কুড়িগ্রাম খামারবাড়ি থেকে জেনারেটর চুরির সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবীতে কৃষকদের মানববন্ধন

মোঃ বুলবুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) থেকে অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর চুরি ও আত্মসাতের প্রতিবাদে এবং চুরির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবীতে মানববন্ধন করেছেন কৃষকরা। মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় কুড়িগ্রাম খামারবাড়ি অফিসের সামনে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন করে কুড়িগ্রামের পাঁচ শতাধিক কৃষক-কৃষাণী।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন-কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রব সরকার রাজু, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক মমিনুর রহমান মমিন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল কাদের, কুড়িগ্রাম পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলর সহিরন বেগম, চাষী নূরনবী সরকার, কৃষক শামীম আহমেদ, রেজাউল করিম রেজা প্রমুখ।

কৃষক রেজাউল করিম রেজা, শামীম আহমেদ ও নুরন্নবী সরকার বলেন, আমরা বিভিন্ন সুত্র ও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানতে পারি খামারবাড়ি থেকে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পুরোনো জেনারেটর চুরি হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে ১০/১২ জন কৃষক উপপরিচালক শামসছুদ্দিন এর সঙ্গে দেখা করি। তখন উপপরিচালক শামসছুদ্দিন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন জেনারেটর চুরি ও আত্মসাতের ঘটনা সত্য। জড়িতদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার আশ্বাস দেন তিনি। কিন্তু এখন দেখছি কর্তৃপক্ষ জেনারেটর চুরির ঘটনা ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত।

মানববন্ধনে বক্তারা খামারবাড়ি ক্যাম্পাস হতে চুরি যাওয়া জেনারেটর অবিলম্বে পুনরুদ্ধার না করলে এবং চুরির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় না আনলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের নিকট প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন আন্দোলনকারীরা।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের জুন মাসে কুড়িগ্রাম অফিসের সাবেক উপপরিচালক আব্দুর রশিদ (বর্তমানে অবসরে) ও গাড়িচালক জহুরুক হক সহ কয়েকজন অসৎ কর্মচারীর যোগসাজশে জেনারেটরটি বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ ওঠে। প্রমাণ মেটাতে অফিসের সিসি ক্যামেরা বন্ধ রাখাসহ জেনারেটরের নথিপত্র সম্বলিত ফাইলও সরিয়ে ফেলা হয়। জেনারেটরের কক্ষ থেকে আলামত আড়াল করতে কক্ষটি একজন কর্মচারীকে বসবাসের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।

বিষয়টি প্রকাশ হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে অরেকটি ছোট জেনারেটর রেখে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ নিয়ে কয়েকজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও সংক্ষুদ্ধ কৃষক পরবর্তী উপপরিচালক ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে অভিযোগকারীদের কুড়িগ্রাম থেকে বদলি করা হয়। তদন্তে জেনারেটর চুরির সত্যতা মিললেও শেষ পর্যন্ত বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন জেলার কৃষকরা।

কুড়িগ্রাম খামার বাড়ির সাবেক পিপিএম মোঃ মোতালেব বলেন, আমি ১৯৮৯ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কুড়িগ্রাম খামার বাড়িতে কর্মরত ছিলাম। আমি নিজের চোখে জেনারেটরটি বহুবছর দেখেছি। বিশাল আকৃতির উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটরটি রাখার জন্যই খামার বাড়িতে জেনারেটর রুমটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
ড্রাইভার জহুরুলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জেনারেটর গায়েবের সকল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলেও জানান তিনি।

খামারবাড়ির বর্তমান উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, আমি ছুটিতে আছি। আমার অফিসের সামনে জেনারেটর হারানোর বিষয়ে মানববন্ধন সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। তবে কিছুদিন আগে তিনি এই প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন, জেনারেটর হারানোর বিষয়টি জানামাত্র আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাঁর এই মন্তব্যেও জেনারেটর চুরির সত্যতা প্রকাশ পায়।