ত্রিসন্ধ্যা- অর্পন ঠাকুর (লেখালেখি)

                      ত্রিসন্ধ্যা
অর্পন ঠাকুর

সময়টা ছিল বেলা গড়িয়ে ঠিক ত্রিসন্ধ্যা। আমি পাশের চার টানা সাদা কালো দেওয়াল ঘরের এক কোনায় বসে আরামে পায়ের উপর পা গুটিয়ে কবিতার সঙ্গে বহু দিন পর দুটো সুখ দুঃখের গপ্পো করছিলাম। বেশ ভালোই জমে উঠেছিল দু’জনার গপ্পো কাহিনী। হঠাৎ করে মা জ্বলন্ত প্রদীপ হাতে চিৎকার করে আঙিনা থেকে জোরে জোরে হাক ছাড়ে , কবি বেটা আরে ও কবি বেটা বলি কই গেলে গো তুমি? দেখছো না বেলা শেষে সূর্যী ডুবে সন্ধ্যা হয়েছে।

চোখে কি হাজার পাওয়ারের চশমা লাগাতে হবে? চারদিকে মুখরিত হয়ে শঙ্খ আর উলু ধ্বনিতে জয় জয় বাণী সৃষ্টি হচ্ছে। কানে কি সিপি গুজিয়ে বসে গপ্পো করছো? এতো জোরে জোরে পাশের বাড়ি থেকে কন্ঠ ধ্বনির আওয়াজ শুনতে পারছি আমি। আর তুমি কি করে শুনছো না? বলি কি কর তবে হ্যাঁ? আমি বলাম মা তুমি না একদম কিছু বোঝনা আর বুঝতে একটুকু চেষ্টাও করনা। আমার না তোমার এই বদ অভ্যাসটা বড্ড জালাতন করে মারে। দূর বাবা আর ভলো লাগেনা। কতো দিন পর, কবিতার সঙ্গে দেখা হলো। কি আরো প্রাণ খুলে কইব যত মনের পুরনো রচনা। তা আর তোমার জন্য হলো না। দূর ছাই এবার আমার বড্ড কান্না পাচ্ছে।  আচ্ছা যাই হোক, ভুলটি যখন আমার হয়েছে তাই মায়ের মুখের উপর তো দুটি বড় কথাও বলতে পারব না। তৎক্ষনাৎ দিবে তো দু ঘা বসে। কি আর করি দুই ঠোঁটে টোপা লেগেই থাকতে হলো।

তারাহুরো করে হাত মুখ ধুয়ে, শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে অবশেষে মন্দিরে গিয়ে, মায়ের মূর্তিকে শয়ন দিয়ে, শ্রী রাঙা চরণ হতে আশীর্বাদের ধুলি মাথায় ছুঁয়ে , মন ঘোমটা ভেঙে হাসি মুখে মন্দির থেকে বের হলাম। কিন্তু যতই আমি মন্দিরে গিয়ে, পুজো অর্চনা করিনা কেনো। আমার তো মস্তিষ্কে শুধু একটাই  চিন্তা, ধ্যান ধারণা,অনুভূতি গভীর মগ্নে যন্ত্রণা করছিল যে, কখন মন্দির থেকে বের হয়ে আবার কবিতার সঙ্গে গপ্পোর আসরে বসব। হুম, শেষ মুহূর্তে তাহলে আমি সফল হতে পারলাম। হি হি, কি মজা, কি মজা, অপার আনন্দে আবার কবিতার সঙ্গে আঁখি মেলিয়া ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়া ওই যে গপ্পো শুরু করতে লাগলাম। রাত বারোটা বাজতে চললো তবুও এবার মায়ের কোনো সারা শব্দ নেই।

বলছেও না কবি বেটা খেতে আয় অনেক রাত হয়েছে। আমার তো মনে হচ্ছে নিশ্চয় মা কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরেছে,তাই জন্য বুঝি মনে মনে ভাবছে থাক ওদেরকে আর বিরক্ত করবনা। আমিও তো বুঝি এতো দিন পর যখন দু’জন দু’জনার দেখা হলো। ওরা একটু আজকে না হয় গপ্পোতেই বিভোর থাকুক। তার চেয়ে বরং  ভালো হয় আমি বাবা আঁখি বুজে ঘুমিয়ে নেই। দু’ নয়ন ভরে সমু্দ্রের ঢেউের মতো ঘুম যেনো টলমল করছে। রাত তো অনেক হলো বড্ড ঘুম পেয়েছে এবার।

কিছু ঘন্টা গপ্পো করার পর, হঠাৎ মনে প্রশ্ন জাগা দিয়ে উঠলো। আরে এটা কি হলো! কবিতা? রাত কাটিয়ে কখন যে গপ্পে, গপ্পে সকাল হয়ে গেল বুঝতেই তো পারলেম না। আরে বাহ্ কবিতা দেখ দেখ জানালার ফাঁক দিয়ে, ওই যে গাছের মগ ডালে ভোরের কোকিলা গুলো সুরে সুরে ছন্দে মেতে জোড়া ধরে কিচিরমিচির আওয়াজে মুগ্ধ করে দিল যে সকাল বেলাটা। ওদিকে আবার উঁকি মেরে দেখি মা তো কাঁথা মুড়িয়ে পা গুটিয়ে নাক ডেকে ভো ভো শব্দে ঘুমে চৈতন্য। থাক, মাকে ঘুম থেকে আর না ডাকাই ভালো। জাগা পেলে তো আবার দু কথা শুনাবে। যাক বাবা ভালোই হলো শেষটা।  কাটলো তাহলে আজকের মতো গপ্পোর আসরটা তাই না কবিতা? দেখলে তো এই হলো গিয়ে, কবিতা আর কবির মধ্যে  হাজারো স্বপ্ন ঝুলির কৃতী।