সাংবাদিক মইন উদ্দিন মনজুর অন্যরকম এক মহানুভবতার গল্প

নাজমুল ইসলাম মকবুল

সাংবাদিক মইন উদ্দিন মনজুর এক মহানুভবতার গল্প
নাজমুল ইসলাম মকবুল
রাত পৌনে ১১টায় সোসাল মিডিয়ায় ঢু মারতেই চোখ আটকে গেলো। আটকে যাবারই কথা। কারন লন্ডনের জনপ্রিয় ‘চ্যানেল এস’ এর সিলেটের ব্যুারো প্রধান খ্যাতিমান সাংবাদিক মইন উদ্দিন মনজু ভাইয়ের দর্শক নন্দিত ফেসবুক পেজ ভয়েস অফ সিলেট থেকে তাঁর নিজের উপস্থাপনায় করা ব্যতিক্রম একটি লাইভ।
২৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার। সিলেট মহানগরের বারুতখানায় স্বপ্ন শপ ও ডাচ বাংলা ব্যাংকের সামনে রোডের পাশে রাখা কয়েকটি ডাস্টবিন। সাধারনত: ডাস্টবিনের পাশ দিয়ে চলাচলের সময় শ্বাস নিঃশ্বাস বন্ধ করে কিংবা নাক চেপে ধরে ওই জায়গাটুকু দ্রুত অতিক্রম করতে দেখা যায় সকলকেই। কারন ডাস্টবিনে থাকা ময়লা আবর্জনা ও পচা বাসি পরিত্যক্ত খাদ্যদ্রব্যের দুর্গন্ধ সহ্য করা খুবই কঠিন। প্রায় সময় অনেকেই এর দুর্গন্ধ সহ্য করতে না পেরে বমি করতে কিংবা অসুস্থ হয়ে পড়তেও দেখা যায়।
নিজের মেয়ের জন্য কিছু একটা কিনতে এসে হঠাৎ ওই ডাস্টবিনের দিকে নজর পড়তেই চোখ আটকে গেলো সাংবাদিক মইন উদ্দিন মনজু ভাইয়ের। ক্ষুধার তাড়নায় একজন বয়স্ক নারী হন্তদন্ত হয়ে ডাস্টবিনের ভেতরে দুনু হাত ঢুকিয়ে তা থেকে পরিত্যক্ত উচ্ছিষ্ট ময়লা দুর্গন্ধ ও কর্দমাযুক্ত খাবার করছেন সংগ্রহ। তাও আবার জঠর জ্বালায় প্রায় মধ্য রাতে।
দৃশ্যটি দেখে কেঁপে উঠলো তাঁর মানবিক হৃদয়! নাড়া দিয়ে উঠলো অন্তরাত্মা! ভারাক্রান্ত হৃদয়ে অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি সেসময়! এসব দৃশ্য দেখলে বিবেকবান যে কারো হৃদয় নাড়া দেবার কথা। মায়ের বয়সী ওই মহিলাকে পরম মমতায় ডেকে নিয়ে প্রবেশ করলেন পাশের থাকা স্বপ্ন শপে। বললেন, আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য অন্তত ১৫ দিন চলার উপযোগি সব ধরনের বাজার সদাই নিজ হাতে বেছে বেছে পছন্দ করে করে নেন।
অবিশ্বাস্য! কিংকর্তব্যবিমুঢ়! ঝাপসা হয়ে এলো যেন ওই মায়ের চোখদুটো! এমন চমৎকার সারপ্রাইজ পাওয়ার জন্য প্রস্তুতও ছিলেন না ওই মা! অবস্থাদৃষ্টে মনে হলো তাঁর যেন বিশ্বাসই হচ্ছিলনা এসব! স্বপ্নতে ঢুকে যেনো স্বপ্নই দেখছেন আনমনা হয়ে! মুহুর্তের জন্য যেন চলে গেছেন অন্য এক জগতে, যেন স্বপ্নের এক রাজ্যে!
আচমকা এই ভালোবাসার বাস্তব প্রতিফলন দেখে স্বপ্ন শপের সকল কর্মকর্তা কর্মচারিরাও যেন হতবাক। এরপর যখন তিনি নিজে বিভিন্ন আইটেম বেছে বেছে ওই মায়ের হাতে দিচ্ছেন তখন মা যেন সম্বিত ফিরে পেলেন। চোখে গড়াতে লাগলো আনন্দাশ্রু। মুখে ফুটে উঠলো হাসির ঝিলিক। মুহূর্তে যেন আকাশের চাঁদ এসে ধরা দিলো ওই মায়ের হাতের মুঠোয়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল আইটেম। চাল ডাল পিয়াজ আদা রসুন মসল্লাপাতি মরিচ ধনিয়া হলুদ লবন পাচপোড়ন চাল পোলাওয়ের জন্য ছোট চাল আটা ময়দা তেল সাবান চা-পাতা চিনি চিকেন আপেল হুইল পাউডার সার্ফ এক্সেল থেকে শুরু করে বেছে বেছে ২৪টি আইটেম নেয়া হলো খুটিয়ে খুটিয়ে যথেষ্ট সময় নিয়ে। আলু দিতে ভুল করায় পাঁচ কেজি আলুর ব্যাগ নিয়ে আসা হলো ভেতর থেকে। ওই সময় দোকান বন্ধ করার জন্য কর্মকর্তা কর্মচারিরা সবকিছু গোছাচ্ছিলেন। তাদেরকে একটু সময় দেবার জন্য এবং বেছে বেছে ভালো আইটেমগুলো দেবার জন্য অনুরোধ করায় তারাও সহযোগিতা করলেন। বার বার ওই মাকে বলতে লাগলেন, আপনার আর কি কি দরকার। যা প্রয়োজন সবকিছু বেছে বেছে নেন। মহিলা ইতস্তত করছেন দেখে খুটিয়ে খুটিয়ে নিজেই বের করে দিলেন বিভিন্ন দরকারি আইটেম। যাতে কোন কিছু বাদ না যায়। শিতের আগমণী বার্তা টের পাওয়া যাচ্ছে তাই মুখে ব্যবহারের জন্য ভ্যাসলিনও দিতে ভুল করলেননা।
