১৯৭১-এ বাংলা নববর্ষ কেটেছিল ভয়ে-আতঙ্কে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী চুয়াডাঙ্গায় ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ঝিনাইদহের পতন ঘটে-


১৯৭১ এর ১৫ এপ্রিল ছিল বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছিল ১৩৭৮ বঙ্গাব্দের সূচনা। এদিন দেশের মানুষ বাংলা নববর্ষ উদযাপন করতে পারেনি। নিভৃতেই কেটে যায় বাংলা নববর্ষ।
নববর্ষের কোন আয়োজন ও অনুষ্ঠান না থাকায় স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের সদস্য কবি মুস্তফা আনোয়ার লিখেছিলেন ২১ লাইনের “বৈশাখের রুদ্র জামা” শিরোনামের একটি কবিতা। এই কবিতাটি প্রচার হয়েছিল স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে। কবি মুস্তফা আনোয়ারের ‘বৈশাখের রুদ্র জামা’ কবিতাটির প্রথম কটি লাইন এমন–
“বৈশাখের রুদ্র জামা আমাকে পরিয়ে দে মা
আমি তোর উজাড় ভাঁড়ারে বারুদের গন্ধ বুক ভরে নেব।
এখন তোর ভীষণ রোগ, গায়ে চুলো গন্ গন্ করছে,
আমাকে পুড়িয়ে দিলি মা।”
ছায়ানটের উদ্যোগে ঢাকার রমনা বটমূলে বাংলা নববর্ষ ১৩৭৮ বঙ্গাব্দের বর্ষবরণ হয়নি। তবে ছায়ানটের সভাপতি সন্‌জিদা খাতুন এদিন ঢাকার সাভারের একটি মাটির ঘরে রমনার বটমূল কল্পনা করে নিজের সন্তানদের নিয়ে গান গেয়ে পারিবারিকভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেন। তিনি বলেন, রমনায় পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান এবার হয়নি, তবে পহেলা বৈশাখ পালিত হবে না এটি তিনি নিজ কল্পনাতেও আনতে পারেননি।
১৫ এপ্রিল এক গোপন তারবার্তায় পাকিস্তানি হানাদারদের পূর্ব পাকিস্তানের কমান্ডার ইন চিফ আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী অভিযোগ করেন, “এ অঞ্চলে দায়িত্বভার নেয়ার পরপরই আমি অগণিত অভিযোগ শুনেছি। তন্মধ্যে লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ, নির্বিচারে লোকদেরকে হত্যা, রাষ্ট্রবিরোধী বিষয়ের উপাদান না থাকা স্বত্ত্বেও বিভিন্ন এলাকায় সৈনিকদের অবস্থান অন্যতম। এছাড়াও ধর্ষণের বিষয়েও আমি অবগত হয়েছি। ১২ এপ্রিল দুই পূর্ব পাকিস্তানি মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়েছে ও আরও দুইজনকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়।”
এদিন অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ অস্থায়ী বাংলাদেশ  সরকারের কর্মকাণ্ড পরিচালনার লক্ষ্যে, দক্ষ প্রশাসনিক জনবলের খোঁজে এবং নবগঠিত সরকারের আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন এবং এই সম্পর্কিত কাজে ব্যস্ত দিন অতিবাহিত করেন।
১৫ এপ্রিল দুপুরে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র পরিষদের সভাপতি রশিদুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ছাত্রদের সেনাবাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সমূলে ধ্বংস করার নির্দেশ দেন।
বিদেশি গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ ও রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিবর্গের বিবৃতি
১৫ এপ্রিল নিউজিল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী মার্শাল এক বার্তায় বলেন, ‘আমরা আশা ও প্রত্যাশা করি, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অবিলম্বে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের চলমান গৃহযুদ্ধের অবসান করবেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর ওয়াল্টার মন্ডেল ও সিনেটর কেস যৌথভাবে পাকিস্তানে অর্থ সাহায্য বন্ধের জন্য মার্কিন সিনেটে ২১ নম্বর প্রস্তাব পেশ করেন।
এদিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র অস্ত্র সাহায্য সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “গত অক্টোবরের ব্যতিক্রম ছাড়া পাকিস্তানে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে।”
নিউইয়র্ক টাইমস-এ ১৫ এপ্রিল প্রকাশিত তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধারা আবার সংগঠিত হতে চেষ্টা করছেন।
এদিকে ভারত-পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পাকিস্তানি সেনা জমায়েত এবং উপর্যুপরি হামলায় পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে দিল্লির পাকিস্তান হাইকমিশনের কাছে ১৫ এপ্রিল ভারত কড়া প্রতিবাদ জানায়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ত্রিপুরা সীমান্তের কাছে সেনা সমাবেশ ঘটিয়ে পাকিস্তান ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের আক্রমণাত্মক কাজ অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে যথোপযুক্ত নির্দেশ দেওয়ার জন্য ভারত আহ্বান জানিয়েছে।