প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাজনীতিক প্রশাসক নিয়োগের খসড়া তালিকা চূড়ান্ত

আমলাদের হাতে যাচ্ছে না জেলা পরিষদ

জেলা পরিষদের নতুন যে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে তাতে রাজনীতিবিদদেরই প্রাধান্য থাকছে। আমলাদের নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে না জেলা পরিষদ। সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। উল্লেখ্য যে, বিগত জাতীয় সংসদ অধিবেশনে জেলা পরিষদ আইন সংশোধন বিল পাস হয়। এতে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা পরিষদগুলো বাতিল করার বিধান করা হয়েছে এবং নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে। একই সাথে পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। এই আইনটি পাস হওয়ার পর গত ১৭ এপ্রিল এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার ৬১টি জেলা পরিষদ বিলুপ্ত করে এবং একদিনের মধ্যে জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা বা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়। এরপর পরই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানগণ নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে চলে আসেন।
এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানারকম কথাবার্তা হয়। অনেকে মনে করেছিল যে, আমলাদের কর্তৃত্বে নেওয়ার জন্যই হয়তো জেলা পরিষদ বিলুপ্ত করা হলো। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, যেহেতু তাদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, কাজেই তাদের সেখানে থাকার প্রয়োজন নেই। বরং সরকার এই সময়ে জেলা পরিষদে নতুন প্রশাসক নিয়োগ দিতে চায়। সংশোধিত আইনে প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুই ধরনের বিধান রাখা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের যেমন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে, তেমনি বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরকেও সরকার প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া সুযোগ রেখেছে। আর এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে জেলা পরিষদের প্রশাসক নিয়োগের একটি খসড়া তালিকা চূড়ান্ত করেছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, আগামী সপ্তাহেই এই তালিকা অনুযায়ী প্রশাসক নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে।
প্রশাসক হিসেবে যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে তাতে রাজনীতিবিদদের প্রাধান্য রয়েছে, আমলাদের নয়। সরকার আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করছে। নির্বাচনের আগে যারা স্থানীয় পর্যায়ের সম্ভাব্য প্রার্থী কিন্তু মনোনয়ন পাবেন না বা এলাকায় তাদের ভূমিকা আছে এইরকম ব্যক্তিদেরকে জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। তবে সরকারি সূত্রগুলো বলছে যে, জেলা পরিষদের প্রশাসক নিয়োগের মধ্য দিয়ে সরকার জেলা পর্যায়ের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে করতে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রের প্রভাব নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। বিশেষ করে জেলা প্রশাসকরাই এখন এমপিদের চেয়ে ক্ষমতাবান এমন কথা বলা হচ্ছে। আর সেরকম বাস্তবতায় সরকার মনে করছে যে, বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর তারা আরও অপাংক্তেয় হয়ে পড়বেন। প্রশাসনের লোকজন তাদের কথা খুব একটা শুনবে না। এরকম বাস্তবতায় নতুন প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে জেলা পরিষদগুলোকে একটা কর্মচাঞ্চল্যের মধ্যে আনার একটি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই নতুন প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।