হর কিসিমের বাজার সদাইয়ে কয়েকটি ব্যাগ ভর্তি হয়ে যাওয়ায় বয়স্ক ওই মায়ের একার পক্ষে এসব নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বিধায় তাঁর থাকার জায়গা পর্যন্ত পৌছে দেবার জন্য একটি সিএনজি অটো রিকশা ভাড়া করে প্রায় সাত হাজার টাকার বাজার সদাই তুলে দিয়ে ড্রাইভারকে ভাড়া দিয়ে বললেন বাসায় পৌছার পর মালামালগুলি নামাতেও যাতে সহযোগিতা করেন।
এত্তোসব জিনিসপত্র যাকে দান করলেন তাকে এর আগে কোথাও দেখেনও নাই, চিনেনও না। কথা বলার এক পর্যায়ে তার হাল হকিকত বাসা বাড়ির ঠিকানা হলো জানা।
মনজু ভাইয়ের ভয়েস অফ সিলেট পেইজ থেকে লাইভে তখন রুদ্ধশ্বাসে দেশ বিদেশ থেকে দৃশ্যটি দেখছেন হাজার হাজার দর্শক। মন্তব্যে এমন অনন্য ও পূণ্যময় মানবিক কাজের তারিফ করার পাশাপাশি দোয়া করে কমেন্ট করছেন দর্শকরা।
উল্লেখ করা আবশ্যক যে, অনেকে বলবেন লাইভে এসব প্রচার না করেও তো তা দিয়ে দিতে পারতেন। আমরা জানি, বিভিন্ন সময় প্রচার না করে গোপনে দান খয়রাত করেও যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু স্মরণীয় এ মুহূর্তটিকে ফেসবুক লাইভে প্রচার করার ফলে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ দর্শক তা দেখে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই এ ধরনের কাজে আরও মনোনিবেশ করে সমাজসেবায় ও মানবিক কাজে অবদান রাখবেন। সমাজ হবে আরও উপকৃত, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। ফলে অনেক গরিব অসহায় দরিদ্র পরিবারও সহযোগিতা পেয়ে উপকৃত হবেন।
সাংবাদিক সমাজের অহংকার মনজু ভাই ব্যক্তিগতভাবে অনেক ভালো কাজ করার পাশাপাশি মিডিয়ার মাধ্যমে করে যাচ্ছেন অনেক অনেক কাজ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সেবামুলক সংস্থা প্রতিষ্ঠায় এবং চ্যারিটি কাজে তাঁর সহযোগিতা ইতিহাস হয়ে থাকবে। প্রতিদিনই বিরামহীনভাবে চ্যানেল এস ও ভয়েস অফ সিলেটের পক্ষ থেকে চষে বেড়াচ্ছেন সিলেটের বিভিন্ন এলাকা, পথ প্রান্তর। অসহায় দরিদ্রদের গৃহনির্মাণ চিকিৎসা সহায়তা বিবাহ সহায়তা কৃষিযন্ত্রপাতি কেনা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ও দিচ্ছেন। করে যাচ্ছেন না জানা না দেখা আরও অনেক সেবামুলক কাজ।
বিশ্বনাথে ওয়ান পাউন্ড জেনারেল হসপিটাল প্রতিষ্ঠায়ও রেখে যাচ্ছেন অনন্য অবদান। আছেন আমাদের সাথে এ মানবিক কাজে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি একজন সাহিত্যপ্রেমি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে সিলেট লেখক ফোরামের সতের বছরের ও মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্মের একুশ বছরের বিভিন্ন কার্যক্রম মিডিয়ার মাধ্যমে তুলে ধরে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন আমাদেরকে।
তাঁর মতো হৃদয়বান সমাজ হিতৈষিরা এসব মানবিক কার্যক্রম থেকে উৎসাহ পেয়ে এভাবে এগিয়ে আসলে সমাজের চিত্র পাল্টাতে আমাদের বেশি দিন সময় লাগবে না অবশ্যই।
এগিয়ে যান সাংবাদিক মইন উদ্দিন মনজু ভাই।

লেখক : নাজমুল ইসলাম মকবুল
সভাপতি, সিলেট লেখক ফোরাম