। আবার এমপি বিরোধীরাও তাদের পছন্দের প্রার্থীকে জনসংযোগের জন্য মাঠে নামিয়েছেন। পরিস্থিতি ক্রমশ বিস্ফোরন্মুখ হয়ে যাচ্ছে। এ রকম বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনে দলকে দূর রাখার জন্য কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলেই একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, আমরা মনে করি উপজেলা নির্বাচনে যিনি প্রার্থী হবেন তিনি তার নিজস্ব শক্তিতে এবং জনপ্রিয়তা দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করবেন। তিনি দলীয় পরিচয় ব্যবহার করতে পারবেন এবং কোন এমপি বা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বা স্থানীয় পর্যায়ের নেতা দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে তার পক্ষে প্রচারণা করতে পারবেন না। আওয়ামী লীগ পুরোপুরি ভাবে উপজেলা নির্বাচনকে র্নিলীয় রূপ দিচ্ছে। যদি এমপিরা সরাসরি কোন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা না করে বা স্থানীয় নেতারা যদি কোন প্রার্থীর পক্ষে দলীয় পরিচয় ব্যবহার না করেন সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কোন্দল অনেকটাই প্রশমিত হবে বলে অনেকে মনে করছেন।