সেবা দিতে সহযোগী অধ্যাপক নিয়োগের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের সার্বক্ষণিক সেবা দিতে একজন সহযোগী অধ্যাপক পর্যায়ের চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি সব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করতেও বলা হয়েছে।

ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণুবাহক এডিস মশা নিধনে ওষুধ আমদানির বিষয়ে তিন দফা শুনানির পর বৃহস্পতিবার বিচারপতি তারিক-উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এছাড়া এডিস মশা নিধনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যকর ওষুধ আমদানি করতে দুই সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর এ বিষয়ে সব ধরনের সহায়তা করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং স্থানীয় সরকার বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

হাইকোর্টের নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট যাতে স্বল্পমূল্যে দ্রুততম সময়ে সরবরাহ করা হয় সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে। যারা ডেঙ্গুর লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে যাবেন, মানবিক দিক বিবেচনায় তাদের সবার চিকিৎসা বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে সংকট মোকাবেলায় সম্ভব হলে সরকারকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ওষুধ আমদানি করে দুই সিটি কর্পোরেশনসহ সব সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভাসহ দেশব্যাপী সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ১৮ আগস্ট হাইকোর্টের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিয়ে আদালতকে অবহিত করতে বলা হয়। এর আগে মশা নিধনে কার্যকর ওষুধ আনতে কত দিন লাগবে, তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। দুই সিটি কর্পোরেশন ও রাষ্ট্রপক্ষকে সুনির্দিষ্টভাবে তা হলফনামা আকারে জানাতে বলা হয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকালে আদালতের কাছে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আইনজীবী তৌফিক ইনাম টিপু। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সায়রা ফাইরোজ।

দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা আদালতে বলেন, মশার ওষুধ আনার দায়িত্ব সরকারের। ছিটানোর দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, মশা মারার ওষুধ সিটি কর্পোরেশনই আনবে। সরকার এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। তখন জরুরি পরিস্থিতিতে মশা মারার ওষুধ আনার বিষয়ে জানতে স্থানীয় সরকার সচিবকে তলব করেন হাইকোর্ট। তাকে দুপুর ২টার মধ্যে আদালতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। সে অনুযায়ী দুপুর ২টার দিকে হাইকোর্টে হাজির হন স্থানীয় সরকার সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল হাই ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানও তার সঙ্গে ছিলেন।

দুপুর আড়াইটায় দ্বিতীয় দফা শুনানিতে মশা মারার ওষুধ কে আনবে- সে বিষয়ে আদালতের প্রশ্নে হেলালুদ্দীন বলেন, অনেকের ধারণা, মশার যে ওষুধটি চলছে সেটা দিয়ে মশা মরছে না। ফলে ২৮ জুলাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এলজিইডি, দুই সিটি কর্পোরেশন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে, ওষুধ আনবে সিটি কর্পোরেশন। আমরা টাকাসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেব। আদালত তখন বলেন, তারা (সিটি কর্পোরেশন) তো বলছে ভিন্ন কথা। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন তো দরখাস্ত দিয়ে নির্দেশনা চাইছে যাতে আপনারা ওষুধ আনেন। এ পর্যায়ে উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদালতকে বলেন, নতুন ওষুধের নমুনা আনা হচ্ছে, ইতিমধ্যে তা দেশের পথে রয়েছে। আদালত তখন বলেন, আপনারা বলছেন তারা আনবে, আর তারা বলছে আপনারা আনবেন। সরাসরি আপনাদের আনতে অসুবিধা কি? একটা ক্রাইসিস পিরিয়ড চলছে। বলেন আপনারা (সরকার) আনতে পারবেন কিনা? উত্তরে সচিব বলেন, আমরা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সিটি কর্পোরেশন মিলে দ্রুত ব্যবস্থা করব। আদালত তখন বলেন, আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়বে। আমাদের জানান, জিটুজি (সরকার বনাম সরকার) পদ্ধতিতে আনা সম্ভব কিনা, আমরা আদেশ দেব। সচিব বলেন, উত্তর সিটি কর্পোরেশন নমুনা সংগ্রহ করেছে। যত দ্রুত সম্ভব ওষুধ আনার ব্যবস্থা করা হবে, ওষুধ আনার প্রক্রিয়া চলছে। এ পর্যায়ে আদালত বিকাল ৪টায় ওই সিদ্ধান্ত জানানোর নির্দেশনা দিয়ে শুনানি মুলতবি করেন। বিকাল ৪টায় তৃতীয় দফা শুনানিতে সচিব হেলালুদ্দীন বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, মশা মারার জন্য যে কীটনাশক আমদানি করতে হবে, তা উৎপাদিত হয় বেসরকারিভাবে। ফলে সরকারি পর্যায়ে বা জিটুজি পদ্ধতিতে তা আনা সম্ভব নয়। কাজেই দুই সিটি কর্পোরেশনকেই ওষুধ আমদানি করতে হবে। আমরা দুই সিটি কর্পোরেশনকে লাইসেন্স ও ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দিয়েছি। এরপরও যত ধরনের সহযোগিতা করা দরকার তার সবটুকুই করব ওষুধ আনার ব্যাপারে। এ সময় উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়, চীন থেকে তারা মশা মারার ওষুধের নমুনা (স্যাম্পল) আনার ব্যবস্থা করেছে। সেই স্যাম্পল বাংলাদেশের পথেই রয়েছে। এটা পরীক্ষা করে ব্যবহার উপযোগী কিনা- সেই অনুমোদন পেতে অন্তত ১৪ দিন সময় লাগবে।

আদেশের পর সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্ট আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট অর্থাৎ জিটুজি পদ্ধতির মাধ্যমে মশা মারার ওষুধ আমদানিতে অসুবিধা কোথায়। আমি বললাম, এটা আমার জানার দরকার। এজন্য আমাকে ১ ঘণ্টা সময় দিলেন। ১ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে আমি সব মহলের সঙ্গে ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। যেহেতু এটায় (ওষুধ) মানবদেহে কোনো প্রভাব আছে কিনা সেটাও আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দরকার। এটা পৃথিবীর কোনো দেশে সরকারিভাবে প্রসেস করা হয় না। বেসরকারি খাতে এটা প্রস্তুত করা হয়। সুতরাং, সিটি কর্পোরেশন হল একমাত্র প্রতিষ্ঠান মশা নিধনের জন্য। মন্ত্রণালয় হিসেবে সার্বিক সহযোগিতা করব। আমদানি করতে গিয়ে দূতাবাস, প্রয়োজনীয় অর্থ, জনবল যা যা দরকার সব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তা দেবে।