হারিয়ে যাবে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু জিম্বাবুয়ে?

এ্রই আমার দেশ ডেক্স : বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবথেকে বড় বন্ধু কে? উত্তর একটাই। জিম্বাবুয়ে। এক সময়ের প্রচন্ড প্রতাপশালী দল। টেস্টে যারা ছিল বিশ্বের অন্যতম সেরা। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট এখন মহাসঙ্কটে৷ একটা দেশের ক্রিকেট বোর্ড সাসপেন্ড হয়ে যাওয়া মানে বিরাট আশঙ্কার ব্যাপার। দুর্নীতিমুক্ত একটি স্বচ্ছ ও স্বাধীন ক্রিকেট বোর্ড পুনর্গঠনে দেশটিকে আইসিসি ও অন্যান্য শক্তিশালী ক্রিকেট বোর্ডগুলোর এখানে সর্বাত্মক সহায়তা করা উচিত৷ সেই সাথে বর্ণপ্রথা বিলুপ্তিকরণের জন্য আইসিসির কঠোর হওয়া উচিত।
আমাদের দুঃসময়ে এই জিম্বাবুয়েই আমাদের সাথে সিরিজ খেলতে অনীহা দেখালে আমাদের ক্রিকেট-স্বপ্ন শুরুতেই যে হোঁচট খেত, সেটা ভুলে গেলে চলবে না। আমাদের কূটনৈতিকভাবে যেমন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের পাশে দাঁড়াতে হবে, তেমনি তাদের সাথে নিয়মিত হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে সিরিজ খেলে তাদের ক্রিকেটটাকে মাঠে রাখতে হবে। দুঃসময়ের বন্ধুদের আশা করি ভুলে যাবে না বিসিবি। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট বিলুপ্ত হয়ে গেলে ক্রিকেটের আরেকটি ঐতিহ্যও হারিয়ে যাবে কালের গর্ভে। কেনিয়া, কানাডা, বারমুডার পথ যদি জিম্বাবুয়েও ধরে, তাহলে ক্রিকেটের বিশ্বায়নের স্বপ্নটা যে বাস্তবে রূপ নেবে না, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না।আমাদের চেয়ে যোজন-যোজন ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও আমাদের সাথে নিয়মিত হোম এবং অ্যাওয়ে সিরিজ খেলতে কখনোই দ্বিধা করতো না যে দলটি, তার নাম জিম্বাবুয়ে। হারতে হারতে খাদের কিনারায় চলে যাওয়া বাংলাদেশকে কথিত এলিট দলগুলোর সাবেক ক্রিকেটাররা সুযোগ পেলেই তির্যক কথা শোনাতে ছাড়তো না। সেখানে অন্যপাশে ছিল জিম্বাবুয়ে। যাদের সাথে বাংলাদেশের ক্রিকেটের গল্পটা জড়িত ওতপ্রোতভাবে।১৯৮০ সালে স্বাধীনতা পেয়ে রোডেশিয়া থেকে জিম্বাবুয়েতে পরিণত হওয়া দেশটি ১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপে প্রথম খেলার সুযোগ পায়। প্রথম আসরে এসেই পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেয়, সেই আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে চেপে ধরে। যদিও কপিল দেবের ১৭৫ রানের দানবীয় ইনিংসের কারণে সেখানে জয়বঞ্চিত থাকতে হয় তাদের। তবু তারা ক্রিকেটে নিজেদের আগমনী বার্তা ভালোভাবেই জানিয়ে দেয়।এরপর প্রতিটি বিশ্বকাপেই খেলে তারা। বড় কোনো সাফল্য না পেলেও নিজেদের শক্তিমত্তার স্বাক্ষর নিয়মিত রেখে যায় দারুণভাবেই। নিয়মিত ভালো খেলার ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সালে নবম দেশ হিসেবে টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন করে জিম্বাবুয়ে। রাজনৈতিক কারণে অন্য ৮টি টেস্ট দলের মধ্যে শুধু ইংল্যান্ডই তাদের বিরোধিতা করে। বাকি দলগুলো সম্মতি জানায়। টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়ে প্রথম টেস্টেই ভারতকে চমকে দেয় তারা, জয়ের কাছাকাছি এক বীরোচিত ড্র করে বাকি দলগুলোকে সতর্কবার্তা দেয় শুরুতেই।