টিপু হত্যা: রাজনীতির অশনিসংকেত?

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই ধরনের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নতুন নয়। কিন্তু লক্ষণীয় ব্যাপার হলো যখনই এ ধরনের হত্যাকান্ড ঘটে তখনই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরীর একটি চেষ্টা চলে। যখন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যখন সরকার পতনের ডাক দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তখন জাহিদুল ইসলাম টিপুর হত্যাকাণ্ড রাজনীতিতে এক অশনিসংকেতের বার্তা বহন করছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। একটি গণতান্ত্রিক দেশে রাজনীতি হবে গণতান্ত্রিক। বিরোধী দলগুলো সরকারের বিভিন্ন নীতি-কৌশলের সমালোচনা করবে। সমালোচনার প্রতিবাদে তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেবে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশে প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়, যখন বিরোধী দলগুলো গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে ব্যর্থ হয়, তখন তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে।

২০১৩-১৪ সালে আমরা লক্ষ্য করেছি যে, বিভিন্ন হত্যাকান্ড, জ্বালাও-পোড়াও, বাসে আগুনের মাধ্যমে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আবার অনেক সময় যখন কোনরকম কর্মসূচি দিতে পারে না, তখন নানা রকম ঘটনা ঘটিয়ে একটি উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। আগে আমরা লক্ষ্য করতাম, হরতালের আগে গাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে একটা ভীতি সঞ্চার করা হতো। কোথাও কোথাও সন্ত্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া হতো। সাম্প্রতিক সময়ে যখন টিপুকে হত্যা করা হয়েছে, তখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা নীরব অস্থিরতা চলছে। বিরোধী দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার ঘোষণা দিয়েছে। যদিও তারা এখন পর্যন্ত কোনো আন্দোলন করতে পারেনি। অন্যদিকে বাম রাজনৈতিক দলগুলো আগামী ২৮ মার্চ সারাদেশে হরতাল ডেকেছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ে দেশের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। এছাড়াও নানা রকম নাগরিক সমস্যা বেড়েছে। সামনে বিদ্যুতের দাম, গ্যাসের দাম ইত্যাদি বাড়লে নাগরিক অসন্তোষ বাড়বে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে কিছু হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা কেউ কেউ করতে পারে। রাজনীতিতে এটি অনেক পুরনো খেলা।

বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, জাহিদুল ইসলাম টিপুকে কেন হত্যা করা হলো? এই হত্যাকাণ্ড কি কোনো বিরোধের জের? নাকি এর পেছনে রাজনীতির মাঠকে উত্তপ্ত করার কোনো সুচিন্তিত পরিকল্পনা রয়েছে? বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার জন্য এরকম হঠাৎ হত্যাকাণ্ড একটি পুরনো কৌশল। এর আগে নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে সাদেক হোসেন খোকার একটি টেলি আলাপে বোঝা যায় যে, রাজনীতিতে লাশ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ওই টেলি আলাপে মাহমুদুর রহমান মান্না প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকাকে বলছিলেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা লাশ ফেলতে হবে। বিভিন্ন সময় মনে করা হয় যে, একটা হত্যাকান্ড ঘটিয়ে পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করা সম্ভব হয়। সেরকম কোনো লক্ষ্য থেকে এটা করা হয়েছে কিনা সেটি একটি দেখার বিষয়।কারণ টিপু কোনো উচ্চ পর্যায়ের নেতা ছিলেন না। তাকে লক্ষ্য করে কেন এরকম হত্যাকাণ্ড ঘটানো হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন। এর পেছনে অন্যান্য রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থাকতে পারে বা অন্য কিছু থাকতে পারে, কিন্তু এর প্রধান উদ্দেশ্য অবশ্যই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে ফেলা। বিভিন্ন সময়ে রাজনীতিতে এই কৌশল প্রয়োগ আমরা লক্ষ্য করেছি। সেই পুরনো খেলাই আবার শুরু হয়েছে কিনা সেটিই এখন দেখার বিষয়।