৫১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল তিন দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: উন্নত জীবনের আশায় চাকরির খোঁজে এবং উচ্চ শিক্ষা নিতে বাংলাদেশ থেকে পাড়ি জমিয়েছিলেন সাইপ্রাস, গ্রিস ও ফ্রান্সে। সম্প্রতি ইউরোপের তিন দেশ থেকে ৫১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে একটি বিশেষ ফ্লাইটে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।

ফেরত যাওয়াদের মধ্যে রয়েছেন ফ্রান্স থেকে ২১ জন, সাইপ্রাস থেকে ১৬ জন এবং গ্রিস থেকে ১৪ জন। ফ্রান্সের ২১ জনের মধ্যে কয়েকজনের ইউরোপের বৈধ কাগজপত্র ছিল। তারপরও তাদের জোর করে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ফেরত আসা বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, ফ্রান্সস্থ দূতাবাসের অসহযোগিতার কারণেই তাদের এই পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে। তারা ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা খরচ করে উন্নত জীবনের আশায় বাংলাদেশ থেকে পাড়ি জমিয়েছিলেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। তারা প্রতিনিয়ত রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছিলেন। এ নিয়ে ফ্রান্সের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে চলেছে নানা আলোচনা সমালোচনা।

অভিজ্ঞদের মতে, ফ্রান্সে কাগজবিহীন বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হয় খুবই কমই। সাধারণত বড় কোনো অপরাধ না করলে দেশে পাঠানো হয় না। আগে কোনো অনিয়মিত বাংলাদেশিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে প্যারিসের বাংলাদেশ দূতাবাসে নিয়ে আউট পাস চাইত। তখন দূতাবাসের পক্ষ থেকে তদন্তের কথা বলে সময় চাওয়া হতো। আর এ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন উপায়ে আইনজীবীর মাধ্যমে তাকে ছাড়ানো হতো।আর এখন ডিটেনশন সেন্টারে গিয়ে বাংলাদেশিদের লিস্ট করে আউট পাস দিয়ে দেশে ফেরত পাঠাতে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ দূতাবাস।

এ ব্যাপারে ফ্রান্স আওয়ামী লীগের প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, এখানকার দূতাবাসের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। তারা শহীদ মিনার উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে থাকে না। ওই দিন তারা পাকিস্তানের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলে। বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে আসে না। ইদানীং যা করছে তা খুব দুঃখজনক। যথাসম্ভব প্রবাসীদের সহায়তা করা উচিত ছিল। যতবেশী প্রবাসী দেশে ফেরত যাবে, ততেই আমাদের দেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের একটা প্রভাব পড়বে।

কমিউনিটি নেতা সালেহ আহমদ চৌধুরী বলেন, দেশের চরম সংকটে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে সরকারের পাশে থাকে সব সময়। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সই বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। বর্তমানে উল্লেখযোগ্য হারে কমছে রেমিট্যান্সপ্রবাহ। বৈধপথে প্রবাসী আয় বাড়াতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। বিভিন্ন দেশের দূতাবাস রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ানো নিয়ে সভা সেমিনার ও প্রবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছে। আর আমাদের দূতাবাস রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ানো তো দূরের কথা, উল্টো প্রবাসীদের হয়রানি করছে। আমরা চেষ্টা করেছিলাম, ফেরত যাওয়া প্রবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর। কিন্তু দুঃখজনক, দূতাবাস থেকে তাড়াতাড়ি আউট পাস ইস্যু করায় তাদের এই পরিণতি ভোগ করতে হলো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কমিউনিটি নেতা বলেন, ফ্রান্সে আমার ৩০ বছর হলো। দূতাবাসের এমন প্রবাসী বিদ্বেষী আচরণ আগে কখনো দেখিনি। দূতাবাসের একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে আজ ফ্রান্স বাঙালি কমিউনিটি দ্বিধাবিভক্ত। দূতাবাসের দুর্নীতি বিরুদ্ধে যেই কথা বলে, তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। যার জন্য আমরা প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারি না।