৭ বার স্থান পরিবর্তন করেও বাঁচতে পারছেন না গ্রামের মানুষ, শৈলকুপায় গড়াই নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে চাষের জমি ও ভিটেবাড়ি

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় গড়াই নদী আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। ক্রমাগত ভাঙ্গনে বিত্তশালী শত শত পরিবার যাযাবর জীবন যাপন করছেন। ভিটেবাড়ি ও চাষের জমি হারিয়ে নিমিষেই মানুষ পরিণত হচ্ছে সহায় সম্বলহীন। যে হাতে মুঠো ভরে সাহায্য দিত অন্যকে, সেই হাত এখন সাহায্যের জন্য হাত বাড়ায়।

সরেজমিন তথ্য নিয়ে জানা গেছে শৈলকুপার সারুটিয়া, ধলহরচন্দ্র ও হাকিমপুর ইউনিয়নের নদী পাড়ের গ্রামগুলোতে এখন আতংক বিরাজ করছে। শৈলকুপার বড়ুরিয়া থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত দুই কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ফাটল ধরেছে। হাকিমপুর ইউনিয়নের মাদলা ও খুলুমবাড়িয়া, ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের কাশিনাথপুর, মাজদিয়া, উলুবাড়িয়া, নতুনভুক্ত মালিথিয়া, চরপাড়া ও লাঙ্গলবাঁধ বাজার ঝুকির মুখে পড়েছে। রাতদিন সমানতালে ভাঙ্গছে গড়াই নদী। মানচিত্র বদলের পাশাপাশি ঘর, বাড়ি ও চাষের জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

কৃষ্ণনগর গ্রামের আব্দুল মালেক মন্ডলের টিনের চৌরি ঘর ছিল, মাঠে ১০ বিঘা চাষের জমিও ছিল। এগুলো এখন তার কাছে শুধুই স্বপ্ন। ভীটাবাড়ি আর চাষের জমি সবই চলে গেছে গড়াই নদীর গর্ভে। এখন থাকেন অন্যের জমিতে। একেকবার ঘর ভেঙ্গেছে, আর বাঁচার জন্য নতুন করে ঘর বেঁধেছেন। সাতবার বসতবাড়ির জায়গা করেছেন।

একই গ্রামের আব্দুর রহিম মন্ডল জানান, তিনি বসতবাড়ির জায়গা পাল্টেছেন ৬ বার। তারও ৮ বিঘা জমি ছিল। পাঁকা পোতার টিনের চৌরি ঘর ছিল। বাড়িতে গরু-ছাগল ছিল। যা হারিয়ে এখন অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন। তারও সবকিছু চলে গেছে এই গড়াই নদীতেই।

এই অবস্থা ঝিনাইদহ শৈলকুপা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের উত্তরপাড়ার। যে পাড়াতে ৪০ টি পরিবার বসবাস করতেন, এখন সেখানে আছেন ৫ টি। বাকিরা নদী ভাঙ্গনে সব হারিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। অনেকে ভিটাবাড়ি হারিয়ে যাবাবরের মতো জীবন কাটাচ্ছেন। যারা এখনও আছেন তারাও নদী ভাঙ্গনের ঝুকিতে।

আবু তালেব জানান, উত্তরপাড়ায় বসবাস করতেন আইন উদ্দিন, আলিম উদ্দিন, আব্দুল হাকিম, জোয়াদ আলী, আবু কালাম মন্ডল, সিরাজ উদ্দিন, উজ্জল আলী, আল্লাল উদ্দিন, রবিউল ইসলাম, আবু সাঈদ, শহিদুল ইসলামসহ প্রায় ৪০ টি পরিবার। যাদের মধ্যে এখন আব্দুল মালেক, আব্দুর রহিম, আবু তালেব, আশরাফুল ইসলাম ও হাসান আলীর পরিবার রয়েছে। বাকিরা নদী গর্ভে সব হারিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

নদী পাড়ের বান্দিরা জানান, এবছর যে পরিমানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে তাতে যে স্থানে তারা আছেন সেখানেও থাকতে ভয় পাচ্ছেন। রাতে ঘুমানোর পর মাঝে মধ্যে ভয়ে জেগে ওঠেন। মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, তাদের মসজিদটি ছিল কৃষ্ণনগর গ্রামের মাঝে। এখন চলে গেছে নদীর পাড়ে। মসজিদটিও ভেঙ্গে পড়ার আশংকায়। তিনি আরো জানান, উত্তরপাড়া শেষ হয়ে গেছে, এবার মাঝেরপাড়া নদী গর্ভে চলে যাবে। এখনই স্থায়ী বাঁধ না দিলে গোটা গ্রামই বিলিন হবে।

এ ব্যাপারে সারুটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক জানান, কৃষ্ণনগর গ্রামের মানুষগুলো বাঁচাতে হলে এখনই স্থায়ী বাঁধ প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন, কিন্তু লাভ হয়নি। আর উপজেলা সহকারী ভুমি কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম শীল জানান, বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড দেখেন।

আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের শৈলকুপা শাখা কর্মকর্তা বিকর্ণ দাস জানান, ঝিনাইদহ অংশে ২০ কিলোমিটার গড়াই নদী রয়েছে। গত বর্ষা মৌসুমে বড়–রিয়া এলাকায় কিছু কাজ করিয়েছেন তারা। এছাড়া নদী পাড়ের মানুষগুলো রক্ষায় বড়–রিয়া, কৃষ্ণনগর ও লাঙ্গলবাঁধ এলাকার ২৩৫ কোটি টাকার ৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মান কাজের একটা প্রাক্কলন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এটা অনুমোদন পেলে তারা দ্রতই কাজ শুরু করবেন বলে জানান।