বাগেরহাটে বিনা টাকায় পুলিশে চাকরি হলো ৪১ জনের

মাসুম বিল্লাহ,বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ

সরকারি পিসি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেরুন নেছা
মেরী। পড়ালেখায়ও বেশ ভালো সে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫
পেয়েছিলেন। স্বপ্ন পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তা হওয়ার। কিন্তু রাজমিস্ত্রী
বাবার উপার্জনে সংসার চালানোই দায়। তাই বাবার কষ্ট কিছুটা কমাতে
দাঁড়িয়েছিলেন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায়। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শারীরিক,
লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ১ হাজার ৪০৪ জন নিয়োগ প্রত্যাশীকে পিছনে ফেলে
সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছেন মেরি। বাগেরহাট সদর উপজেলার বিজয়পুর
গ্রামের রাজমিস্ত্রি মোঃ আজগর আলীর মেয়ে মেরির এই সফলতার আনন্দ ছুঁয়ে দিয়েছে
পরিবারের প্রত্যেকজন সদস্যকে।
বাগেরহাটে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ঘুষ সুপারিশ ছাড়া ৪১ জন
নিয়োগ পেয়েছেন। শারীরিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাসহ সকল প্রক্রিয়া শেষে
মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) রাতে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের নাম প্রকাশ করেন
পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক। কোন প্রকার ঝুট ঝামেলা ও আর্থিক লেনদেন ছাড়া
চাকুরী পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিয়োগপ্রাপ্তরা।

বাগেরহাট পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট জেলায় ৩৫ জন
পুরুষ ও ৬জন নারীসহ মোট ৪১জন কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১২ থেকে ১৪
মার্চ পর্যন্ত প্রার্থীদের শারীরিক উচ্চতা, কাগজপত্রাদি যাচাই-বাচাই এবং
প্রাথমিক শারীরিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০ মার্চ প্রাথমিক এসব পরীক্ষায়
উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষার পরে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ২৯ মার্চ
মনস্তাত্তিক ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে চুড়ান্ত নির্বাচিতদের
তালিকা প্রকাশ করা হয়।
প্রথম স্থান অর্জন করা মেহেরুন নেছা মেরী বলেন, এক সময় ভাবতাম ঘুষ ও
সুপারিশ ছাড়া চাকুরী হয় না। কিন্তু এখানে এসে আমার সব ধারণা পাল্টে গেছে।
আমার জন্য কেউ কোন সুপারিশ করেনি। আর টাকার কথা যদি বলি, আমার বাবা
রাজমিস্ত্রির কাজ করে যা পায়, তা দিয়ে চারজনের সংসার চালানোই দায়। এর পরে
আবার ৬ষ্ট শ্রেণিতে পড়ুয়া বোনের লেখাপড়ার খরচ দিতে বাবার খুব কষ্ট হয়।
চাকুরীর জন্য টাকা দেওয়ার সুযোগ কোথায় আমাদের। এই চাকুরীটা হওয়ায় খুব
উপকার হয়েছে।
নিয়োগপ্রাপ্তদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের
বেশিরভাগই হতদরিদ্র ও দরিদ্র পরিবারের সন্তান। যাদের চাকুরীর জন্য টাকা
দেওয়ার সামর্থ্য যেমন নেই, তেমনি সুপারিশেরও লোক নেই। মেধা ও শারীরিক
পরীক্ষায় নিজেদের যোগ্যতা প্রমানের মাধ্যমে কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছেন তারা।
পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পাওয়া কচুয়া উপজেলার মসনি এলাকার অসুস্থ চায়ের
দোকানি আব্দুল জব্বার শেখের ছেলে আরিফ শেখ বলেন, বাড়ির সামনে চা বিক্রি
এবং আমার প্রাইভেট টিউশনির টাকায় আমাদের সংসার চেলে। কোন প্রকার ঘুষ লেনদেন
ছাড়া এই চাকুরী হওয়ায় আমি খুবই খুশি হয়েছি। আল্লাহর রহমতে বাবার চিকিৎসা ও সংসার চালাতে আশাকরি এখন আর তেমন কষ্ট হবেনা।
বাগেরহাট পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক বলেন, শতভাগ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আমরা পুলিশ কনষ্টেবল পদে চাকুরী দিয়েছি। আমরা চেষ্টা করেছি
মেধাবীদের পুলিশ সদস্য হিসেবে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার। ভবিষ্যতেও সকল
নিয়োগে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি