আলি মুনছুর বাবুর কাছে কি আলাদিনের চেরাগ আছে?

হুবহু পত্রিকার পাতায় পড়তে ছবিতে ক্লিক করুন

আলি মুনছুর বাবুর কাছে কি
আলাদিনের চেরাগ আছে?

প্রকাশ বাবা ভাণ্ডারী

আলাদিনের আশ্চর্য চেরাগের কাহিনি তো প্রায় সকলেরই জানা। বেশ রোমাঞ্চকর, না? এমন চেরাগ পেলে কী ভালোই না হতো?

শৈশব কৈশরে আরব্য রজনী পড়ার বয়স পেরিয়ে যখন একটু বড় হলাম– তখন তো একটু একটু বুঝলাম চেরাগ-টেরাগ আসলে নেই। তবে বিশ্বাস করুন, সেই অবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল অল্প কিছুদিনের জন্যই। বুদ্ধিসুদ্ধি পাকতে পাকতে বুঝে ফেললাম, আছে, আলাদিনের চেরাগ আদতেই আছে। তবে এখন আর আলাদিনের হাতে নেই, এই যা!

ভারতের এক অধিবাসী নাকি আলাদিনের চেরাগ কিনছেন ভেবে কাদের যেন লাখ লাখ টাকা দিয়েছেন। এ নিয়ে অনেক হাসি-তামাশা হচ্ছে। অবশ্য আমি তাঁর দোষ খুঁজে পাই না। একবার ভেবে দেখুন তো, আপনার চারপাশে এমন চেরাগওয়ালা মানুষ কি কম? আঙুল ফুলে কলাগাছ কেন, পুরোপুরি সুবিশাল বটগাছ বনে যাওয়া লোক কি চেনেন না?

এই যে, ভুরু কোঁচকাচ্ছেন। যতই বিরক্ত হোন, উত্তরে কি ‘না’ বলতে পারবেন? পারবেন না। পত্রিকার পাতায় আর কয়জন পি কে হালদারের খবর আসে? এমন যে ঢের আছে। শেষে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হবে যে!

অন্য কোনো দেশে থাকুক না থাকুক, আমাদের দেশে আলাদিনের চেরাগ সত্যিই আছে। সমস্যা হলো, চেরাগের সংখ্যা অনেক বেশি। অবশ্য আরব্য রজনীর আলাদিন এই বঙ্গে কোনো কালে এসেছিলেন কি না, সে ব্যাপারে ঠিক নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। কারণ আলাদিনের তো একটাই চেরাগ ছিল জানতাম। তবে কি এখানে ডুপ্লিকেট তৈরি হচ্ছে?

তবে আমার বিশ্বাস, মুক্তিযোদ্ধাদের পদকসহ সব কিছুতে খাঁদ মেশালেও আলাদিনের চেরাগের ডুপ্লিকেট তৈরিতে আমরা কোনো খাদ মেশাইনি। অবিকৃত রাখতে একটু ফরমালিন মেশানো হতে পারে, তবে তা এত বেশি নয় যে গুণ নষ্ট হবে। সেই চেরাগে হাত ঘষলেই দৈত্য বেরিয়ে আসে, আর ইচ্ছেপূরণ করে। চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সব পূরণ হয়ে যায়।

না। আমাদের চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের এমপি হাজী আলী আজগার টগর মহোদয়ের ভাই আলি মুনছুর বাবু আলাদীনের চেরাগ পেয়েছেন কি না জানিনা। তবে ভাইয়ের মতোই যা চেয়েছেন, তাই পেয়েছেন।

টগর সাহেব এমপি হবার আগেও রাজনীতিতে বাবুর হাঁকডাকের কথা কেউ শুনেছেন বলে মনে হয় না। ভাই এমপি হলেন— আলি মুনছুর বাবুর নাম-জশ পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগলো। রাতারাতি হয়ে গেলেন আওয়ামী লীগের নেতা। চুয়াডাঙ্গা জেলার বন্দরনগরী খ্যাত দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদও পেয়ে গেলেন।

মাঝে একটু হোঁচট খেতে খেতে সামলে নিয়েছেন। ২০১৮ সালের প্রথম দিকের ঘটনা। চুয়াডাঙ্গার মাদক সিন্ডিকেট নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি তালিকায় তৈরি করে। এতে গডফাদার ও হোয়াইট কলার ক্রিমিনাল হিসেবে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের এমপি হাজি আলী আজগর টগরের ছোটভাই আলি মুনছুর বাবুর নামও উঠে আসে। তবে ‘ভুল করে’ সে নাম উঠেছিল বলে এখনও বাতাসে খবর ভাসে। বাতাস যে শুধু নির্মল বিশুদ্ধ হয় তাতো নয়, বাতাসে ধুলোবালির সাথে কতো কি থাকে?

