সিটি কলেজে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী, দেশে খাদ্য সংকট নেই মজুদ করবেন না

দেশের মানুষকে অতিরিক্ত পণ্য না কেনার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা পর্যবেক্ষণ করছি যে, আতঙ্কিত হয়ে কিছু লোক অতিরিক্ত মাত্রায় খাদ্যদ্রব্য কিনে সংরক্ষণ করছে। তবে আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমাদের কোনো খাদ্য সমস্যা নেই। আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। তাই আতঙ্কিত হয়ে অতিরিক্ত খাদ্যদ্রব্য কেনার দরকার নেই।’

প্রধানমন্ত্রী শনিবার সকালে ঢাকা-১০ আসনে উপনির্বাচনে ভোট দেয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন। এ সময় তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন ও এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন সেখানে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ধানমণ্ডির ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অযথা আতঙ্কিত হয়ে বেশি করে পণ্য কিনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো গর্হিত কাজ। সবাইকে এ ধরনের অপতৎপরতা থেকে বিরত থাকতে হবে। নতুন করোনাভাইরাসের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ করতে না পারে সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং জনগণকে নজরদারি বাড়াতে হবে।’ সরকারপ্রধান জানান, এরই মধ্যে তিনি এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী, অর্থ সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে আগামী এক বছরের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য কেনার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। সুতরাং এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।’ তিনি বলেন, ‘সরকারি গুদামগুলোতে সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন গম ছাড়াও ১৭ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। এর পাশাপাশি বেসরকারি রাইস মিলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশস্য রয়েছে। তাই আমি সবাইকে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু খাদ্যদ্রব্য কিনতে অনুরোধ জানাই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভোক্তারা অতিরিক্ত নিত্যপণ্য কিনলে বাজারে চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। যাদের পর্যাপ্ত অর্থ আছে তারা একসঙ্গে অনেক পণ্য কিনতে পারেন। কিন্তু সাধারণ ও সীমিত আয়ের মানুষদের একসঙ্গে এত পণ্য কেনার সামর্থ্য নেই। কাজেই অন্যের কষ্ট বাড়ানোর কোনো অধিকার কারও নেই।’

একটি উদাহরণ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি টেলিভিশনে দেখলাম একজন বলছেন, তিনি ৩০ কেজি লবণ কিনেছেন। আমি জানি না তিনি এই লবণ কতদিনে খাবেন।’ তিনি বলেন, ‘এর আগে অনেকেই বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ কিনেছিল। তখন এর দাম বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু পেঁয়াজ পচনশীল হওয়ায় সেগুলো তাদের আবর্জনার স্তূপে ফেলতে হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও সতর্ক থাকতে হবে যাতে করে কেউ করোনা প্রাদুর্ভাবের অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ করতে না পারে। অতিরিক্ত পণ্য কিনে বাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা ঠিক হবে না। আমরা চাই সবাই স্বাভাবিক জীবনযাপন করুক। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আমাদের মাটি আছে, আমাদের সব আছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চীনে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পরপরই আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা তখন চীন থেকে ৩১৫ জন শিক্ষার্থীকে দেশে ফিরিয়ে আনি এবং কোয়ারেন্টিনে ১৪ দিন রাখার পর তাদের ছেড়ে দিই।’ তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে বিদেশ থেকে আগতদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। যদি কাউকে এই ভাইরাসে সংক্রমণ বলে সন্দেহ করা হয়, তবে তাকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা বিদেশ থেকে দেশে ফিরছেন তাদেরকে তাদের পরিবারের সদস্য ও অন্যদের নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই অন্তত ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগ ও আইইডিসিআর সতর্ক আছে এবং দেশে প্রাণঘাতী ভাইরাসটিকে নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা এসব পদক্ষেপ নিচ্ছি যাতে মানুষ সতর্ক থাকে এবং এ ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি যে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ভালো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কয়েকটি হাসপাতালও সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছি। করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগীদের সেখানে চিকিৎসা দেয়া হবে। আমরা সেসব হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সসহ কর্মরত অন্যদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করেছি। আমরা চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য মাস্ক ও পার্সনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) আমদানি ও তৈরি করছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার টেলিভিশন, বেতার ও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রাণঘাতী ভাইরাস সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করতে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি আশা করি দেশবাসী সরকারের নির্দেশনা মেনে চলবেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার জনগণকে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে এক স্থানে কয়েকজনের সমাগমকে নিষিদ্ধ করেছে। আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনেক অনুষ্ঠান বাতিল করেছি এবং এর মধ্য দিয়ে আপনারা বুঝতেই পারছেন যে, আমরা জনগণের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের প্রতি কতটা গুরুত্ব দিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একবারই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সুযোগ পেয়েছি এবং আমরা এমন একটি সুযোগ আর পাব না। তবুও আমরা জনগণের স্বার্থ ও কল্যাণের জন্য জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচি স্থগিত করেছি।’ তিনি বলেন, ‘এই ভাইরাস যাতে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে না পারে তার জন্য জনসমাবেশ ঘটে এমন কর্মসূচিও আমরা বাতিল করব।’

বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি আপনি অবাধে চলাফেরা করেন তবে আপনি, আপনার পরিবারের সদস্য এবং অন্য লোকরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। অতএব অন্যের জীবন বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া ঠিক নয় এবং আমি আশা করছি আপনারা এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন।’

শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষকে রোগ প্রতিরোধে মৌসুমি ফল খাওয়ার এবং যতদূর সম্ভব ঘরে থাকার পরামর্শ দেন। মহান আল্লাহ যাতে মানবজাতি, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও এ দেশের লোকদের এ ঘাতক ব্যাধি থেকে রক্ষা করে তার জন্য প্রার্থনা করার আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয় সংসদের ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে লোকরা ‘নৌকায়’ ভোট দেবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এই ভোটে জয়লাভ করব ইনশাআল্লাহ।’