আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পাচ্ছেন শামীম ওসমান?

নিজস্ব প্রতিবেদক

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরপরই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পেতে পারেন নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত নেতা নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে শামীম ওসমান এবং সেলিনা হায়াত আইভীর মুখোমুখি বিরোধ গতকাল শেষ হয়েছে। গতকাল শামীম ওসমান আনুষ্ঠানিকভাবে এ সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন যে, তিনি নৌকার পক্ষে রয়েছেন। তার এই বক্তব্যের পর নারায়ণগঞ্জের দীর্ঘদিনের বিরোধের আপাত নিষ্পত্তি হয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা মনে করছেন যে শামীম ওসমান এটি একটি বড় ধরনের সেক্রিফাইস করেছেন।

শামীম ওসমানকে কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগ সভাপতির পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগের অন্তত দুজন নেতা তাকে জানিয়েছিলেন যে, যদি তিনি আইভীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেন তাহলে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে।
অন্যদিকে তিনি যদি এই নির্বাচনে আইভীর বিরুদ্ধাচরণ না করেন এবং তাঁর কর্মীদেরকে যদি আইভীর পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেন তাহলে তিনি বড় পুরস্কার পাবেন। কি সেই পুরস্কার এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা রকম আলাপ-আলোচনা চলছে।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনটি পদ শূনো রয়েছে, এই তিনটি পদের একটি পদে শামীম ওসমানকে আনা হতে পারে।

উল্লেখ্য, যে এর আগেও যখন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তখন মেয়র পদে আজমত উল্লাহকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। কিন্তু জাহাঙ্গীর আলমকে মনোনয়ন দেওয়ার পর আজমত উল্লাহকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। সেই একই ধারায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে যখন সাঈদ খোকনকে মনোনয়ন দেওয়া হয় নাই তখন তার মনোনয়নের বদলে তাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একই ধারায় শামীম ওসমানকে পুরস্কার হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

অবশ্য আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র বলছে এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান আর সেলিনা হায়াত আইভীর বিরোধ চলছে। এই বিরোধ ফলে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ ক্ষতবিক্ষত।

নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের ঘাটি হলেও এই বিরোধের কারণে নানা সময়ে আওয়ামী লীগ নানা রকম সমস্যায় পড়ে। আর এ কারণেই শামীম ওসমানকে যদি কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নিয়ে আসা হয় তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য নারায়ণগঞ্জ নিরাপদ ভূমি হিসেবে বিবেচিত হবে। এরকম একটি চিন্তা আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের মাথার দীর্ঘদিন ছিল।
তাছাড়া ওসমান পরিবার ৭৫ পরবর্তী রাজনীতিতে এমনকি বঙ্গবন্ধুর সময় ও নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের জন্য ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। তাদের ত্যাগ অমূল্য।

কিন্তু এরপরও ওসমান পরিবার আওয়ামী লীগ থেকে তেমন কোনো স্বীকৃতি পায়নি। এ কারণে শামীম ওসমানকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আনার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই ছিল।

কিন্তু আইভীর সঙ্গে তার বিরোধের কারণেই বিভিন্ন সময়ে আলোচিত থাকার পরও তিনি কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারেননি।

আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মনে করেন যে শামীম ওসমান এখন অনেক পরিণত। তার কথাবার্তা এবং রাজনৈতিক আদর্শ অত্যন্ত পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ। এসব কারণেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসার সব যোগ্যতা তাঁর আছে।
এইসব বিবেচনা করেই ১৬ ই জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরেই শামীম ওসমানকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।

শামীম ওসমানকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির ফলে নারায়ণঞ্জে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের বিরোধের যেমন অবসান হবে তেমনি তিনি শান্তও হবেন বলে বিভিন্ন মহল মনে করছেন।

অবশ্য সব কিছু নির্ভর করছে আগামী কয়েকদিন শামীম ওসমান এবং তার পক্ষের লোকজন কি ভূমিকা পালন করেন।
অবশ্য গতকাল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শামীম ওসমান যখন আইভীর পক্ষে সমর্থন ঘোষণা করেছেন তারপর আইভীর যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন সেটিও আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড ভালোভাবে নেয়নি।

তবু তারা নির্বাচনের জন্য সবকিছু সহ্য করছেন। তারা মনে করছেন নির্বাচনের পরেই নারায়ণগঞ্জ এর ব্যাপারে আসল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

তবে এই নির্বাচনে যদি আইভী বিজয়ী হন তাহলে পরে শামীম ওসমান যে পুরষ্কার বঞ্চিত হবেন না এটি মোটামুটি নিশ্চিত।