বিএনপির রাজাকার তোষণ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

বিএনপি নিজেদেরকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হিসেবে দাবি করে। বিএনপি দাবি করে যে, তাদের প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন। বিএনপি মনে করে যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষায় এ দলটির অবদান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে? স্বাধীনতা দিবসে বিএনপির রাজনীতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, বিএনপির রাজনীতির প্রধান লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা এবং রাজাকার তোষণ। বিএনপির জন্ম হয়েছিল একটি মিশ্র প্রক্রিয়ায়। সেনাপ্রধান হিসেবে সামরিক পোশাক পরে জিয়াউর রহমান বিভিন্ন গোষ্ঠীর লোকদের নিয়ে একটি ক্লাবের মত করে বিএনপি গঠন করেছিলেন। আর সেই ক্লাবের অন্যতম অংশীদার ছিল জামায়াত, স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী। জিয়াউর রহমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছিলেন শাহ আজিজুর রহমানকে, যিনি একজন স্বীকৃত রাজাকার ছিলেন। জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় লেফট্যানেন্ট কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমান, মাজেদুল হকের মত রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধী সামরিক কর্মকর্তারা ছিলেন।

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বেগম খালেদা জিয়ার হাতে আসে বিএনপি। আর বেগম খালেদা জিয়াও বিএনপিতে রাজাকার তোষণ অব্যাহত রাখেন। ১৯৯১ সালের বিজয়ের পর বিএনপি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেন আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে, যিনি একাত্তরের স্বীকৃত রাজাকার ছিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার রাজাকার তোষণ প্রক্রিয়া পুরো সময়ই অব্যাহত ছিল এবং এটি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে ২০০১ সালে। ২০০১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে তখন বেগম খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধী, ধর্ষক, গণহত্যার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত দুজনকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেন। এরা হলেন- জামায়াতের মতিউর রহমান নিজামী এবং আলী আহসান মুজাহিদ। এছাড়াও বেগম খালেদা জিয়া আরেক যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে তাঁর উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। শুধু তাই নয়, ওসমান ফারুকের মতো একাত্তরের রাজাকার এবং যুদ্ধাপরাধীকেও বেগম খালেদা জিয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন। এই ধারা অব্যাহত আছে এখনো।

২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির অন্তত ৫৩ জন স্বাধীনতাবিরোধীকে ধানের শীষ প্রতীক দিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সমস্ত স্বাধীনতাবিরোধীরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদের সঙ্গে সরাসরিভাবে যুক্ত। বিএনপির এখন যে বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি রয়েছে সেই কমিটিগুলোতে শতাধিক স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার রয়েছে। বিএনপি রাজনীতি হলো এটি। তারা বাইরে মুক্তিযুদ্ধের কথা বললেও ভেতরে তাদের দলে রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধী এবং একাত্তরের পরাজিত শক্তিদেরকে আশ্রয় দেওয়া হয়, তাদেরকে লালন করা হয়। আর এই কারণেই স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে মনে করা হয়। বিএনপি নেতারাও এটা অপ্রকাশ্যে ব্যক্তিগত আলাপ-আলোচনায় স্বীকার করেন।বিএনপি নেতারা মনে করেন যে, আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তি হলো বিএনপি’র ভোটব্যাঙ্ক। আর আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তি বলতে তারা স্বাধীনতাবিরোধী পরাজিত গোষ্ঠীকেই বুঝায়।১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিল। কিন্তু ওই নির্বাচনেও স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এবং ছয় দফাবিরোধী শক্তি বাংলাদেশে ২৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এই ভোট হলো স্বাধীনতাবিরোধীদের ভোট, যারা মুসলিম লীগসহ অন্যান্য দলগুলোকে ভোট দিয়েছিল। এখন এত বছর পরও সেই স্বাধীনতাবিরোধী ভোটব্যাঙ্কটির প্রধান দল হলো বিএনপির এবং রাজাকার তোষণই হলো বিএনপির রাজনীতির প্রধান হাতিয়ার।