এসএমপির এক সুন্দরী নারী কনেস্টবল সংসারে ও সম্পদে বেপরোয়া

এই আমার দেশঃ

৪ বছরের মধ্যে একাধিক সংসার করে আলোচনায় এসেছেন সিলেটে মেট্রোপলিটন পুলিশের এক নারী কনেস্টবল। যদিও বিয়ের তথ্য আড়াল করেই নিয়োগ নিয়েছিলেন পুলিশে। অথচ অবিবাহিত প্রার্থী নিয়োগের বিধান কনস্টেবল পদে পুলিশে। আলোচিত এ নারী কনেস্টবল কেবল সংসারের সংখ্যা বাড়াননি, সেই সাথে বিপুল অর্থ সম্পদও বাড়িয়েছেন তিনি। চাকরির এক দশক পূর্ণ হওয়ার আগেই সিলেট শহরতলির নালিয়া এলাকায় কিনেছেন ২১ লাখ টাকা মূল্যের জমি। করিৎকর্মা ওই নারী কনস্টেবলের নাম রুমেনা আক্তার (৩১)। বছরের পর বছর ধরে কর্মরত রয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ সাপ্লাই/রেশন স্টোরে।

একাধিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ওই নারী কনেস্টবলের যাপিত জীবনের নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য, সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নতুনপাড়ার আহম্মদ আলীর কন্যা রুমেনা আক্তার। বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল পদে যোগদান করেন ২০১১ সালের ১৯ এপ্রিল। পুলিশের বিধান অনুযায়ী কনস্টেবল পদে যোগদান করতে হলে প্রার্থীকে অবশ্যই হতে হবে অবিবাহিত। কিন্তু, রুমেনা আক্তার প্রথম বিয়ের তথ্য গোপন করেই যোগদান করেন পুলিশে। যোগদানের আগে রুমেনা আক্তার আনুষ্টানিকভাবে বিয়ে করেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের আক্কাস আলীর পুত্র শামসুজ্জামানকে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার ও কাজী মাওলানা মো. শাহেদ আলী এক লাখ টাকা দেনমোহরে রেজিস্ট্রেশন করেন এ বিয়েটি। বিয়েতে কনেপক্ষ থেকে ইব্রাহিমপুর গ্রামের মো. আবু বকর মিয়ার পুত্র মো. আব্দুছ ছালামকে উকিল (সাক্ষী) নিযুক্ত করা হয়। কাবিননামায় কনের পিতা বিশ্বম্ভরপুরের নতুনপাড়ার মৃত ছমির উদ্দিনের পুত্র আহাম্মদ আলী ও কনের চাচা মো. আব্দুছ ছামাদ কনের পক্ষে সাক্ষী হন। বরের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম ও দিরাই উপজেলার আনোয়ারপুর নয়াহাটির আব্দুল মতলিবের পুত্র মো. আব্দুল মতিন বরের পক্ষে কাবিননামায় সাক্ষী হন। কাবিননামায় স্বাক্ষর করেন কনে রুমেনা আক্তার ও বর শামসুজ্জামান। এ প্রসঙ্গে নগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বিএম আশরাফুল্লাহ তাহের জানান, বিধিবহির্ভূতভাবে তথ্য গোপন করে কেউ চাকরিতে প্রবেশ করলে পুলিশের আইন অনুযায়ী অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে,শামসুজ্জামান ও রুমেনা আক্তারের বিয়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন নিকাহ রেজিস্ট্রার ও কাজী মাওলানা মো. শাহেদ আলী। এরকম তথ্য গোপন করেই কনস্টেবল পদে নিয়োগ নেন রুমেনা আক্তার পুলিশে। এমনকি প্রশিক্ষণকালে স্বামী শামসুজ্জামান স্ত্রী রুমেনা আক্তারের ব্যয় নির্বাহের জন্য মানিঅর্ডার করে টাকাও পাঠাতেন নিয়মিত। পুলিশে যোগদানের পর রুমেনা থাকতেন সিলেট জেলা পুলিশ লাইন্সে আর শামসুজ্জামান নিজ বাড়ি ইব্রাহিমপুরেই বসবাস করতেন। একসময় স্বামী শামসুজ্জামানের সাথে রুমেনা কমিয়ে দেন যোগাযোগ। স্ত্রীর বদলে যাওয়ায় শামসুজ্জামান সিলেটে ছুটে আসেন। তারপর শোনেন এক সহকর্মীর সাথে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করেছেন রুমেনা। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করেন শামসুজ্জামান। এজন্য সিলেটে বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণাও দেন। কিন্তু সর্ম্পক রক্ষায় ব্যর্থ হন তিনি। এক পর্যায়ে রুমেনার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় শামসুজ্জামানের। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে শামসুজ্জামান জানান, স্ত্রী রুমেনার বদলে যাওয়ায় সিলেটে ছুটে যাই। পরিচিত দু’জনকে নিয়ে তাকে আমার দিকে ফেরানোরও আপ্রাণ চেষ্টা করি। কিন্তু, তার কর্মকান্ডে হতাশ হয়ে সুনামগঞ্জে ফিরে আসি। আমাকে তালাক দেওয়ারও হুমকি দেয়। কিন্তু, বাস্তবে কখনো তালাকের কোনো কাগজ আমি পাইনি। সুনামগঞ্জ শহরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকরির সুবাদে রুমেনার সাথে পরিচয় হয়। তার চাকরির জন্যে চেষ্টা কম ছিল না আমার। এজন্যে আমার প্রায় ৭০/৭৫ হাজার টাকা খরচও হয়েছে। তার পুলিশের চাকরিতে যোগদানের আগে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর সে কনস্টেবল পদে যোগদান করে। তার চাকরির জন্য অনেক তদবির করতে হয়েছে আমাকে। এখন আর অতীত মনে করে শুধু শুধু কষ্ট পেতে চাই না বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন প্রবাসী শামসুজ্জামান। এছাড়া তিনি বলেন, ওই সময়ে রুমেনা তার সাজ্জাদ নামের এক সহকর্মীর সাথে সংসার করেছে বলেও শুনেছি। ওই সহকর্মীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা সেসময় মুখে মুখে ছিল বলে জানান শামসুজ্জামান। যদিও সাজ্জাদ দাবি করেছেন, ‘কনস্টেবল রুমেনা আক্তারের সাথে কখনো তার ঘর-সংসার দূরে থাক, ঘনিষ্ঠ কোনো সম্পর্কও ছিল না।

জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর রুমেনাকে সিলেট জেলা পুলিশ থেকে বদলি করা হয় মৌলভীবাজার পুলিশ লাইন্সে। এরপর যোগ দেন মৌলভীবাজার সদর থানায়। মৌলভীবাজার সদর থানায় যোগদানের পর ওই থানায় আগে থেকে কর্মরত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রফিকুল ইসলাম রানা নামের আরেক জনের সাথে নতুন করে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন রুমেনা। এরপর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট এএসআই রফিকুলের সাথে আবারও বিয়ে হয় রুমেনা আক্তারের। সুনামগঞ্জ শহরের রুমেনার এক বোনের বাসায় ওই বিবাহ সম্পন্ন হয়। এই সংসারে তার এক পুত্র সন্তান রয়েছে। বর্তমানে তার বয়স প্রায় ৬ বছর।

মৌলভীবাজার থেকে বদলি হয়ে পুনরায় সিলেট জেলা পুলিশে আসেন রুমেনা। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি সিলেট মহানগর পুলিশের এসএমপি/হেডকোয়ার্টার্স এন্ড অ্যাডমিন বিভাগ /সাপ্লাই / রেশন স্টোরে যোগদান করেন তিনি। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে আজ ৩ মার্চ পর্যন্ত টানা ৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে একই জায়গায় বহাল তবিয়তে আছেন কনস্টেবল রুমেনা আক্তার। একই সময়ে অন্য কনস্টেবলরা চাকরি করেছেন একাধিক স্টেশনে। একই স্টেশনে চাকরির বদৌলতে সিনিয়র কর্মকর্তাদের সাথে তৈরি হয় তার বেশ সুসম্পর্কও। বিশেষ করে পুলিশ পরিদর্শক পদের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কনস্টেবল রুমেনা আক্তারের সম্পর্ক নিয়ে নানা গুঞ্জনও রয়েছে সহকর্মীদের। রুমেনা আক্তারের চাকরিতে যোগদানের ১১ বছর পূর্ণ হওয়ার বাকি রয়েছে এখনো ১ মাসেরও বেশি সময়। এরমধ্যেই চাকরির ৯ বছরের মধ্যেই রুমেনা আক্তার সিলেট শহরতলির নালিয়ায় প্রায় ২১ লাখ টাকা মূল্যের ৭ শতক জমি ক্রয় করেছেন নিজ নামে। ২০১৯ সালে আঙ্গারুয়া মৌজার ২০৫২ নম্বর দাগে শামসুল নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৭ শতকের এ প্লটটি সাফ কবালামূলে ক্রয় করেন তিনি। চাকরির শুরু থেকে এখনো রুমেনা জাতিসংঘ শান্তি রক্ষী মিশনে যাননি। স্বাভাবিকভাবেই তার এই বিপুল অর্থের উৎস নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। বিশ্বম্ভরপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে মানবিক বিভাগে এসএসসি পাস করেন রুমেনা আক্তার। স্বাভাবিকভাবে অবসর গ্রহণের কথা ২০৫০ সালের ৯ এপ্রিলে তার। তবে কনস্টেবল পদে যোগ দেয়ার আগে বিয়ে ঠিক হয়েছিল বলে জানান রুমেনা আক্তার। তিনি বলেন, আমার পরিবার ঠিক করেছিলেন বিয়ে। কিন্তু আমি এতে মত দেইনি ফলে ভেঙে যায় বিয়েটি। পুলিশে যোগদানের আগে তার কোনো বিয়ে হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। কাবিননামায় তার পিতা-চাচা সাক্ষী হওয়ার তথ্য জানালে এর জবাবে তিনি বলেন, প্রশ্নই আসে না কাবিননামার। এছাড়া জায়গা কেনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জায়গা কিনেছি, নিজের টাকা দিয়ে। জায়গা কেনা কোনো অপরাধ ? বলেও পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়েন রুমেনা আক্তার।