ইট ভাটা সরাতে ডিসিকে চিঠি লেখা সেই শিশুর সঙ্গে কথা বললেন প্রতিমন্ত্রী

সংবাদদাতা : স্কুলের পাশের ইট ভাটা সরাতে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের উদ্দেশে চিঠি লিখে ফেসবুকে পোস্ট করা ২য় শ্রেণির ছাত্রী মায়িশা মনাওয়রা মিশুর সঙ্গে কথা বলেছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রতিমন্ত্রী ফোন দিয়ে মিশুর সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন তার বাবা মমিনুল হক।

মমিনুল হক বলেন, দিনাজপুরের ডিসিকে উদ্দেশ্য করে চিঠিটি লিখেছে মিশু। পরে সন্ধ্যায় নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ফোন দিয়ে মিশুর সঙ্গে কথা বলেছেন। মন্ত্রী বলেছেন, আমি এক্ষুনি ডিসি সাহেবকে বলে দিচ্ছি, এই ইট ভাটা বন্ধ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমি নিজেও একটি সরকারি স্কুলের শিক্ষক। স্কুলের পাশে এমন একটি ইটভাটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রতিমন্ত্রী ও ইউএন মহোদয়সহ সবাই ইট ভাটা বন্ধে এগিয়ে এসেছেন, এতেই আমি খুশি।

এর আগে মিশুর লেখা একটি চিঠি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। শিশুটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তার রোল নং ২।

চিঠিতে সে লিখেছে, ‘মাননীয় ডিসি স্যার দিনাজপুর, ছালম নিবেন। আমরা দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার হয়বতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ি। আমাদের স্কুলের পাশে বিপ্লব নামের একজন লোক ইট ভাঁটা দিয়েছে। ভাটার কালো ধোঁয়ায় আমাদের শ্বাস কষ্ট হয়। পরিবেশের ক্ষতি হয়। চোখ জ্বালা করে। এখন আবার স্কুলের পাশে মুক্তা নামের এক লোক আরেকটি ইট ভাটা দিতেছে। তাহলে আমাদের আরো ক্ষতি হবে। আমরা কি ভাবে বাঁচবো? আপনি আমাদের বাঁচান।’

চিঠিটি দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলমেরও চোখে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহানুল হককে ভাটাটি বন্ধ করার নির্দেশ দেন।

পরে বুধবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহানুল হক পুলিশ নিয়ে ওই ভাটায় অভিযানে যান। কিন্তু ভাটা চালানোর পক্ষে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকায় ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন তিনি। তারপর তিনি ওই শিশুর বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

সরেজমিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পার্বতীপুর-দিনাজপুর সড়কের পাশেই গড়ে উঠেছে যমুনা ব্রিক্স নামের ইট ভাটাটি। ভাটার চিমনি থেকে কয়েক গজ দূরেই ভূট্টা ক্ষেত। কয়েকশ’ গজ দূরে রয়েছে এমবি ব্রিক্স নামের আরো একটি ইট ভাটা। দুই ভাটার দেড় থেকে ২শ’ গজ দূরে হয়বৎপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

মিশুর লেখা সেই চিঠি -ফেসবুক থেকে নেওয়া

শিশু মিশু বলে, তার মতো বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি শিশুর চোখ দিয়ে পানি পড়ে। চোখ জ্বালা করে। ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারে না।

সে বলে, চাচু ভাটাটি বন্ধ করে দেনতো। আমরা যেন ভালভাবে শ্বাস নিতে পারি।

পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহানুল হক জানান, ফেসবুকে শিশুটির চিঠি দেখে ভাটার কার্যক্রম বন্ধ করতে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম তাকে নির্দেশ দেন। তিনি ভাটা পরিদর্শন করতে গেলে মালিক হাসান শাহরিয়ার হাইকোর্টের রিট প্রদর্শন করেন। ফলে ভাটা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি তার। তবে পরবর্তীতে ভাটাটির বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।