যাইহোক সেখান থেকে আলি মুনছুর বাবু তার প্রিয় ভাই যে দলের সংসদ সদস্য (এমপি) সে দলের প্রতীক নৌকার বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীও হয়ে গেলেন। সে বছর জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজে স্বাক্ষর করে নৌকা মনোনয়ন দিয়েছিলেন দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ত্যাগী নেতা সিরাজুল আলম ঝন্টুকে। আলাদীনের চেরাগের দৈত্যের কি মহিমা আলি মুনছুর বাবু শেখ হাসিনার নৌকা- ঝন্টুর নৌকাকে হারিয়ে দিয়ে নিজে ঠিকই বিজয়ী হলেন। এখন তিনি দামুড়হুদা উপজেলা চেয়াম্যানের মসনদে গদিনসীন।

আজ দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। চারিদিকে চাউর হয়েছে এবার তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগেরও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে চান। তিনি চাইতেই পারেন। আর চাইলেই তো পেয়ে যান। তবে আলাদীনের চেরাগের দৈত্য এবার কি করে আমরা তা দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

শীর্ষ দুই পদে নতুন-পুরাতনের
সমন্বয়, না নতুন মুখের চমক?

রাসেল আহমেদ

আজ ১৫ মার্চ মঙ্গলবার। দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। দীর্ঘ ১৮ বছর পর অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনের নেতৃত্ব নির্বাচনে কী বার্তা দেবে আওয়ামী লীগ, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। শীর্ষ দুই পদে নতুন-পুরাতনের সমন্বয় হবে না নতুন মুখের চমক আসবে? এ গুঞ্জন বিস্তৃত হয়েছে দামুড়হুদা উপজেলা ছাড়িয়ে গোটা জেলার রাজনীতি মনস্ক মানুষের কাছে।

এ উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ব্যানার আর ফেস্টুনে উপজেলা শহরে বইছে সাজ সাজ রব। নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ।

ইতোমধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। অনেকেই বিলবোর্ড ও সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুকে তাদের প্রার্থিতা জাহির করেছেন। কেউ কেউ যেমন নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন প্রার্থী হিসেবে। আবারো কারো কারো নাম শোনা যাচ্ছে নেতাকর্মী ও ফেসবুকের মাধ্যমে। কোন কোন প্রার্থী নিজেই প্রচারণা চালাচ্ছেন। সঙ্গে নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে ধর্ণা দেয়া তো ছিলই।

২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে দামুড়হুদা উপজেলা আ.লীগের কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির সভাপতি হন সিরাজুল আলম ঝন্টু। আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মাহফুজুর রহমান মঞ্জু।

আজকের সম্মেলনে সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু ফের একই পদের প্রার্থী হলেও মাহফুজুর রহমান মঞ্জু এবার সাধারণ সম্পাদেকর পদ ছেড়ে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। সভাপতি পদে আরো নাম শোনা যাচ্ছে হাউলী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাজি শহিদুল ইসলাম ও জুড়ানপুর ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনের নাম। সাধারণ সম্পাদক পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তারা হচ্ছেন দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান, দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলি মুনছুর বাবু, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এএসএম জাকারিয়া আলম, নতিপোতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ, আ.লীগ নেতা হাজি শহিদুল ইসলাম ও যুবলীগ নেতা এড. আবু তালেব।

আজ সকাল ১০টার দিকে দর্শনা অডিটোরিয়াম কাম কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে এ সম্মেলন। সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন আ.লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবিএম মোজাম্মেল হক, কেন্দ্রীয় সদস্য পারভীন জামান কল্পন। স্থানীয়ভাবে বিশেষ অতিথি থাকবেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়াদ্দার ছেলুন এমপি, সহসভাপতি হাজি আলী আজগার টগর এমপি, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদসহ জেলা ও উপজেলা আ.লীগের নেতৃবৃন্দ।

সম্মেলন মানেই তো নতুন পুরাতন নেতৃত্বের সমন্বয় বা সম্ভাবনা জাগে সেক্ষেত্রে আসন্ন দামুড়হুদা জেলা সম্মেলনে কী বার্তা আসবে বলে মনে করেন? এ ঢাকার এক কেন্দ্রীয় নেতাকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘দল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিশ্বাস করে। প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবেই এবং আমি নিজেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা-প্রতিযোগিতার সমর্থক। এতে দল গতিশীল হয়।