আপনি কি জানেন? সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার কেনো?

এই আমার দেশ ডেস্ক

৮০’র দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এর আগে সাপ্তাহিক ছুটি ছিলো রবিবার। বর্তমানে দেশের অনেক স্থানেই শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। যেখানে শুধু শুক্রবার ছুটির দিন হিসেবে আর বৃহস্পতিবার অর্ধকর্ম দিন হিসেবে পালিত হয়।

বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই সাপ্তাহিক ছুটি রবিবার হওয়ায় বাংলাদেশেও পূর্বে রবিবার ছুটি ছিলো। কিন্তু বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬.১৭ কোটির মধ্যে প্রায় ১৪ কোটি ৫০ লাখ মুসলমান বসবাস করেন। এরমধ্যে, মুসলমান অধ্যুষিত দেশ হওয়ায় শুক্রবার মুসলমানদের পবিত্র দিবস। মুসলমানদের জন্য বিশেষ নামাজের দিন।

এই দিনে মুসলমানদের অনেক ধর্মীয় কাজ থাকে। ফলে, রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও শুক্রবার অনেক ধর্মীয় কাজ থাকায় শুক্রবারও বাংলাদেশে কার্যত ছুটির দিনের মত পালিত হত। যা দেশের কাজের জন্য খুব ক্ষতিকর। শুক্রবারে মুসলমানদেরকে ধর্মীয় কাজে বাঁধা সৃষ্টি হয় এমন আইন/নিয়ম চালু করলে তা অসাংবিধানিক হয়ে যায়। কেননা, এতে ধর্মীয় স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়। ফলে, সরকার এই বিষয়টি পড়ে বেকায়দায়। অন্যদিকে, রবিবার খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য ধর্মীয় দিন থাকলেও বাকিদের জন্য তা ছিলো না। তাই এ দিনে ছুটি নেওয়ার ব্যাপারে অনেকেই সম্মত ছিলেন না। অনেকের কাছেই শুক্রবার, আবার অনেকের কাছে শনিবার ছিল ধর্মীয় দিন।

১৯৮৪ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রবিবারের পরিবর্তে শুক্রবারে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। পরবর্তীতে, ১৯৯৭ সালের ২৯মে সাপ্তাহিক ছুটি এক দিনের বদলে দুই দিন করা হয়। শুক্রবার ও শনিবার এই দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি হয়। যা নিয়ে সেই সময় রাজনৈতিক বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

সামরিক শাসক এরশাদ যখন ক্ষমতায়, তখন বাংলাদেশে এরশাদ পতন আন্দোলন জোরদার হয়। খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনা দুই নেত্রী এক বিরল মুহূর্তে এরশাদের বিরুদ্ধে একসাথে আন্দোলন করেন। এমতাবস্থায় এরশাদ মুসলমানদের সমর্থন নিজের প্রতি রাখার জন্য রাজনীতির চাল চালেন। মুসলমানদের দুর্বল জায়গায় হাত দেন। ইসলামকে তিনি নিজ স্বার্থে গুটির চাল হিসেবে ব্যবহার করেন।

শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণা দেন, যাতে মুসলমানরা উনাকে বাহবা দেন এবং ইসলামের খেদমতকারী অ্যাখ্যা দেন। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা দেন, যাতে তিনি বাংলাদেশি মুসলমানদের উনার পাশে পান । এরশাদ নিজেকে ইসলামের সেবক প্রমাণ করতে মুসলমানদের এই দুর্বল জায়গায় হাত দেন। উনার নিজের জীবনে ইসলামের লেশমাত্র ছিলো না। এরশাদ আন্দোলন থেকে মানুষকে অন্য দিকে ডাইভার্ট করতে ইসলামকে নিজ স্বার্থে রাজনীতিতে ব্যবহার করেন।

ইসলাম বাংলাদেশীদের কাছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও আবেগের জায়গা। যেহেতু সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার হয়েছে এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হয়েছে, তাই এটা পরিবর্তনের সাধ্য বাংলাদেশের কোনো সরকারের নেই। এই কারণে বাংলাদেশ সরকার সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম অংশটি বাদ দিতে পারে না। তাই বাংলাদেশে ধর্ম নিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম দুটোই সংবিধানে বিদ্যমান।