শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে যন্ত্রণায় জীবন কাটাচ্ছেন নাজিম উদ্দিন

মোঃ নাঈম মিয়া,ভৈরব(কিশোরগঞ্জ)প্রতিনিধি: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় শরীরের বিভিন্ন অংশে স্প্লিন্টারের যন্ত্রণায় জীবন কাটাচ্ছেন কিশোরগঞ্জের ভৈরবের কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের আকবরনগর (নয়াহাটি) গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিন মেম্বারের ছেলে নাজিম উদ্দিন ।
স্প্লিন্টারের সেই যন্ত্রণা নিয়ে এখনও বেঁচে আছেন তিনি। অসহ্য ব্যথায় কাতর হয়ে দুই বার অপারেশন করতে হয়েছে তাকে। ডাক্তার বলেছিল আবারও অপারেশন করতে হবে, কিন্তু অর্থাভাবে আর অপারেশন করা সম্ভব হয়নি।’
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। আহত হন কয়েকশ। তাদেরই একজন নাজমুল হাসান নাজিম। এখনো তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে- গ্রেনেড হামলায় ছিন্নভিন্ন মরদেহ, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা হাত পা, রক্ত স্রোত, কানে ভেসে আসা আর্ত চিৎকার। সে দিনের ভয়াবহতার স্মৃতি মনে হলে এখনো কেঁদে ওঠেন তিনি।
নিজ বাড়িতে বসে অনেক দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কথাগুলো বলেন নাজিম উদ্দিন। পরিবারে মা, স্ত্রী আর তিন সন্তান নিয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটছে তার। শরীরে এখনো অসংখ্য স্প্লিন্টার রয়ে গেছে তার, এজন্য আরও কয়েকটি অপারেশন করা প্রয়োজন। কিন্তু আর্থিক অভাব অনটনে অপারেশন করতে পারছেন না বলে জানান তিনি
ঘটনার দিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন ২২ জন এবং আহত হন কয়েকশ। তিনি আওয়ামীলীগ কর্মী প্রিয় নেত্রী আইভি রহমানের ওপর গ্রেনেড পড়লে তাকে বাচাঁতে এগিয়ে যান। এসময় একটু সামনে গেলেই নিজের শরীরের পা ও বুকে গ্রেনেড পড়ে তিনিও গুরুতর আহত হন। পরে লোকজন তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। এরপর আওয়ামীলীগ নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের পিয়ারলেস হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। তিন মাস চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসেন তিনি। তখন ডাক্তাররা বলেছিলেন শরীরে থাকা আরও স্প্লিন্টার অপসারণ করতে পরবর্তী সময়ে আরও দুই একবার অপারেশন করতে হবে। কিন্তু অর্থের অভাবে এখনো অপারেশন করতে পারছেন না জানালেন তিনি।
ভাগ্যক্রমে সেদিন বেঁচে গেলেও তিনি এখনো পুরোপুরি সুস্থ না হওয়াই শরীরে স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা নিয়ে দুর্বিসহ দিন কাটাচ্ছেন। এখনো প্রতিদিন তার ঔষধ খেতে হয়। চিকিৎসার জন্য ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে তিনি সহায় সম্বল হারিয়েছেন। পরিবার নিয়ে অনেক দুঃখে কষ্টে দিন কাটছে তার।
নাজিম দুঃখ বলেন ‘সরকার এখন আর আমাদের খবর রাখে না। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হয়েছে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে। এই মামলায় ১৯ জন আসামীর মৃত্যুদণ্ড ও ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। কিন্তু আজও মামলায় রায় কার্যকর হয়নি। আমি বেঁচে থাকতে মামলার রায় কার্যকর হয়েছে দেখে যেতে চায়।