হেরেও জিতলেন নিপুণ!

বিনোদন প্রতিবেদক

শুক্রবার শেষ হয়ে গেল বহু নাটকীয়তা এবং উত্তজনায় ভরা চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ১৭তম নির্বাচনের ভোট। ভোররাতে হল ফলাফল ঘোষণা। তাতে দেখা গেল, নিজেদের নতুন অভিভাবক অর্থাৎ সভাপতি হিসেবে একসময়ের জনপ্রিয় নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে বেছে নিয়েছেন চলচ্চিত্র শিল্পীরা। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের ওপরই ফের আস্থা রেখেছেন তারা। আলোচিত-সমালোচিত এই অভিনেতা টানা তৃতীয়বারের মতো জয় পেয়েছেন।

অথচ সাধারণ সম্পাদক পদে এবার শুরু থেকেই আলোচনায় ছিলেন চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার। দীর্ঘদিন ধরে জায়েদ খানের বিরুদ্ধে শিল্পীদের ছিল নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। গত দুই মেয়াদে সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি দেড় শতাধিক শিল্পীর ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন বলে শোনা যায়। জায়েদের এ কাজে নাকি সায় ছিল সভাপতি মিশা সওদাগরের।

তাই নির্বাচনের আগে এফডিসিতে আসা অনেক শিল্পীকে বলতে শোনা যায়, তারা এবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন কাউকে চান। এরপর থেকে অনেকেই ধারণা করেছিলেন, এবার সভাপতি পদে ইলিয়াস কাঞ্চন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে নিপুণ আক্তার জয়ী হবেন। সেই ধারণা আধা সত্যি হয়েছে। সভাপতি পদে ইলিয়াস কাঞ্চন জিতলেও জায়েদ খানের কাছে ১৩ ভোটে হেরে গেছেন নিপুণ। তিনি ভোট পেয়েছেন ১৬৩টি। বিজয়ী প্রার্থী জায়েদ খান পেয়েছেন ১৭৬ ভোট।

তবে ভক্ত-সমর্থক থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র পাড়ার সকলের প্রশংসায় ভাসছেন নিপুণ। সকলেই বলছেন, হেরেও জিতে গেছেন এই চিত্রনায়িকা। কারণ, তিনি এবারের শিল্পী সমিতির নির্বাচনটা পুরোপুরি জমিয়ে দিয়েছিলেন। ইলিয়াস কাঞ্চনসহ পুরো প্যানেলকে সাজাতে তার অগ্রণী ভূমিকা নজর কেড়েছে সবার। নিপুণের সাংগঠনিক দক্ষতা প্রশংসা পাচ্ছে শিল্পী সমাজে। আগামীতে তিনি যে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত, এবারের নির্বাচন যেন সেই বার্তাই দিয়ে গেল।

অর্ধ যুগ ধরে নিপুণ অভিনয়ের বাইরে। তিনি ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তার পরও শিল্পীদের খোঁজখবর সবসময়ই রেখেছেন। করোনাকালীন সময়ে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেক শিল্পীকে অর্থ ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। এছাড়া শিল্পীদের যেকোনো অনুষ্ঠানেও তিনি হাজির থেকেছেন সবসময়। পরবর্তীতে বিগত কমিটির নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে যখন এফডিসিপাড়ায় উত্তেজনা চরমে, তখন তিনি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন।

তারই অংশ হিসেবে প্যানেল গোছাতে শুরু করেন নিপুণ। প্রথমে তিনি সভাপতি পদে প্রস্তাব দেন ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক শাকিব খানকে, যিনি এর আগে দুই দফায় শিল্পী সমিতির সভাপতি ছিলেন। মাঝে জোর গুঞ্জনও উঠেছিল যে, শাকিব-নিপুণ প্যানেল গঠন করে নির্বাচনে আসছেন। কিন্তু কিং খান সেই গুঞ্জনকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে জানিয়ে দেন, শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে তার কোনো আগ্রহই নেই। এর পরই ইলিয়াস কাঞ্চনের দারস্থ হন নিপুণ।

মাস খানেক আগে ফের গুঞ্জন ওঠে, নিপুণের প্যানেল থেকে ইলিয়াস কাঞ্চন সভাপতি পদে লড়তে চলেছেন। গুঞ্জন সত্যি করে কাঞ্চনও গণমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে দেন, তিনি সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন। এও জানান, নিপুণের অনুরোধেই তিনি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরপর নায়িকা এক এক করে রিয়াজ, ফেরদৌস, অমিত হাসান, নিরব, ইমন, সাইমন, শাহনূর, কেয়া ও পরীমনিদের দের মতো তারকাদেরও সংগঠিত করেন। গড়ে তোলেন শক্তিশালী একটি প্যানেল।

কাজেই, নতুন সভাপতি হিসেবে ইলিয়াস কাঞ্চন যে খুব শিগগির শিল্পী সমিতির চেয়ারে বসতে চলেছেন, তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন নিপুণ আক্তার। এমনটাই মত চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের। তিনি পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন। এমন একজন অভিভাবকের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে চেয়েছিলেন, যিনি শিল্পীদের আগলে রাখতে পারবেন। ছোট-বড় বিভেদ করে দূরে সরিয়ে দেবেন না। নিপুণ সেই পরীক্ষায় ভালোভাবেই উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে রায় সবার। আক্ষেপ শুধু তিনি কমিটিতে থাকতে পারলেন না।

 

তবে সাধারণ সম্পাদক পদে টানা তিন বার জয়ী জায়েদ খান জানিয়েছেন, তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিপুণকে সঙ্গে নিয়েই শিল্পীদের উন্নয়নে কাজ করবেন। ভোররাতে ফলাফল ঘোষণার পর সাংবাদিকদের কাছে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে এ কথা জানান জায়েদ। অভিনেতা বলেন, তিনি (নিপুণ) তো শিল্পীদের জন্য কাজ করতেই নির্বাচনে এসেছিলেন। তাই আমার নতুন সভাপতি, নতুন কমিটি এবং নিপুণকে সঙ্গে নিয়েই আমি কাজ করব।’

জায়েদ আরও বলেন, ‘আমিও শিল্পী নিপুণও শিল্পী। শুধুমাত্র নির্বাচনের জন্য আমাদের দুটি প্যানেল দিতে হয়েছিল। তাছাড়া আমাদের মধ্যে ব্যক্তিগত কোনো রেষারেষি নেই। আমরা গতকাল পর্যন্ত একে অন্যের প্রতিযোগী বা প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলাম। আজ থেকে সবাই এক। যারা জিতেছেন, যারা হেরেছেন সবাই সমান। আমরা একসঙ্গে শিল্পীদের জন্য কাজ করতে চাই।’

২০০৬ সালে ‘রত্নগর্ভা মা’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রেখেছিলেন নিপুণ। ২০১৫ সালে তাকে শেষ দেখা যায় ‘আপোষহীন’ নামে একটি ছবিতে। পরের বছর রাজধানীর অন্যতম অভিজাত এলাকা বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউতে নিজ উদ্যোগে ‘টিউলিপ নেইলস অ্যান্ড স্পা’নামে একটি প্রসাধনী ও লাইফস্টাইলকেন্দ্রীক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন নায়িকা। গত কয়েক বছর ধরে সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই তার ব্যস্ততার অন্যতম জায়গা।