রাশিয়াবিরোধী অবস্থানে কেন গণ অধিকার পরিষদ?

এই আমার দেশঃ

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। রাশিয়া বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হলেও এই যুদ্ধে দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া ছাড়া কার্যত তেমনকিছু করার নেই এবং প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোও এখন পর্যন্ত রাশিয়ার ব্যাপারে পক্ষে-বিপক্ষে কোনো মন্তব্য করেনি, বিবৃতি দেয়নি। কিন্তু রেজা কিবরিয়া ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নতুন নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল গণ অধিকার পরিষদ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। রেজা কিবরিয়া ও ভিপি নুর বিভিন্ন সভা-সমাবেশে এ যুদ্ধাবস্থার জন্য রাশিয়াকে দায়ি করছেন। গণ অধিকার পরিষদের অকস্মাৎ রাশিয়ার বিপক্ষে যাওয়াকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিশেষ করে গণ অধিকার পরিষদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্ট হয়েই রাশিয়ার বিপক্ষে দেশে জনমত তৈরির চেষ্টা করছেন কি না, এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন অনেকেই।

গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া ও সদস্য সচিব নুরুল হক নুর ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং যুদ্ধটিকে রাশিয়ান আগ্রাসন হিসেবে চিত্রিত করেছেন। শুধু তাই নয়, ভিপি নুর ও রেজা কিবরিয়া আরও বলেছেন যে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পৃথিবীকে ১০০ বছর পেছনে ঠেলে দিয়ে ক্ষুদ্র ও সামরিক শক্তিতে দুর্বল রাষ্ট্রসমূহের নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে অসভ্যতার রাজত্ব কায়েম করতে নেমেছেন। রাশিয়ার এমন আগ্রাসন স্বাধীন দেশের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার মতো আন্তর্জাতিক রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, রাশিয়া কি এমনি এমনিতেই ইউক্রেনে আক্রমণ করেছে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী কোনো দেশ যদি রাশিয়ার সাথে সামরিক কোনো জোটে যুক্ত হতে চায়, যুক্তরাষ্ট্র কি সেটি মেনে নেবে? নিশ্চয় না। নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি পৃথিবীর যেকোনো দেশে আক্রমণ করতে পারে, যেটি তারা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার করেছেও, তাহলে রাশিয়া করতে পারবে না কেন? রাশিয়ার কি নিরাপত্তার দরকার নেই?

রাশিয়া এখনও ইউক্রেনকে পুরোপুরি স্বাধীন দেশ হিসেবে মানে না। ইউক্রেনের অনেকগুলো অঞ্চল রুশ ভাষাভাষী এবং তারা রাশিয়ার অনুগত। সেসব অঞ্চলে একাধিকবার আক্রমণ চালিয়েছে ইউক্রেন সরকার। অনেকটা বাধ্য হয়েই রাশিয়ান সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ চেয়েছে ওইসব এলাকার জনগণ। এর ফলশ্রুতিতে ইউক্রেনে প্রবেশ করে রাশিয়ান সেনাবাহিনী। কিন্তু গণ অধিকার পরিষদ এসব আলোচনাকে ধর্তব্যে না নিয়ে স্রেফ রাশিয়াকে একপাক্ষিক দোষারোপ করছে এবং রাশিয়ার বিপক্ষে দেশে জনমত তৈরির প্রয়াস চালাচ্ছে। তাদের এ প্রয়াসকে হঠকারি এবং দুরভিসন্ধিমূলক বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।