ক্রিকেটের কুলীন পরিবারের যোগ দেওয়ার পর এই জিম্বাবুয়েই ছিল বাংলাদেশের উদাহরণ। মাত্র দশ বছরের মধ্যে সমীহ করার মতো এক দল হয়ে উঠেছিল জিম্বাবুয়ে। দুর্দান্ত সব খেলোয়াড়, দারুণ রসায়ন মিলিয়ে দারণ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল তারা। হিথ স্ট্রিক, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, হেনরি ওলোঙ্গা, নিল জনসন, অ্যান্ডি ব্লিগনট কিংবা অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলরা ছিলেন বাংলাদেশের জন্য অনুপ্রেরণা। বাংলাদেশ ক্রিকেট আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হামাগুড়ি থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টার সময় বেশির ভাগ দল বাংলাদেশের সঙ্গে খেলতে অনাগ্রহী ছিল। সে সময়ে জিম্বাবুয়ে বাড়িয়ে দিয়েছিল সহযোগিতার হাত।টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির পর বাংলাদেশকে আতিথ্য দেওয়া কিংবা সঙ্গ দেওয়ার সবটুকু কাজই করেছে জিম্বাবুয়ে। শ্রীলঙ্কা ছাড়া অন্য কোনো দেশ বাংলাদেশকে জিম্বাবুয়ের মতো আতিথ্য দেয়নি। নিজ থেকে টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের টেস্ট খেলার নিশ্চয়তা ছিল তারা।২০০৩ বিশ্বকাপে রবার্ট মুগাবে নামক স্বৈরশাসকের দুর্নীতি ও ক্রিকেটে বর্ণবৈষম্যের প্রতিবাদে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ও হেনরি ওলোঙ্গা সেদিন কালো ব্যাজ পরে মাঠে নামেন। স্বাভাবিকভাবেই সরকারের রোষানলে পড়েন তারা, শুরু হয় জিম্বাবুয়ের অধঃপাতের সূচনা। ২০০৩-২০০৪ মৌসুমে মুগাবে সরকারের বিভিন্ন নীতির প্রতিবাদে অকস্মাৎ অবসর নিয়ে ফেলেন জিম্বাবুয়ের একঝাঁক ক্রিকেটার, যাদের মধ্যে গ্রেট হওয়ার মতো সম্ভাবনাময় প্লেয়ারও ছিলেন কেউ কেউ। এরপর থেকেই মূলত দলটির পতন শুরু হতে থাকে। দারুণ শক্তিশালী একটি দল পরিণত হয় ক্ষয়িষ্ণু শক্তির দলে। অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের হারিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ভুগতে থাকা দলটি ২০০৫ সালের শেষের দিকে নিজেদের টেস্ট খেলার অনুপযোগী মনে করে একসময় টেস্ট থেকেই স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে যায়।ছয় বছর নির্বাসনে কাটিয়ে ২০১১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে একসময় ফিরেও আসে তারা। কিন্তু আগের সেই জিম্বাবুয়ে আর ফিরে আসে না। টেস্ট তো দূরের কথা, ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টিতেও দলটি নেহায়েত সাধারণের চেয়েও নিচু মানের ক্রিকেট দলে পরিণত হয়। ২০০৭, ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপ খেললেও ভালো খেলেনি একদমই। ২০১৯ বিশ্বকাপ দশ দলে নেমে আসায় বাছাইপর্বের বাধাই পেরোতে পারেনি। নবাগত আফগানিস্তান বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করলেও জিম্বাবুয়ে রয়ে যায় অথৈ তিমিরেই।