সাগরে জাহাজডুবি: ৪ মরদেহ উদ্ধার, সবার বাড়ি মাগুরায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
‘এমভি সুলতান সানজা’ ডুবে মৃত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের বাড়ি মাগুরা মহম্মদপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। এখন পর্যন্ত চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বঙ্গোপসাগরের বহির্নোঙরে লাইটারেজ ‘এমভি সুলতান সানজা’ ডুবির ঘটনায় চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কোস্ট গার্ড শুক্রবার সকাল ও বিকেলে মরদেহগুলো উদ্ধার করেছে। এখনও নিখোঁজ আছেন দুইজন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের কমান্ডার ক্যাপ্টেন কাজী শাহ্‌ আলম।

তিনি বলেন, “‘এমভি আকিজ লজিস্টিক-২৩ লাইটারেজের ধাক্কায় ‘এমভি সুলতান সানজা’ ডুবির ঘটনায় শুক্রবার চারটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো দুইজন নিখোঁজ রয়েছেন। কোস্ট গার্ড উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।”

বঙ্গোপসাগরের পতেঙ্গায় মঙ্গলবার বিকেলের এই দুর্ঘটনার পর তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

এদিকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে মাছ ধরার জাহাজ ‘এফভি মাগফেরাত’ ডুবির ঘটনায় এখনও নিখোঁজ আছেন দুইজন।

এই দুর্ঘটনাও ঘটে মঙ্গলবার। সেদিন জীবিত উদ্ধারের পর আহতদের হাসপাতালে নেয়া হলে পরদিন একজনের মৃত্যু হয়। উদ্ধার অভিযানে পাওয়া যায় ৫ জনের মরদেহ।

পতেঙ্গা জাহাজডুবে মৃত ও নিখোঁজদের বাড়ি মাগুরায়

‘এমভি সুলতান সানজা’ ডুবে মৃত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের বাড়ি মাগুরা মহম্মদপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। সেসব পরিবারে চলছে আহাজারি।

ওই ব্যক্তিরা হলেন, মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার মণ্ডলগাতি গ্রামের নূরুল হোসেন মোল্যার দুই ছেলে শিমুল ও জাহিদ, মো. খসরু বিশ্বাসের ছেলে মো. সুরুজ, গোলাম রসূল মোল্যার ছেলে নূর মোহাম্মদ, একই উপজেলার খলিসাখালি গ্রামের কামাল মোল্যার ছেলে মনির হোসেন এবং বাবুখালী ইউনিয়নের দাতিয়াদাহ গ্রামের রঘুনাথপুর পাড়ার আকরাম হোসেনের ছেলে নাজমুল হাসান।

উদ্ধার হওয়া চার মরদেহের পরিচয় এখনও শনাক্ত হয়নি। তবে একটি মরদেহ নাজমুল হাসানের বলে দাবি করেছেন তার বাবা আকরাম মোল্যা।

জাহাজে কর্মরত মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার যশোবন্তপুর গ্রামের রুবেল এবং খলিসাখালী গ্রামের রবিউল ইসলাম জাহাজডুবির পর সাঁতরে তীরে এসে পড়েন।

রুবেল বলেন, ‘আমরা পাথর নিয়ে বড় ট্রলারে করে কর্ণফুলির দিকে যাচ্ছিলাম। এ সময় পেছন থেকে একটি লাইটার জাহাজ আমাদের জাহাজে আঘাত করে।

‘সে সময় আমাদের জাহাজে মহম্মদপুর উপজেলার মোট ৮ জন ছিলেন। আমার সঙ্গে রবিউল তীরে উঠলেও অন্য ৬ জনের খবর পাইনি তখন।’

মন্ডলগাতি গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুর সবুর বলেন, ‘আমাদের গ্রামে শতাধিক মানুষ চট্টগ্রামে জাহাজ ও ট্রলারে কাজ করেন। কখনও এমন হয়নি যে পরপর একই এলাকার অনেকে মারা গেছে। তারা নিখোঁজ রয়েছে তিনদিন। মানে আমরা ধরেই নিয়েছি কেউ বেঁচে নেই। এখন তাদের মরদেহটি পেলেই আমাদের সান্তনা। আমরা অন্তত কবরটা দিতে পারি।’

বেঁচে ফেরা রবিউলের ভাই মনিরও নিখোঁজ। তাদের ফুপু নাজমা আক্তার বলেন, ‘আসছে জানুয়ারি মাসে মনিরের জন্য মেয়ে দেখার কথা ছিল। কত স্বপ্ন ছিল তার বিয়েতে আমরা আনন্দ করব। কিছু হলো না। রবিউল বেঁচে ফিরলেও মনিরের কোনো খবর পাইনি।’

কোস্ট গার্ডসূত্রে জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলোর মধ্যে একটি মনিরের বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি জাহাজটির সুকানি ছিলেন।

মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামানন্দ পাল বলেন, ‘চট্টগ্রামে দুটি জাহাজডুবির ঘটনা শোনার পরই আমরা সেখানকার প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। নিখোঁজ ও উদ্ধার হওয়াদের বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখছি।’