স্মরণকালের করুন দশায় কেরুজ চিনিকলে আখ মাড়াই মরসুমের উদ্বোধন আজ, বাঘা ৩ মন্ত্রীসহ ডজন খানেক কর্তা আসছেন

হারুন অর রশিদ-রাজু / মাহমুদ হাসান রণি, চুয়াডাঙ্গা থেকে

কেরুজ চিনিকল প্রতিষ্ঠার ৮৪ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে এবার সবচেয়ে কম আখ মাড়াইয়ের লক্ষমাত্রা নিয়ে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হবে কেরুজ চিনিকলের। গত মরসুমের ৭২ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে ২০২১-২২ আখ মাড়াই মরসুমের শুভ উদ্বোধন করতে আসছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী পরিষদের ৩ মন্ত্রী, সচিব ও করপোরেশনের চেয়ারম্যানসহ ডজন খানেক কর্মকর্তা।

এ উপলক্ষে বেশ কয়েকদিন ধরেই কেরুজ এলাকায় শুরু হয়েছে ঘষা-মাজা, চুন-কাম, রাস্তার খন্দ-খানা মেরামত, পরিস্কার-পরিচ্ছনতা ও সাজগোজ। মহা ব্যস্ততায় সময় কাটাচ্ছেন মিলের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সকলেই। কোন আয়োজনরই কমতি রাখা হচ্ছেনা। যেমন নতুন সাজে সাজানো হচ্ছে কেরুজ আঙ্গিনা, তেমনিভাবে বর্ণাঢ্য অভ্যর্থনায় নেয়া হচ্ছে ব্যাপক প্রস্তুতি। আগামিকাল শুক্রবার বিকাল ৩ টার দিকে কেরুজ চিনিকলের কেন কেরিয়ার চত্তরে শুধুমাত্র দোয়া মাহফিলের পরপরই ডোঙ্গায় আখ নিক্ষেপের মধ্যদিয়ে মাড়াই কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন আতিথিরা।

আজ ২৪ ডিসেম্বর দুপুর ১২ টার দিকে যশোর বিমান বন্দর থেকে গাড়ী বহর যোগে কেরুজ চিনিকলে আসছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ন, বানিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সি, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান অপু। এ ছাড়াও থাকবেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর।

সরকারের বাঘা তিন মন্ত্রীর কেরুজ পরিদর্শন; দর্শনা তথা এ অঞ্চলের মানুষের জন্য সুখবর

কোন প্রকার সভা-সমাবেশ ছাড়াই শুধুমাত্র দোয়া মাহফিলের মধ্যদিয়ে মিলের ডোঙায় আখ নিক্ষেপ করে মাড়াই মরসুমের উদ্বোধন করা হবে। বিকাল ৩ টার দিকে কেরুজ ট্রেনিং সেন্টার থেকে দেশের ১৫ টি চিনিকলের কর্মকর্তা ও আখচাষিদের সাথে ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন মন্ত্রী সচিব ও চেয়ারম্যান মহদোয়। পরপরই কেরুজ চিনিকলের বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করবেন। পরদিন দুপুরে ঢাকার উদ্দেশ্যে কেরুজ ত্যাগ করবেন অতিথিরা।

একটি সুত্র থেকে জানা গেছে, সরকারের বাঘা তিন মন্ত্রীর কেরুজ পরিদর্শন; দর্শনা তথা এ অঞ্চলের মানুষের জন্য সুখবর। পরিস্কারভাবে জানা না গেলেও কেউ কেউ বলছে, ডিস্টিলারী নতুন কিছু উৎপাদন কারখানা নির্মাণের ঘোষনা আসতে পারে মন্ত্রীদের মুখ থেকে। কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ি এ মরসুমে সর্বমোট ৪ হাজার ৬২৭ একর জমির আখ মাড়াই করা হবে। যার মধ্যে কেরুজ নিজস্ব জমির পরিমান মাত্র ৯৮৯ একর ও কৃষকের জমিতে আখ রয়েছে ৩ হাজার ৬৩৮ একর। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মাত্র ৪৪ দিনে ৫০ হাজার মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করা হবে সাড়ে ৩ হাজার মেট্রিকটন। চিনি আহরণের গড় হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক শূন্য।

অন্যদিকে এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমেই শুরু হয় ইক্ষু রোপন মরসুমের কার্যক্রম। এবারের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার একর জমিতে আখ রোপনের। এর মধ্যে চিনিকলের নিজস্ব জমির পরিমান ১৫৮৫ একর ও ৮৯১৫ একর জমি কৃষকের। গতকাল পর্যন্ত টানা সাড়ে ৩ মাসে আখ রোপন হয়েছে মাত্র ১১৯১ একর জমিতে। এর মধ্যে চিনিকলের জমি ৪৩৬ ও ৭৫৫ একর কৃষকের জমিতে আখ রোপন করা হয়েছে।

সুত্র জানিয়েছেন, বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অনীহায় ইক্ষু রোপনে ব্যার্থতার পরিচয় দিয়েছেন। ফলে সে বোঝা বইতে হচ্ছে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পর্ষদকে। তবে এবারের আখ মাড়াই মরসুমে কেরুজ চিনি কারখানায় লোকসানের বোঝা যে কি পরিমান ভারী হতে পারে তার হিসেব মিলাতেই হিমশিম খেতে হবে কর্তৃপক্ষকে এমনই ধারণা শ্রমিক-কর্মচারীদের। তারা বিষয়টিকে স্মরণকালের করুন দশা হিসেবে বর্ণণা করেছেন।