ইতিহাস গড়লেন নাদাল

স্পোর্টস ডেস্ক

রোমাঞ্চকর, শ্বাসরুদ্ধকর ও অবিশ্বাস্য এক লড়াইয়ের সাক্ষী হলো টেনিস বিশ্ব। দানিল মেদভেদেভের প্রবল চাপ সামলে আগ্রাসী হয়ে উঠলেন রাফায়েল নাদাল। প্রথম দুই সেটে হারের পর মেলে ধরলেন অভিজ্ঞতার সব রসদ। পাঁচ সেটের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই পরতে পরতে ছড়াল উত্তেজনা। শেষ পর্যন্ত রুশ তারকার ‘প্রথমের’ স্বপ্ন গুঁড়িয়ে নতুন ইতিহাস লিখলেন নাদাল।

চোটের থাবায় মাস তিনেক আগেও ক্যারিয়ার শেষের শঙ্কা জেগেছিল নাদালের মনে। সেই তিনিই মেলবোর্নের রড লেভার অ্যারেনায় নিজেকে মেলে ধরলেন আপন মহিমায়। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হয়ে উঠলেন আরও বিধ্বংসী। শারীরিক-মানসিক সব বাধা পেরিয়ে ফেটে পড়লেন উল্লাসে, আবারও মাথায় তুললেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মুকুট।

পাঁচ ঘণ্টা ২৪ মিনিটের মহাকাব্যিক লড়াই ২-৬, ৬-৭(৫-৭), ৬-৪, ৬-৪, ৭-৫ গেমে জিতে ২১তম মেজরের ট্রফি উঁচিয়ে ধরলেন ৩৫ বছর বয়সী নাদাল। রজার ফেদেরার ও নোভাক জোকোভিচকে ছাড়িয়ে সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের রেকর্ড নিজের করে নিলেন স্প্যানিশ তারকা।

গ্র্যান্ড স্ল্যামের ইতিহাসে নাদালের হলো ২১টি শিরোপা। ফেদেরার ও জোকোভিচের সঙ্গে এতদিন সমান ২০টি করে জয়ের রেকর্ড ছিল তার।

নাদাল-মেদভেদেভের লড়াইটা সত্যিকার অর্থে কতটা রোমাঞ্চকর ও নাটকীয়তায় ভরপুর ছিল, ম্যাচের স্থায়ীত্ব ও পাঁচ সেটের ফলে সেটা বোঝানো কঠিন।
প্রথম সেটের তৃতীয় গেমে নাদালের সার্ভে ২৬ শটের এক র‌্যালি জিতে পয়েন্ট ৩০-০ করেন মেদভেদেভ। আগ্রাসী টেনিসে দারুণ দুটি পয়েন্ট নিয়ে ৩০-৩০ করেন নাদাল। বারবার মোড় বদলের ১০ মিনিট স্থায়ী গেমটি শেষ পর্যন্ত জিতে নেন স্প্যানিশ গ্রেট।

সেটের বাকি সময়ে নাদালকে দাঁড়াতেই দেননি মেদভেদেভ। প্রতিপক্ষের সার্ভিসে দুটিসহ টানা চার গেম জিতে নেন সেট।

দ্বিতীয় সেটের চতুর্থ গেমে মেদভেদেভের সার্ভিস ব্রেক করে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা জাগান নাদাল। ৪-১ গেমে এগিয়েও যান তিনি। দুই গেম পরই পাল্টা সার্ভিস ব্রেক করেন মেদভেদেভ। ক্লে কোর্টের রাজা হঠাৎই যেন জেগে ওঠেন। পরের দুই সেটেও পরস্পরের সার্ভিস ব্রেক করেন তারা। অবশেষে টাইব্রেকারে গড়ানো সেটটি জিতে ট্রফির সুবাস পেতে শুরু করেন মেদভেদেভ।

