ইউক্রেনে একসঙ্গে ১২০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে রাশিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বৃহস্পতিবার সকালে ইউক্রেনজুড়ে ১২০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এর ফলে কেঁপে উঠেছে গোটা ইউক্রেন। সমুদ্রে যুদ্ধজাহাজ থেকে ও যুদ্ধবিমান দিয়ে এই হামলা চালানো হয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক এ খবর দিয়েছেন। বিবিসি।

পোডোলিয়াক বলেন, সাধারণ নাগরিক ও বেসামরিক অবকাঠামোতে ১২০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।

কিয়েভ, জিতোমির, ওডেসা, লিভিভ এবং ঝিটোমির শহরে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে নিপ্রো ও ওদেসা অঞ্চল।

ইউক্রেনের বিমান বাহিনী বলেছে, রাশিয়া ‘বিভিন্ন দিক থেকে আকাশ ও সমুদ্র ভিত্তিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে’ হামলা চালাচ্ছে। হামলায় ইরানের দেওয়া বেশ কয়েকটি কামিকাজে ড্রোনও ব্যবহার করেছে রাশিয়া।

বৃহস্পতিবার সকালে দেশের সব অঞ্চলে বিমান হামলার সতর্কতা জারি করা হয়। প্রেসিডেন্টের আরেক উপদেষ্টা ওলেক্সি আরেস্টোভিচ বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে দেশটির বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হামলা ঠেকাতে কাজ করছে।

কিয়েভ শহরের সামরিক প্রশাসন জানিয়েছে, আকাশে ধ্বংস করা একটি ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ দুটি বাড়িকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কিয়েভে ‘বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের’ খবর পাওয়া গেছে।

মাইকোলাইভের গভর্নর ভিটালি কিম লিখেছেন, শহরটির দক্ষিণাঞ্চলে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মার্চেনকো বলেন, ওডেসা অঞ্চলে ২১টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ক্ষেপণাস্ত্রের টুকরো একটি আবাসিক ভবনে আঘাত হানে তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

পশ্চিমের শহর লিভিভের মেয়র আন্দ্রি সাডোভি বলেছেন, বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।

পোডোলিয়াক রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস এবং বেসামরিক মানুষকে ব্যাপকভাবে হত্যা করার’ জন্য হামলার অভিযোগ করেছেন।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়া ইউক্রেনে কয়েক ডজন হামলা চালায়। যার ফলে সারা দেশে বারবার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। লিভিভের মেয়র বৃহস্পতিবার বলেছিলেন যে তার শহরের ৯০% বিদ্যুতহীন ছিল, অন্যদিকে ক্লিটসকো সতর্ক করেছিলেন যে, রাজধানীতে নতুন করে বিদ্যুৎ এবং পানি সংকট দেখা দিতে পারে।

ইতিমধ্যে ওডেসা এবং নিপ্রোপেট্রোভস্কে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

মধ্যঞ্চলীয় শহর ক্রিভি রিহ-এর সামরিক প্রশাসনের প্রধান ওলেক্সান্ডার ভিলকুল বলেছেন, তার শহরে ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো রাশিয়ার ‘কৃষ্ণ সাগরের জাহাজ এবং বিমান’ থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। ‘সাবধানতা’ হিসেবে শহরের বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ইউক্রেনের দক্ষিণ কমান্ড ইতিমধ্যে একটি সতর্কতা জারি করেছে যে, রাশিয়ান বাহিনী কৃষ্ণ সাগরের অবস্থান থেকে আরও ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে একটি ব্যারেজে, রাশিয়ার নিক্ষেপ করা ৭০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ৬০টি গুলি করে ভুপাতিত করেছিল ইউক্রেন।

মস্কো বারবার তার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করার কথা অস্বীকার করেছে। তবে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি স্বীকার করেছেন যে, রাশিয়ান সৈন্যরা ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি স্থাপনায় আঘাত করছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ সহ কিছু আন্তর্জাতিক নেতার অভিযোগের পর এই স্বীকারোক্তি দেওয়া হয়েছে। তারা বলেছিলেন যে, জ্বালানি কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালালে তা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

ইউক্রেন সরকার পশ্চিমা নেতাদের কাছে অতিরিক্ত বিমান প্রতিরক্ষা সরবরাহ করার জন্য অনুরোধ করেছে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি এর প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করতে সম্মত হয়েছেন।

গতকাল ইউক্রেনের শান্তি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পরপরই আজ দেশটিতে এই হামলা চালালো রাশিয়া। মস্কোর দাবি, ইউক্রেন থেকে দখল করা চার অঞ্চল রাশিয়াকে ছেড়ে দিতে হবে। তবেই কেবল শান্তি আলোচনা সম্ভব। তবে এ দাবি মেনে নিতে চাইছে না কিয়েভ।

বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে ওই শান্তি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষত চারটি অঞ্চল রাশিয়ার অধিভুক্ত হওয়ার পর। বাস্তবতাবিবর্জিত এ প্রস্তাবে শান্তিপূর্ণ সমাধান আসবে না।’