নিজস্ব প্রতিবেদক : সেই হিরণের হুংকারে বেলা বারোটার আগেই বন্ধ হয়ে গেল স্কুল। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী সকাল ১০.০০টা হতে বিকেল ৪.০০টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে ক্লাস হওয়ার কথা। কিন্তু বেলা বারোটার আগেই কেন বন্ধ হলো?
সে এক দাপুটে কাহিনি। যিনি তার গোটাজীবনেই নানা অঘটন-ঘটন-পটীয়সী। একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান হয়ে অস্ত্রসহ সন্রাসী হিসেবে আত্মসমর্পণ, বিয়েতে দা্ওয়াত না দেয়ায় সদল বলে বরযাত্রীদের দই খেয়ে সাবাড় করা, অশ্লীল গালাগালি করে দেশব্যাপি ভাইরাল হ্ওয়া, জনৈক এমপির ‘গুরু’ হিসেবে নিজেকে জাহির করে বাগাড়ম্বর করা, কখনো পীর-দরবেশের খাস মুরিদ সাজা -এসব কাহিনি ঝিনাইদহ জেলা ছড়িয়ে জাতীয় পত্র-পত্রিকার প্রায়শ:ই মুখরোচক খবর।
আরো খবর পড়ুতে ক্লিক করুন :
ধলেশ্বরী নদীর জমি দখলদারদের তালিকায় ঝিনাইদহ সদরের এমপি তাহজিব আলম সিদ্দিকী সমি
বর্তমানেও তিনি ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলার পোড়াহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। বাপ-দাদার দেয়া নাম শহীদুল ইসলাম হিরণ। এবারে আ্ওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি তার পটিয়সি কারিশমায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলা আ্ওযামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদটিও বাগিয়ে নেন। এবারে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার কথা নিজেই সকলকে জানান। তা্ও আবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আ্ওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থী হতে। কিন্তু তিনি কি জানেন?- জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার আ্ওয়ামী লীগের রাজনীতির সকল খবরাখবর তার নখদর্পণে?
যাইহোক, হিরণ শেষাবধি স্কুলের পেছনে লাগলেন কেনো? সেটাই আজকের খবর। ‘শিষ্য এমপি’ গুরুদক্ষিণা হিসেবে তাকে এই স্কুলের সভাপতি নির্বাচিত করার জন্য নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছেন।
স্কুলটির নাম মধুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলামের পুত্র মো: বদিরুজ্জামান। কিন্তু স্কুল কমিটির নব্য সভাপতি শহিদুল ইসলাম হিরণ শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা হজম সহ পূর্বাপর নানা কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় প্রধান শিক্ষককে স্কুল থেকে বিতাড়িত করা হয়। সঙ্গে জীবননাশের হুমিক তো রয়েছেই। এরপর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পান সভাপতির পছন্দের জনৈক শিক্ষিকা। এ বিষয়ে বদিরুজ্জামান ঝিনাইদহ সদর থানায় ডায়রী, দুর্নীতি দমন কমিশনে আবেদন করেন। দুনীর্তি দমন কমিশন তার আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসককে তদন্তের দায়িত্ব দেন। সেখানে তিনি সকল অনিয়মের প্রমাণাদি নিয়ে তার নিজের মতামত পেশ করেন। অন্যদিকে চাকরী ফিরে পাবার আশায় তিনি আদালতেরও দ্বারস্থ হন। মহামান্য আদালত শুননী শেষে বরিুজ্জামানকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনে বাধা না দেয়া এবং বকেয়াসহ নিয়মিত বেতন-ভাতাদি পরিশোধের জন্য সভাপতি শহিদুল ইসলাম হিরণকে নির্দেশ দেন।
আজকের ঘটনার শুরুই এখানে্শই, শেষ কোথায় আগামীতে জানা যাবে।
আদালতের আদেশ পেয়ে যথারীতি বদিরুজ্জামান প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের জন্য স্কুলে যান। হ-য-ব-ল ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা স্কুল বন্ধের ঘোষনা দেন। এ বিষয়টি তাৎক্ষণিক সাংবদিকদের মধ্যে জানাজানি হয়ে গেলে তারা ছুটে যান স্কুলে। জানাতে চাইলে সভাপতির পছন্দের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সাফ বলে দেন, ‘স্কুলের সভাপতির নির্দেশে স্কুল বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে আমাদের প্রতিবেদক জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তারা জানান- এক্ষুনি বিষয়টি টিএনও এবং ডিপিওকে জানানো হবে। এবং এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।