৭০ বছর পর কলাবাগানে ১৬ একর জমির মালিক

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর কলাবাগানে কাগজে কলমে সরকারের অধিগ্রহণ করা ১৬ একর জমির মালিকানা ৭০ বছর পর বুঝে পাচ্ছেন মালিকরা; যা দীর্ঘদিনের জটিলতার অবসান করবে।

বুধবার সচিবালয়ে ধানমণ্ডি মৌজার অধিগ্রহণ করা জমির জটিলতা নিরসন সংক্রান্ত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এসব জমি ‘অবমুক্ত’ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

রাতে মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাজধানীর মধ্যে এসব জমি মালিকরা বা তাদের ওয়ারিশরা দীর্ঘ দিন থেকে ভোগ দখল করলেও আইনি জটিলতার কারণে এতদিন ধরে খাজনা দিতে পারছেন না বা হস্তান্তর করতে পারছেন না।

এ কারণে তারা আনুষ্ঠানিক কিংবা অর্থনৈতিকভাবে মূল্যবান এসব জমি ঠিকঠাক মতো ব্যবহারও করতে পারছিলেন না। এখন সরকারি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া থেকে ‘অবমুক্ত’ হলে তাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

ভূমিমন্ত্রী অবমুক্ত প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে করতে এবং প্রতারক ও দালালরা যেন মালিকদের হয়রানি করতে না পারে, সেদিকে নজর রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশও দিয়েছেন।

বৈঠকে কলাবাগান এলাকার ১৪ দশমিক শূন্য ৪৬ একর জমি অবমুক্ত করার পাশাপাশি আরও দুই দশমিক ৮৬৫৪ একর জমির মধ্যে যেসব জমি বর্তমানে মালিকপক্ষের দখলে আছে সেগুলোও অবমুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী।

এর ফলে সরকারি কাজের জন্য কলাবাগানে অধিগ্রহণ করা কিংবা অধিগ্রহণের জন্য নির্দেশিত কিন্তু ব্যক্তির নামে রেকর্ড করা বা দখলে থাকা এসব জমির মালিকানা আগের মালিকের কাছে ফেরত যাবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

১৯৪৮-৪৯ সময়কালে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসভবন নির্মাণে গণপূর্ত বিভাগের (তৎকালীন সিঅ্যান্ডবি) জন্য ধানমণ্ডিসহ আটটি মৌজায় মোট ৪৭২ দশমিক ৬৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

পরে ১৯৫৩ সালের ৮ জানুয়ারি গেজেটের মাধ্যমে অধিগ্রহণ চূড়ান্ত হয় এবং জমির দখল হস্তান্তরিত হয়।
কিন্তু গণপূর্ত বিভাগ ধানমণ্ডি মৌজার সিএস ৬৭ নম্বর দাগের অধিগ্রহণ করা ১৬ দশমিক ৮৭ একর জমির মধ্যে ১৬ দশমিক শূন্য ৬ একর জমি কোনো সময় নিজেদের দখলে নেয়নি।

দীর্ঘদিন ধরে জমির আগের মালিক বা ওয়ারিশ বা অন্যান্য সূত্রে পাওয়া তাদের অংশীদাররা এ জমিতে বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের মাধ্যমে ভোগ দখল করছেন।

এরপর ১৯৬৮ সালে সরকার ভূমি মালিকদের উচ্ছেদে নোটিশ করলে তারা এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের রায় পান।

তবে কাগজে কলমে অধিগ্রহণ থাকায় গত ৭০ বছর ধরে জমির মালিকরা জমির খাজনা খারিজ বা হস্তান্তর করতে পারছেন না।

এর মধ্যে ১৪ দশমিক শূন্য শূন্য ৪৬ একর জমি সিএস, এসএ, আরএস এবং মহানগর জরিপে ব্যক্তির নামে এবং দুই দশমিক ৮৬৫৪ একর জমি সিটি জরিপে গণপূর্ত বিভাগের নামে রেকর্ড হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ রয়েছে।

জমির মালিকরা এ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে ২০১৮ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেন।

প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদের আসলে মন্ত্রণালয়কে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেয়।

এর প্রেক্ষিতে গত বছরের ১ মার্চ ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় এ জটিলতা নিরসনে চার সদস্যে কমিটি গঠন করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বুধবার অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় কমিটির প্রতিবেদনসহ ঢাকা জেলা প্রশাসকের বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ ও অন্যান্য সংস্থার মতামত পর্যালোচনার পর নির্দেশ দেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

সভায় সিটি জরিপে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নামে রেকর্ড করা দুই দশমিক ৮৬৫৪ একর জমির মধ্যে গণপূর্ত বিভাগের দখলে থাকা অংশ ছাড়া অবশিষ্ট জমি অবমুক্ত করার নির্দেশও দেন।

সভায় ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব (অধিগ্রহণ) মুহাম্মদ সালেহউদ্দীন, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক (ভূমি রেকর্ড) মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব শওকত হোসেন, ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলামসহ ভূমি মন্ত্রণালয় এবং গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।