হানিফ কি পিছিয়ে পড়ছেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। সৈয়দ আশরাফ যখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তখন অনেকটাই লাইম লাইটে ছিলেন মাহবুব উল আলম হানিফ। দুজনের মধ্যে এক ধরনের টিম ওয়ার্ক লক্ষ্য করা গেছে। সৈয়দ আশরাফ কথা বলেছেন কখনো-সখনো, মাঝে-মাঝে। আর নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংগুলো করেছেন মাহবুব উল আলম হানিফ। কিন্তু তিনবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক থাকার পরও তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য হতে পারেননি। আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে তিনিই একমাত্র যিনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ছিলেন কোন পদমর্যাদা ছাড়া, আবার এমপি হয়েছেন কিন্তু মন্ত্রী হতে পারেননি। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন থাকার পরও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামে অন্তর্ভুক্ত হননি। গত ৮-১০ বছরে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি যথেষ্ট পরিণত হয়েছেন। বিশেষ করে কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে তার একটা সুনাম হয়েছে। যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো কর্মী তৃণমূলের নেতারা ফোন করলে ফোন ধরা এবং তাদের সমস্যা সমাধান করার ক্ষেত্রে তিনি ইতিবাচক ভূমিকা ভূমিকা পালন করেন। এজন্য দলের ভেতর তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে তাকে অনেকটাই নিষ্প্রভ এবং এক ধরনের পর্দার আড়ালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কেন? তিনি কি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের দৌড়ে পিছিয়ে পড়ছেন?

চলতি বছর অথবা আগামী বছরের শুরুতে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে যে, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ কাউন্সিল অধিবেশন করবে এবং নতুন নেতৃত্ব আগামী নির্বাচনে কাজ করবে। সেই বিবেচনায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কে আসবেন, এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেই নানামুখী আলাপ-আলোচনা চলছে। আর সেই আলাপ-আলোচনায় এক সময় বেশ প্রথম দিকে ছিলেন মাহবুব উল আলম হানিফ। কিন্তু ক্রমশ রাজনৈতিক অঙ্গনে তাকে কম দেখা যাচ্ছে। রুটিন ওয়ার্ক বা দু’একটা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা-বিবৃতি ছাড়া খুব একটা সরব নেই তিনি। অথচ এক সময় তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের অন্যতম নিউক্লিয়াস। তাহলে কি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনি কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন? নাকি তিনি ইচ্ছে করেই নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন? এই প্রশ্নগুলো এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় হয়ে উঠেছে।

আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক সময়ে পঞ্চপাণ্ডবের উত্থান ঘটেছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সাংগঠনিক ইস্যুতে এই পঞ্চপাণ্ডবই এখন ত্রাতা বলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী মনে করছেন। জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, বাহাউদ্দিন নাছিম, মির্জা আজম এবং এস এম কামালের নেতৃত্বে এই পঞ্চপাণ্ডব নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের পরে আরও লাইম লাইটে এসেছেন। একইসাথে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট সমাধানের মধ্য দিয়ে নানকের গ্রহণযোগ্যতা আরো বেড়েছে। অনেকেই মনে করছেন যে, আওয়ামী লীগে এখন পঞ্চপাণ্ডব যুগের সূচনা হয়েছে। সেক্ষেত্রে মাহবুব উল আলম হানিফ কি পিছিয়ে পড়লেন? তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, মাহবুব উল আলম হানিফ একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত এবং তিনি রাজনীতিতে ধীরে ধীরে তার অবস্থান সংহত করছেন। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিভিন্ন সময় যাদের কথা গুরুত্ব দিয়ে বলা হয় বা যারা বেশি আলোচনায় থাকে তারা কখনোই সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন না। তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমুর দলের ভেতর তুমুল জনপ্রিয়, প্রভাবশালী হওয়ার পরও দলের সাধারণ সম্পাদক হতে পারেননি। আর সেজন্যই কি কৌশলগত কারণে মাহবুব উল আলম হানিফ একটু লো-প্রোফাইলে থাকছেন? এই প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় হয়ে উঠেছে।