সাতক্ষীরা পৌর নির্বাচনে ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে ভালবাসায় সিগ্ধ হলেন যারা

খান নাজমুল হুসাইন, সাতক্ষীরাঃ সাতক্ষীরা পৌরবাসি ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভালবাসার এক ইতিহাস গড়লো, আবারও মেয়র হিসেবে বেছে নিলেন বিএনপি প্রার্থী আলহাজ্ব তাছকিন আহমেদ চিশতিকে। দুই একটি বিচ্ছিন্ন এবং অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলেও দৃশ্যত: ভোট ছিল অবাধ, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ। সকাল আটটা হতে বিকাল চারটা পর্যন্ত সাইত্রিশটি কেন্দ্রে বিরামহীন ভোটগ্রহন চলে। প্রতিটি কেন্দ্রে বিপুল সংখ্যক আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য কোন ধরনের বিশৃংখলা সৃষ্টি হতে দেয়নি। সাতক্ষীরা জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা নাজমুল কবির স্বাক্ষরিত বেসরকারি ফলাফল ঘোষনায় তাছকিন আহমেদ চিশতি ধানের শীষ প্রতিক ২৫,০৮৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন, নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী নাছিম ফারুক খান মিঠু নারিকলে গাছ প্রতিক ভোট পেয়েছেন ১৩,২২১, আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের শেখ নাসেরুল হক পেয়েছেন ১৩,০৫০ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল হুদা জগ প্রতিকে ভোট পেয়েছেন ২,৮৮৮ ভোট, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন বাংলাদেশ হাত পাখা প্রতিক নিয়ে ডাঃ মোস্তাফিজুর রউফ পেয়েছেন ১৬৭৯ ভোট। সাতক্ষীরা পৌরসভার নির্বাচন ছিল যেমন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু তেমনি কৌতুহলময়। প্রতিক বরাদ্ধ হতে শুরু করে নির্বাচনে প্রচার প্রচারনার শেষ দিন পর্যন্ত কোথাও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বা নির্বাচনী আচরণ বিধি লাঙ্ঘনের বিষয় ছিল অনুপস্থিত। গতকাল সকাল ৮ টার পূর্বে কেন্দ্র গুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি শুরু হয়, ভোটারদের মধ্যে ভোটদানে ব্যাপক আগ্রহ ছিল লক্ষ্যনীয়। ভোটারদের ভোটকেন্দ্র মুখি করনের ক্ষেত্রে কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচেষ্টাও ছিল চোখে পড়ার মত। মেয়র প্রার্থীদের ন্যায় কাউন্সিলর প্রার্থীদেরও প্রচার প্রচারনার কোন ধরনের ঘাটতি ছিল না। এ নির্বাচনে উৎসবমুখর ভোটে, প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ শেষ হাসি হাসা নির্বাচিত কাউন্সিলরা হলেন ০১নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হলেন কায়ছারুজ্জামান হিমেল প্রতিক (স্কু ড্রাইভার) প্রাপ্ত ভোট ২০০৯, নিকটতম প্রতিদ্বন্দি ল্যাম্প প্রতিকের রশিদ হাসান চৌধুরী পেয়েছেন ১৮২০ ভোট,০২ নং ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন সৈয়দ মাহমুদ পাপা প্রতিক ডালিম প্রাপ্ত ভোট ৪৭৭২, নিকটতম প্রতিদ্বন্দি আহছানুল কাদির স্বপন পেয়েছেন ১৫৭৯ ভোট, ০৩ নং ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন আইনুল ইসলাম নান্টা প্রতিক ব্লাকবোর্ড প্রাপ্ত ভোট ২৫৮০, নিকটতম প্রতিদ্বন্দি ইব্রাহীম পেয়েছেন ১৫৬৪ ভোট, ০৪ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন কাজি ফিরোজ হাসান প্রতিক পাঞ্জাবী প্রাপ্ত ভোট ২৮১১, নিকটতম প্রতিদ্বন্দি শেখ আসাদ আহমেদ পেয়েছেন ১৪০৪ ভোট, ০৫ নং ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন শেখ আনোয়ার হোসেন মিলন প্রতিক পানির বোতল প্রাপ্ত ভোট ১৭২৬, নিকটতম প্রতিদ্বন্দি শাহিনুর রহমান পেয়েছেন ১৬১৪ ভোট, ০৬ নং ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন শেখ মারুফ আহমেদ প্রতিক ডালিম প্রাপ্ত ভোট ২৬৪৮, নিকটতম প্রতিদ্বন্দি শহিদুল ইসলাম পেয়েছেন ২৬৩৯ ভোট, ০৭ নং ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন কালু প্রতিক পানির বোতল প্রাপ্ত ভোট ৩২৩৮, নিকটতম প্রতিদ্বন্দি এসএম জাহানুর হোসেন পেয়েছেন ১৮২১ ভোট, ০৮ নং ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন শফিকুল আলম বাবু প্রতিক পাঞ্জাবী প্রাপ্ত ভোট ৪৫৪৯, নিকটতম প্রতিদ্বন্দি আনারুল ইসলাম রনি পেয়েছেন ৯৭৫ ভোট, ০৯ নং ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন শেখ শফিক উদ দৌলা সাগর প্রতিক উটপাখি প্রাপ্ত ভোট ৩৭৪৬, নিকটতম প্রতিদ্বন্দি জিল্লুর রহমান পেয়েছেন ৩২২৮ ভোট। সংরক্ষিত মহিলা আসন ১.২.৩নং ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন নুরজাহান বেগম প্রতিক জবা ফুল প্রাপ্ত ভোট ১১৮৮৫ ভোট, নিকটতম প্রতিদ্বন্দি জোসনা আরা পেয়েছেন ৫৮৫৮ ভোট, ৪.৫.৬নং ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন অনীমা রানী মন্ডল প্রতিক আনারস প্রাপ্ত ভোট ৫৪২৮, নিকটতম প্রতিদ্বন্দি ফরিদা আক্তার পেয়েছেন ৪১৮৯ ভোট, ৭.৮.৯নং ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন রাবেয়া পারভীন প্রতিক জবা ফুল প্রাপ্ত ভোট ৭০২৯, নিকটতম প্রতিদ্বন্দি ফারহা দিবা খান সাথী পেয়েছেন ৬৯৫৪ ভোট। শান্তিপূর্ণ ভোটে উৎসবের কিছুটা ছন্দপতন ঘটে রসুলপুর কেন্দ্রে। বহিরাগতদের হঠাৎ কেন্দ্রে প্রবেশ এবং দুই পক্ষের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটলে কেন্দ্রে উপস্থিত আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের তাৎক্ষনিক তৎপরতা বিশৃংখল পরিস্থিতির অবসান ঘটে। পরবর্তিতে আইন শৃংখলা বাহিনীর টহল দল উপস্থিত হয়। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় আহত হয় আগরদাড়ি ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান হবি। আরও দুই একটি কেন্দ্রে বিশৃংখলা সৃষ্টি কঠোর ভাবে রোধ করে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রতিটি কেন্দ্রে ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতি ছিল। কেন্দ্রের বাইরে প্রার্থীদের সমর্থকদের ভোটার সিলিপ বিতরন সহ ক্যাম্পিং ছিল চোখে পড়ার মত। দৃশ্যতঃ ভোটে ছিল উৎসবের উপস্থিতি প্রতিদ্বন্দি মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে সন্তোষ প্রকাশ করেন। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তাছকিন আহমেদ চিশতির বিপুল ব্যবধানে জয়ে কারন হিসেবে সাধারন ভোটারদের নিরব ভোটাধিকার আলোচনায়। প্রচার প্রচারনায় তিন প্রার্থীর মাঝে তুমুল প্রতিদ্বন্দিতার আভাস পাওয়া গেলেও ব্যাপক ব্যবধানের বিষয়টি আলোচনার শেষ নেই। বিগত পাঁচ বছরে তাছকিন আহমেদ চিশতি পৌরসভায় আগত পৌরবাসির সাথে সুন্দর ব্যবহার সর্বশেষ জেলা পর্যায়ের কয়েকজন নেতাকে বিএনপি হতে বহিস্কারের পর বিএনপি এবং বিএনপির সমর্থকদের মাঝে এমন ধারনা স্পষ্ট হয় যে বিএনপির প্রার্থীই চিশতি। আওয়ামীলীগ মনোনীত শেখ নাসেরুল হক অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন এবং সৎ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত কিন্তু ভোটের হিসাব নিকাশে শেষ পর্যন্ত তাছকিন আহমেদ চিশতিই জয়ী হলো। গতকাল রাতে পুনরায় নির্বাচিত মেয়র আলহাজ্ব তাছকিন আহমেদ চিশতি তার কামালনগরস্থ বাড়ীতে বিপুল সংখ্যক কর্মি ও সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, বিগত দিনের ন্যায় আগামীতেও আমি যেন পৌরবাসির সেবা করতে পারি এই দোয়া করবেন। তিনি কোন ধরনের আনন্দ মিছিল করা হতে বিরত থাকতে বলেন। মেয়র চিশতি আরও বলেন তিনি বিএনপি মনোনীত বিষয়টি যেমন সত্য এটাও সত্য তিনি সাতক্ষীরার পৌর মেয়র। সব দল, সব মতের সকলের মেয়র। পরাজিত মেয়র প্রার্থীরা কোন কষ্ট পান এমন কিছু না করতে দলীয় কর্মি ও সমর্থকদের আহবান জানান।