সুনামগঞ্জে স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম ও সংসদে পীর মিসবার বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড়

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃসুনামগঞ্জে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে অনিয়মের শেষ নেই। রোগীরা এখানে এসে প্রতিদিন বিড়ম্ভনা পোহাতে হয়। বেশীর ভাগ রোগী বাহির থেকে সংগ্রহ করতে হয় ঔষুধ। সদ্য সৎ ও নির্ভিক একজন সিভিল সার্জনকে পদায়ন করা হলেও ২০ দিনের মাথায় তাকে বদলী করে দেয়া হয়। হাসপাতালের সাথে জড়িত একটি সিন্ডিকেটের কারণে এমন অনিয়ম মাথাছাড়া দিয়ে উঠছে। এসবের প্রতিবাদে রাজপথে জনতা নেমে আসলেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। শেষ পর্যন্ত জাতীয় সংসদে একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে ধরেন সদর আসনের এমপি বিরোধী দলীয় হুইপ অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। এখন স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও সংসদে পীর মিসবাহ বক্তব্য লোকে লোকে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

জানা গেছে, সদর হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে একটি সিন্ডিকেট অনিয়মকে পুঁজি করে বাড়ি গাড়ীর মালিক হয়েছেন। এসব অভিযোগ বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রতিবাদকারীরা তুলে ধরেছেন। এমনকি স্বাস্থ্যখাতে সেবার মান নিয়ে ও আলোচনা সমালোচনা ঝড় উঠতো। জেলার বাসিন্দারা স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির প্রতিহত করার লক্ষে নিরপেক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে আসছেন। এদিকে স্বাস্থ্যখাতের মান ফিরিয়ে আনতে ডাক্তার কল্লোলকে সিলেট থেকে এনে সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন হিসেবে পদায়ন করা হয়। অদ্ভুত ব্যাপার হলো তিনি নিয়োগের পর অনিয়মের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করে বলে ছিলেন আমি হারাম খাই না। বাবা আমাকে টিউশিনি করে পড়িয়েছেন। আমার পরিবারে দুর্নীতির কংলক আসুক আমি সেটা চাই না। স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম তাড়িয়ে নিয়মের মধ্যে আনতে জেলাবাসীর প্রতি প্রতিশ্রæতিবদ্ধ হন। তার এ বক্তব্যের পরই সিন্ডিকেট চক্র নড়েচড়ে বসে। এবং তার বদলী নিশ্চিত করতে উঠে পড়ে লাগে ঐ চক্র। এমন সংবাদে হতাশ হয়ে পড়ে জেলার সেবা প্রার্থীরা। তারা বদলী ঠেকাতে নেমে আসে রাজপথে। মিছিল মিটিংয়ে উত্তপ্ত হয়ে রাজপথ। যেদিন হতাশ হয়ে সিভিল সার্জন সুনামগঞ্জ ছেড়ে যাচ্ছিলেন সেদিনও মুক্তিযোদ্ধাসহ আন্দোলনকারীরা তার গাড়ীর সামনে এসে পথ আটকে অনশন করতে থাকেন। সুনামগঞ্জবাসীর এত ভালবাসা দেখে সিভিল সার্জনের চোখে জল টলমল করেছিল। তবুও রাখা গেল না সৎ ও সজ্জন সিভিল সার্জনকে। আন্দোলন প্রতিবাদ কোন কাজে লাগেনি সুনামগঞ্জবাসীর। এসবের প্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত গত বুধবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে এমপি পীর মিসবাহ জনতার সাথে সংহতি প্রকাশ করে সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন। এসময় তিনি হাসপাতালের চিত্র উত্থাপন করতে গিয়ে বলেন, ৬২ জন
ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ১৬ জন। সদর হাসপাতালে এক্স-রে হয় না, আল্ট্রাসনো হয় না, পেথলজিস্ট নাই, রেডিওলজিস্ট নাই, কার্ডিয়লজিস্ট নাই ডাক্তার নাই, আছেটা কি। ভবন আর যন্ত্রপাতি সরবরাহ আছে। এতে জনগণের লাভ নাই। ভবন করলে ভবনের ঠিকাদারে লাভ হয়। যন্ত্রপাতি স¤প্রচার করলে লাভ হয় যন্ত্রপাতির ঠিকাদারের। তিনি বলেন, ডাক্তার পাই না। কয়েকদিন আগে একজন নতুন সিভিল সার্জনকে পদায়ন করা হয়েছিল। উনি এসে হাসপাতালে কিছু দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ২০ দিনের মাথায় তাকে বদলিও করা হয়েছে। আজব এক অদ্ভুত কারবার। যেখানে ২ বছর ধরে বলে বলে ডাক্তার পাইনা সেখানে পদায়নের ২০ দিনের মাথায় সিভিল সার্জনকে বদলি করা হয়। অদ্ভুত কারবার স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয়ের। সুনামগঞ্জসহ দেশের স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি জন্যে সংসদের সিনিয়র পার্লামেন্টিয়ারদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করে স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি তদন্ত করার দরকার বলে জানান তিনি।