পরিবেশ বিষয়ক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে

খুলনা  সংস্করণ,ভ্রাম্যমান প্রতিনিধিঃ
দুই দিনব্যাপী পরিবেশ বিষয়ক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনের উদ্যোগে। সম্মেলনের বিষয় ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড ইকোসিস্টেম রেস্টোরেশন। সম্মেলনে ৬ টি কি-নোট পেপার এবং ১২৫ টি গবেষণা নিবন্ধ ও ৬০ জন তরুণ গবেষকের গবেষণা নিবন্ধ উপস্থাপিত হবে বলে জানা যায়। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলন শুরু হয় শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯ টায়। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তবে বাংলাদেশ পরিবেশের ক্ষতি না করেও আজ প্রথম সারির ভুক্তভোগী দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে। এজন্য বর্তমান সরকার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ইস্যুকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এ বিষয়ে ন্যাশনাল এডাপটেশন প্লান তৈরি করা হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় রিসার্চ এবং নলেজ ম্যানেজমেন্টকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজ জলবায়ু ইস্যুতে বিশ্বের সোচ্চার দেশ প্রধানদের মধ্যে অন্যতম। তিনি এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করছেন। জাতিসংঘের স্বীকৃতিও পেয়েছেন। তিনি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌগলিক অবস্থানজনিত কারণে এখানে গবেষণার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। এই সম্মেলন থেকে প্রাপ্ত সুপারিশমালা মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনে পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে বিশ্ব কতটা চিন্তিত সেটা বুঝতেই এই সম্মেলন।
তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩-১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবেশ বিষয়ে বিভিন্ন আইন করে গেছেন। তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কারণে তিনি এ বিষয়ে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ পুরস্কার পেয়েছেন। এ থেকেই আমরা বুঝতে পারি পরিবেশ নিয়ে ভাবনা এখন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের। উপমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের ১৯৭টি দেশ সবাই এখন বিশ্বাস করে আমাদের পরিবেশ ও প্রতিবেশ ঠিক রাখতে হবে। গত বছর অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনেও পরিবেশের নানা দিক স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল দেশই চায় সুন্দর পরিবেশ ধরে রাখতে। তবে বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলো পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। তাদের বিষয়ে সবাইকে ভাবতে হবে। তিনি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে পরিবেশ বিষয়ক প্রথম এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বার্তা যে, আমাদের পরিবেশ নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। সকলের গবেষণায় এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এসব দুর্যোগের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতি হচ্ছে, আয়তন কমে আসছে। প্রতিবছর ২-৪টি দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুন্দরবন উপকূলীয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। সুন্দরবন না থাকলে এ উপকূলে মানব বসতি ও জীবনযাপন সম্ভব হবে না। এ বিষয়ে ভাবতে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের এগিয়ে আসতে হবে। সকলের চিন্তা-ভাবনায় আমাদের দেশ বিশ্বে আরও ভাল অবস্থান তৈরি করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভাপতির বক্তব্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর ও সম্মেলনের চিফ প্যাট্রন প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, এই সম্মেলনটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্মেলনে শুধু দেশের জন্যই নয় আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত নিয়েও আলোচনা হবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান উপকূলীয় এলাকায় হওয়ায় পরিবেশ ও প্রতিবেশ নিয়ে শিক্ষা ও গবেষণা করা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সে দায়িত্ববোধ থেকেই এমন সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্লিনারি স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত। প্যাট্রন হিসেবে বক্তব্য রাখেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা এবং জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলনের অরগানাইজিং সেক্রেটারি সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সম্মেলনের অরগানাইজিং কমিটির কনভেনর প্রফেসর ড. দিলীপ কুমার দত্ত। এসময় মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর ও মাননীয় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে খ্যাতনামা পরিবেশবিদ প্রফেসর ড. আলী রেজা খান ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইডেনসহ দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী সশরীরে এবং ভার্চুয়ালি এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।