৫ বছর পর আজ নোয়াখালী জেলা আ’লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন :

বদিউজ্জামান তুহিন, নোয়াখালী থেকে : আজ বুধবার দীর্ঘ ৫ বছর পর নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এনিয়ে এখন পুরো জেলা শহর মাইজদীতে এখন সাজসাজ রব। চার দিকে উৎসবমুখর পরিবেশ। সভাপতি পদে গুরুত্ব না দিয়ে সেক্রেটারী পদে লড়তে অবস্থান নিয়েছেন জেলার বর্তমান সেক্রেটারী একরামুল করিম চৌধুরী এমপি ও নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র ও মাইজদী শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদ উল্যা খাঁন সোহেল। জেলা শহরে সাজ সাজ রবের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ও আতংক। ২০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে ঘিরে সাধারণ সম্পাদক পদে দু’গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। । সম্মেলনস্থল শহীদভুলু স্টেডিয়ামে এবং শহরের প্রধান সড়কের দুই পাশে ঢেকে ফেলা হয়েছে রঙ্গিন বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুনে। শহরের বহুতল ভবনগুলোতে নজরকাড়া আলোকসজ্জা এবং দুই শতাধিক তোরণ নির্মিত হয়েছে জেলার প্রধান সড়কগুলোতে। এসবই বাহ্যিক, কিন্তু সম্মেলনে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখছে সম্ভাব্য প্রার্থীরাই। এক্ষেত্রে পুরো সম্মেলনে উত্তাপ ছড়িয়েছে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীতা। বিশেষ করে নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যা খান সোহেল সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হলে পুরো জেলায় সরব আলোচনা চলে। এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষে তাঁদের অনুসারীরা প্রচারণা চালালেও প্রকাশ্যে কোন মন্তব্য করতে চাননা দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ। মুখে কলুপ এঁটেছেন জেলার সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, সাবেক ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাদের অনেকেই। এককথায় বক্তব্য হচ্ছে- অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। আবার কেউ বলছেন রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। প্রার্থীতাও পরিবর্তন হতে পারে। অপরদিকে প্রার্থীদের সাথে কাউন্সিলরদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা ও তৃণমূলে পথসভা, মতবিনিময় সভাসহ নানান দৌড়ঝাপ চলছে। পর্দার আড়ালেও কেউ কেউ সক্রিয় রয়েছেন পুরোনো ক্ষোভের বুঝাপড়া করতে। এবারের সম্মেলনের প্রথম পর্ব হবে নোয়াখালী শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে এবং দ্বিতীয় অধিবেশন কাউন্সিল হবে শিল্পকলা একাডেমিতে। আগামি ৩ বছরের জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের জন্য ৪৮৫ কাউন্সিলর তাঁদের মতামত প্রদান করবেন। তবে এবারের সম্মেলনের মতো অতীতে কখনোই নেতাকর্মীদের এতোটা চাঙ্গা দেখা যায়নি। সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিশেষ অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসিম কুমার উকিল এমপি। সভাপতিত্ব করবেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আলম সেলিম। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সম্মেলনে সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আ ন ম সেলিম, হাতিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ৩ বারের এমপি আলহাজ্ব মোহাম্মদ আলী এবং সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী এমপি, নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদ উল্যা খান সোহেল, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন। তবে; শেষ মুহুর্তে প্রার্থীতার পরিবর্তনও হতে পারে। একরামুল করিম চৌধুরী এমপি ফেসবুকে নিজের ওয়ালে গত ১১ নভেম্বর দেয়া এক পোস্টে উল্লেখ করেন- “যে যেভাবে প্রার্থী হোক তবে আমি আমার সভাপতি সেলিম ভাইকে সম্মান করি, তিনি সভাপতি পদে প্রার্থী হবেন, তাঁকে সভাপতি পদে প্রার্থী রেখে আমি সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছি, ইনশাআল্লাহ।” এটি বর্তমান কমিটির পক্ষে প্রচারণা হিসাবে দেখছেন সবাই। কেউ আবার বলছেন কেন্দ্রের গ্রীন সিগন্যালের বিষয়। এর আগে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীতা ঘোষণা করেন নিজ আইডিতে। তাঁর পক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন অনুসারীরা। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যা খান সোহেল সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হলে সম্মেলনের আমেজে ভিন্নতা আসে। তাঁর পক্ষে প্রচারণায় সক্রিয় হয়ে ছাত্রলীগের দায়িত্বপালনকালে পুরো জেলায় সক্রিয় থাকা সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। সাংগঠনিক সক্ষমতার বিষয়টি প্রচারণায় সবচেয়ে বেশী প্রাধান্য পাচ্ছে তাঁর পক্ষের নেতাকর্মীদের। বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের দায়িত্বপালন, হামলার শিকার হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা ও কারা নির্যাতনের বিষয়টিও সামনে আনা হচ্ছে। সম্মেলন পরিচালনার দায়িত্বে থাকায় সরাসরি তাঁর পক্ষে প্রচারণা তুলনামুলক কম। শেষ পর্যন্ত তিনি একরামুল করিম চৌধুরীকে সমর্থন করে যাচ্ছেন। সহিদ উল্যা খান সোহেল বলেন, সম্মেলনে নেতাকর্মীরা অনেক উৎফুল্ল। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন ঠিকই কিন্তু কাউন্সিলরাই আগামি সময়ের জন্য নেতা নিবাচনে মতামত প্রদান করবেন। তবে; সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেটিই হবে এনিয়ে এখন পুরো জেলা শহর মাইজদীতে এখন সাজসাজ রব। চার দিকে উৎসবমুখর পরিবেশ চূড়ান্ত। দায়িত্ব পেলে বিগত সময়ের সাংগঠনিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দলের জন্য কাজ করতে চেষ্টা করবেন। এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন বলেন- সস্মেলনকে ঘিরে পুরো জেলায় এখন উৎসবমুখর পরিবেশ নেতাকর্মীদের মাঝে। এটি ঢাকা ছাড়া কোথায় দেখা যায়নি। প্রার্থী হয়েছেন ঠিকই, তবে; দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ১০টি সাংগঠনিক থানার ৪৮৫জন কাউন্সিলর আগামি তিন বছরের জন্য যাকে দায়িত্ব দিবেন তিনিই দায়িত্ব পালন করবেন বলে এডভোকেট শাহীন উল্লেখ করেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মাইজদী শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে পানি সম্পদ উপমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম এমপি, এক সংবাদ সম্মেলনে শান্তিপূর্ণ এবং পরিচ্ছন্ন সম্মেলন করতে ব্যত্যয় প্রকাশ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী-৩ আসনের এমপি মামুনুর রশিদ কিরণ, ১ আসনের এমপি এইচ.এম.ইব্রাহীম, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও তমা গ্রুপের কর্ণধার আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক, নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।