হাজী সেলিমের জায়গায় কে আসবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেষ পর্যন্ত বিদায় নিতে হচ্ছে হাজী সেলিমকে। হাইকোর্ট একটি দুর্নীতির মামলায় তার দশ বছরের কারাদণ্ড বহাল রাখায় হাজী সেলিম এখন আর যে সংসদ সদস্য পদে থাকতে পারছে না সেটা মোটামুটি নিশ্চিত। এখন তার সংসদ সদস্যপদ বাতিলের আইনগত প্রক্রিয়া শুরু হবে বলেও দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্রে জানা গেছে। আর এর মধ্যেই আলোচনা উঠেছে যে, ঢাকার লালবাগে হাজী সেলিমের আসনে তার জায়গায় কে আসবে?

উল্লেখ্য যে, জ্ঞাত বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে মামলা করে। এই মামলায় তাকে নিম্ন আদালত দোষি সাব্যস্ত করে এবং দণ্ড দেয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাজী সেলিম বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করেন এবং হাইকোর্টে তার ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রাখে এবং গতকাল বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী একজন সংসদ সদস্য যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো অপরাধে দুই বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য দণ্ডিত হন তাহলে তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারাবেন। আর এ কারণেই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তিনি আর সংসদ সদস্য পদে থাকতে পারেন না বলেই আইনজ্ঞরা মনে করছেন। হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যেই তাকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত সাত এ তাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে এবং এই আত্মসমর্পণের পর তাকে জেলে যেতেই হবে। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন যে, দশ বছরের কারাদণ্ড বহাল থাকায় সংবিধানের ৬৬/২ (ঘ) অনুসারে সংসদ সদস্য পদে আর থাকতে পারবেন না হাজী সেলিম। যদি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করে হাজী সেলিম বেকসুর খালাস পান, তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ ফিরে পাবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় বহাল আছে ততক্ষণ পর্যন্ত তার সংসদ সদস্য পদ আর থাকবে না। আর এ কারণেই হাজী সেলিম এখন কী করবেন সেটা দেখার বিষয়।

হাজী সেলিমের ঘনিষ্ঠরা বলছেন যে, তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করবেন। কিন্তু আপিল বিভাগ যদি তার রায় স্থগিত না করে তাহলে তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারাবেন। হাজী সেলিম এখন কি করে সেটি যেমন আওয়ামী লীগ পর্যবেক্ষণ করছে, পাশাপাশি হাজী সেলিমের জায়গায় বিকল্প প্রার্থী হিসেবে কাকে দেওয়া যায় সে বিষয়টিও পর্যালোচনা করছে। হাজী সেলিম যদি শেষ পর্যন্ত সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারান, তাহলে তার পুত্র ইরফান সেলিম এ পদে আসতে পারেন। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে একজন নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে গ্রীণরোড এলাকায় মারধরের কারণে তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি নাটকীয়ভাবে ছাড়া পান। এ কারণে তাকে এমপি পদে দেওয়া ঝুঁকি আওয়ামী লীগ নিবে কিনা সেটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এই নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় নেতা। তিনি ২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৪ এর নির্বাচনে হাজী সেলিমের কাছে তিনি পরাজিত হন। আর ২০১৮ তে হাজী সেলিমই নির্বাচনে বিজয়ী হন। কাজেই হাজী সেলিমের বদলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনিই সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বলে বিভিন্ন সূত্র মনে করছে। তবে সাবেক ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনও এখন এই পদে আগ্রহী এবং তিনিও মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করবেন বলে বিভিন্ন সূত্রগুলো জানাচ্ছে। রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে থাকা সাঈদ খোকন মনে করছেন, এই আসনে যদি তিনি মনোনয়ন পান, তাহলে তিনি রাজনীতিতে পুনর্জীবিত হতে পারেন। আওয়ামী লীগের সামনে তিনটি পথ রয়েছে।

১. হাজী সেলিমের আইনগত চূড়ান্ত নিষ্পত্তি পর্যন্ত বিষয়টিকে দেখা এবং অপেক্ষা করা।

২. হাজী সেলিমের দায় দায়িত্ব না নিয়ে বা আইনগতভাবে হাজী সেলিমের সংসদ সদস্য পদের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত হয়, সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে একজন নতুন প্রার্থী খোঁজা।

৩. এই বিষয়টিতে আইনি প্রক্রিয়ায় যা হয় সেটির ওপরে ছেড়ে দেওয়া।