আনোয়ারায় বাড়তি বাস ভাড়া আদায়ের অভিযোগ।

মোঃ জাবেদুল ইসলাম,আনোয়ারাঃ
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পরে চট্টগ্রামে আনোয়ারা উপজেলা লোকাল বাসে ভাড়া নেয়া হচ্ছে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ। বাড়তি ভাড়া আদায়ে প্রতিদিন বাস পরিবহনকর্মী ও যাত্রীদের মধ্যে ঝগড়া লেগেই আছে। যাত্রীদের কাছে বাড়তি ভাড়া আদায়ে খারাপ আচারের করার অভিযোগ বাস চালক এবং বাসের সহকারীদের বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, চাতরী চৌমুহনী থেকে শাহ আমানত সেতু (নতুন ব্রীজ) এলাকার লোকাল বাস গুলো সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান যাত্রীরা। প্রত্যেকটি বাসে নেই বাড়তি ভাড়ার তালিকা। যাত্রীদের জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া কেনো নেওয়া হচ্ছে আর ভাড়ায় তালিকা দেখাতে বললে বাসের সহকারী – চালক বলেন আপনাকে বলবো কেনো। আমরা সবাইকে মেনেস করে বাড়াতি ভাড়া নিচ্ছে এতে আপনার সমস্যা কি বলে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চলে যায়।
জানা যায়, কিছু বাস চালক কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই। সে শিক্ষানবিশ লাইসেন্স নিয়ে চালাচ্ছে বাস। সড়কে চলার জন্য অনুমতি (রুট পারমিট) নেই। শুধুমাত্র প্রশাসনের বৃদ্ধা আঙ্গুলির দেখিয়ে দাপিয়ে বেড়াতে বাস চালকরা। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক বাস চালক জানান, আমাদের গাড়ি চালাতে কিছু লাগবে না। আমরা টাকা দিয়ে সব কিছু মেনেস করে বাস চালাচ্ছি এতো আপনাদের এতো মাথা ব্যাথা কেনো?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাস ভাড়া বাড়ানোর প্রায় দুই সপ্তাহ পরও সড়কে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য থামছে না। করোনাকালীন সময়ে চাতরী চৌমুহনী বাজার থেকে সিট অনুযায়ী যাত্রী নেওয়াতে ১৫ টাকার ভাড়া ২০ টাকা করে নেওয়া হতো। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর গাদাগাদি করে যাত্রী নেওয়ার পরও ২০ টাকা থেকে ভাড়া কমানো হয়নি। আবার এখন সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ৪ টাকা বাড়ার কথা থাকলেও তারা ডাবল ভাড়া আদায় করছে। চাতরী চৌমুহনী বাজার থেকে শাহ আমানত সেতু (নতুন ব্রীজ) ভাড়া নিচ্ছে ৩০/৩৫/৪০ টাকা পর্যন্ত।
সরকারি সিটি কলেজের ছাত্র মোঃ এহাসান জানান, আজকে কলেজের পরীক্ষা দেওয়া জন্য চাতরী চৌমুহনী বাজার থেকে শাহ আমানত সেতু (নতুন ব্রীজ) গামি বাসে ওঠেছে জনপ্রতি সিট ভাড়া ৩০ টাকা নিচ্ছে সাথে গাদাগাদি করে পুরো বাস জুড়ে যাত্রী নিয়ে যায়। বাড়তি ভাড়া বিষয়ে বাসে তালিকা দেখাতে চাইলে বাসের সহকারী কোন তালিকা দেখাতে পারিনি। আবার পরীক্ষা শেষ করে আসার সময় সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত শাহ আমানত সেতু (নতুন ব্রীজ) বাস ভাড়া ৩০ টাকা পরিবর্তনের ৪০-৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ । আর এ ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীসহ নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।
কয়েকজন যাত্রী সাথে কথা বলে জানা যায়, বাড়তি ভাড়া ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।বাড়তি ভাড়া আদায়ের অনেকের আর্থিক সামর্থ্যেও পড়েছে টান। ভুক্তভোগীরা বলছেন, জনগণের বিষয়টি দেখা হয়নি। তাদের সুবিধাটাই দেখা হচ্ছে। ব্যয় বাড়ে কিন্তু কর্মস্থলে বেতন বাড়ে না। মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য ভাড়া বাড়াটা খুবই অসুবিধার।
উল্লেখ্য, গত (৫ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ৮০ টাকা থেকে ১১৪ টাকা করা হয়েছে। লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম ৮৬ টাকা থেকে ১৩০ টাকা করা হয়েছে। অকটেনের দাম বেড়েছে ৮৯ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা।
৬ আগস্ট রাতে পরিবহন সংগঠনগুলোর তোপের মুখে সরকার পরিবহনের ভাড়া বাড়ানের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই হিসাবে প্রতি কিলোমিটারে দূর পাল্লায় ৪০ পয়সা এবং নগরে ৩৫ পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়। এই নিয়ে দূর পাল্লায় আগের ভাড়া ১ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে ২ টাকা ২০ পয়সা করা হয়।
আনোয়ারা ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ (টিআই) মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, বাসের বাড়তি ভাড়া  আদায়ের বিষয়ে আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। বাসে বাড়তি ভাড়া বাড়ানো তালিকাটা আমাদের কাছে নেই। বাস মালিক সমিতি সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানাবো।
ভাড়ার তালিকা না টাঙিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মুমিন বলেন, সরকারি নির্দেশনার বাইরে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার সুযোগ নেই। আর সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সকল বাসে তালিকা ঝুলাতে হবে। সম্প্রতি তালিকা না ঝুলিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করায় ৬ বাসকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভাড়া নৈরাজ্য ঠেকাতে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।