তবে নাদাল তো হাল ছাড়ার পাত্র নন! তৃতীয় সেটের নবম গেমে সার্ভিস ব্রেক করলেন তিনি। জিতে নিলেন সেটও।
২০০৭ উইম্বলডনের চতুর্থ রাউন্ডে মিখাইল ইয়োজনির বিপক্ষে প্রথম দুই সেটে হারের পরও ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জিতেছিলেন নাদাল। এরপর আর ওভাবে পাঁচ সেটের লড়াই জয়ের গল্প লিখতে পারেননি তিনি।

ইতিহাসের হাতছানির দিনে পুরনো সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনলেন নাদাল। চতুর্থ সেটের তৃতীয় গেমে সার্ভিস ব্রেক করলেন তিনি। আবারও পাল্টা জবাব মেদভেদেভের। পরপর তিন গেমে চলল একে অপরের সার্ভিস ব্রেক। স্নায়ুচাপ সামলে সেটটি জিতে নিলেন এবার দিয়ে এখানে পঞ্চমবার ফাইনালে ওঠা তারকা।

চতুর্থ সেটে মেদভেদেভকে হুট করেই একটু নড়বড়ে দেখা যায়। শুরুর সেই খুনে মানসিকতা যেন হারিয়ে যায়। বেশ কয়েকটি গুরুতর ভুলও করেন তিনি।

তবে এ দিন তিনিও হাল ছাড়েননি সহজে। শিরোপা নির্ধারণী সেট শুরু হতেই নতুন শুরুর আভাস মেলে তার খেলায়। এর মধ্যেই একবার সার্ভিস ব্রেক করে এগিয়ে যান নাদাল। ৫-৪ পিছিয়ে থেকে দশম গেমে আবারও সার্ভিস ব্রেক করে ৫-৫ করেন মেদভেদেভ। কিন্তু পরের দুই সেটে আর পারেননি তিনি।
শিরোপা নিশ্চিত হতেই হাত থেকে র‌্যাকেট ফেলে দিয়ে দু’হাতে মুখ ঢেকে ফেলেন নাদাল। এরপর তার মুখে চওড়া হাসি, বিশ্ব জয়ের আনন্দ। তারপরই নাদালসুলভ হুঙ্কার।

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে নাদালের এটি দ্বিতীয় শিরোপা। প্রথমটি জিতেছিলেন ২০০৯ আসরে। সেবারও পাঁচ সেটের লড়াইয়ে, প্রতিপক্ষ ছিলেন রজার ফেদেরার।

নাদাল তার বাকি ১৯ মেজরের ১৩টিই জিতেছেন ফরাসি ওপেনে। আর উইম্বলডনে দুটি এবং ইউএস ওপেনে ৪টি।

শেষ পর্যন্ত শিরোপা জিততে না পারলেও দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে নিজের সামর্থ্যের উজ্জ্বল বার্তা টেনিস বিশ্বে ঠিকই দিয়েছেন মেদভেদেভ। সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ছন্দে থাকা ২৫ বছর বয়সী এই তারকা মেলবোর্নের গত আসরে প্রথম ফাইনালে উঠেছিলেন। কিন্তু জোকোভিচের বিপক্ষে হেরে ভেঙে যায় তার প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের স্বপ্ন।
পরে গত সেপ্টেম্বরে ইউএস ওপেনে সার্বিয়ানকেই সরাসরি সেটে হারিয়ে ওই প্রথমের স্বাদ পান মেদভেদেভ। এবার নেমেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে প্রথম শিরোপার স্বপ্নে। ২০১৯ ইউএস ওপেন ফাইনালে নাদালের কাছেই পাঁচ সেটের লড়াইয়ে হারের কষ্টে প্রলেপ দেওয়ার চ্যালেঞ্জও ছিল। কিন্তু জোর আশা জাগিয়েও পারলেন না একটুর জন্য। বলা ভালো, তাকে পারতে দিলেন না নাদাল।