শিবসা নদীর তীরে গড়ে ওঠা সামাজিক বনায়ন বিনোদন প্রেমীদের কাছে হতে পারে পর্যটন কেন্দ্র

মোঃ মনিরুল ইসলাম, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি : খুলনার পাইকগাছায় শিবসা নদীর চরভরাটি জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ঘন সামাজিক বনায়ন। অপরূপ সৌন্দর্যের এই বন যেন হাতে আঁকা ছবির মতো। বিকেল হলেই দর্শনার্থীদের ভীড় জমে। অপরূপ সৌন্দর্যম-িত জায়গাটি ঘিরে হতে পারে বিনোদন পার্ক বা পর্যটন কেন্দ্র। শিবসা নদীর পাড়ে সামাজিক বনায়নে লাগানো হয়েছে গোলপাতা, কেওড়া, উড়া, কাঁকড়া ও গেওয়াগাছ। দেখলে মনে হয় এ জেন এক মিনি সুন্দরবন।

পাখির কিচিরমিচির শব্দ ভেসে আসে বন থেকে। এ দেখে মনে হয় সুন্দরবনের একটি অংশ। বন কর্মকর্তারা জানান, নদীভাঙন রোধ, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে এলাকা রক্ষা, সরকারি জমি অবৈধ দখলদারমুক্ত রাখা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পাখির আবাসস্থল গড়ে তোলা, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য ওই বনায়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থানীয়দের নিয়ে গঠন করা হয়েছে বাতিখালী চর বনায়ন সমিতি। উপজেলার লতা, সোলাদানা, দেলুটি ও গড়ুইখালী ইউনিয়নে বিভিন্ন সমিতি এই বন দেখাশোনা করে ।

বাতিখালী সমিতির সভাপতি জি এম এম আজহারুল ইসলাম বলেন, নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা দখলে নিতে থাকেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। তাই ২০১০ সালে প্রশাসনের সহযোগিতায় নদীর ধারে গড়ে তোলা হয় ওই বন। উপজেলা বন কর্মকর্তা আবুল বাশার বলেন, পাইকগাছা উপজেলার উপকূলীয় এলাকাটি নদী দিয়ে বেষ্টিত, কিন্তু নদীগুলো ধীরে ধীরে চর পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আর চর পড়া সরকারি জমি দখল করে নিচ্ছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। তাঁরা সেখানে ঘের করে মাছের চাষ করার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে জমিগুলো দখলমুক্ত রাখতে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় ওই বনায়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

আবুল বাশার আরও বলেন, শুধু শিববাটির চরে নয়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জেগে ওঠা চরে এমন বনায়ন করা হয়েছে প্রায় ৫৫ হেক্টর। এর মধ্যে সোলাদানা ইউনিয়নের ভ্যাকটমারী ও পাটকেলপোতা গ্রামে সাড়ে ২৩ হেক্টর, লতা ইউনিয়নের দক্ষিণ হাঁড়িয়া গ্রামে ১২ হেক্টর, দেলুটি ইউনিয়নের দেলুটি গ্রামে সাড়ে ১৪ হেক্টর এবং পাইকগাছা পৌরসভা এলাকার সাড়ে ৫ হেক্টর জমিতে ওই বনায়ন গড়ে তোলা হয়েছে। বেতবুনিয়া চর বনায়ন সমিতির সভাপতি শহীদ হোসেন বলেন, দচরভরাটি জায়গা অনেকেই দখল করে মাছের চাষ করছেন। অনেকেই আবার ইজারা গ্রহণের নাম করে ৩০ থেকে ৪০ বিঘা জমি দখলে রেখেছেন। বাকি জমিতে বনায়ন করেছি। ‘লতা ইউনিয়নের সভাপতি গৌতম রায় বলেন, দপ্রশাসনের সহযোগিতায় সমিতির সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করে নদীর চরে বনায়ন করেছি। এই বনে গোলপাতা ও কেওড়া গাছ ভালো হয়েছে। কিছু মানুষ নিজেদের জমি দাবি করে বনটিকে তছরুপ করছে। তা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নিরসন হয়েছে। পাইকগাছা-কয়রা সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, পাইকগাছা পৌর সদরে তেমন কোনো পিকনিক স্পট নাই। ইতিমধ্যে আমি দর্শনার্থীদের বসার বেঞ্চের জন্য ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, সুন্দরীগাছ না থাকলেও ওই বনগুলো সুন্দরবনের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে। বনের প্রকৃতি এমন হয়েছে, বোঝাই যাবে না এটা সুন্দরবনের অংশ নয়।