বিএনপি’র মধ্যে বহিষ্কার আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি’র মধ্যে এখন বহিষ্কার আতঙ্ক চলছে, আতঙ্ক চলছে পদ হারানোর। গত এক বছরে শতাধিক নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কাউকে কাউকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও বলা হচ্ছে যে, দলের শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর অবস্থানে গেছেন লন্ডনে পলাতক বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করছেন যে, এটিকে বিএনপি’র কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার হচ্ছে। কারণ বেছে বেছে জনপ্রিয়, ত্যাগী নেতাকর্মীদেরকে বহিষ্কারের ফলে কর্মীদের মধ্যে ভুল বার্তা যাচ্ছে এবং নেতাকর্মীরা কাজ করার উদ্যোম হারিয়ে ফেলেছেন। এই রকম অবস্থা চললে বিএনপি নেতারা তারেকের ভয়ে এখন হাত-পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকবে। কেউ কোন কাজ করবে না। কে কি সমালোচনা করলো না করলো সেটি পরের বিষয়, কিন্তু তারেক জিয়া তার বহিষ্কার নাটক অব্যাহত রেখেছেন। সামনে আরো কয়েকজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে বা দলে তারা পদ হারাতে পারেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদের মধ্যে শওকত মাহমুদকে ইতোমধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে এবং এ কারণ দর্শানোর নোটিশের পরে তিনি দলের পদ হারাবেন বলে মোটামুটি নিশ্চিত করেছে বিএনপির একাধিক নেতা। শওকত মাহমুদ বিএনপি’র একজন নেতা না, সাংবাদিক হিসেবে তিনি প্রথিতযশা সাংবাদিক এবং সাংবাদিক হিসেবে তিনি অনেক আলোচিত এবং প্রশংসিত। তাছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাবে কয়েকবার সভাপতি এবং সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। বিএনপিপন্থী সাংবাদিকদের মধ্যে তার বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। এরকম একজন ব্যক্তিকে যদি বহিষ্কার করা হয়, তাহলে সেটি সাংবাদিক সমাজের উপর প্রভাব পড়বে বলে অনেকে মনে করছেন।


এছাড়াও তারেক জিয়ার শ্যেনদৃষ্টির মধ্যে আছেন মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন। হাফিজ উদ্দিনেরও যেকোনো সময় পদ কেড়ে নেওয়া হতে পারে বলে বিএনপি’র মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তাকে এর আগেও একবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। এখন তার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ তা অবশ্য স্পষ্ট জানা যায়নি। তবে একটি বড় অভিযোগ যে, তারেক জিয়ার আস্থাভাজন এবং তারেক জিয়ার কাছে তিনি প্রিয়ভাজন ব্যক্তি নয়।
রুহুল কবির রিজভীর নামও এসেছে বিএনপি’র পদ হারানোদের তালিকায়। সম্প্রতিক সময়ে রুহুল কবির রিজভীর কিছু কিছু বক্তব্য তারেক জিয়ার পছন্দ হয় নি। তাকে শেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছে যে যেকোনো বিষয়ে বক্তব্য রাখার আগে যেন তারেক জিয়ার অনুমতি নেয়া হয়। তারেক জিয়ার অনুমতি না নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য দিলে ভবিষ্যতে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে বলে বিএনপির বিভিন্ন সূত্রগুলো জানিয়েছে।
মির্জা আব্বাসের সঙ্গে তারেক জিয়ার সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই খারাপ। এর আগেও মির্জা আব্বাসকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। মির্জা আব্বাস ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছিলেন। যদিও পরে তিনি মন্তব্যটি প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু তারপরও এটি বিএনপি’র মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করেছিল। তবে ইলিয়াস আলীর সম্পর্কে মন্তব্য মূল কারণ নয়। বিএনপি নেতারা মনে করছেন যে, তারেক জিয়ার অপছন্দের তালিকায় মির্জা আব্বাসেরও নাম আছে। সে কারণে মির্জা আব্বাসও যেকোনো সময় বিএনপি’র গুরুত্বপূর্ণ পদ হারাতে পারেন। অবশ্য মির্জা আব্বাস নিজেই রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে তারেক জিয়ার একতরফা এবং অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে।
এই চারজন ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অনেকেই বহিষ্কার আতঙ্কে ভুগছেন এবং তাদেরকে যেকোনো সময় পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিএনপি’র কেউ কেউ মনে করছেন যে, এটি দলের শৃংখলার জন্য করা হচ্ছে। তবে অধিকাংশ নেতাকর্মীরা মনে করেন যে, এর মধ্য দিয়ে বিএনপিতে তারেক জিয়া একটি ভুল বার্তা দিচ্ছেন এবং নেতাকর্মীদেরকে হতোদ্যম করছেন।