সব হারিয়ে নিঃস্ব ঝিলপাড় বস্তির কয়েক হাজার মানুষ

বিশেষ প্রতিবেদক: আগুনে পুড়ে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে মিরপুরের ঝিলপাড় বস্তির কয়েক হাজার মানুষ। ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়ায় এতগুলো মানুষের কোথায় ঠাঁই হবে তা এখনো অনিশ্চিত। যদিও তাদের ঘর নির্মাণ ও পুনর্বাসনের আশ্বাস মিলেছে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে।

ছোট-ছোট ঘরগুলোতেই সুখের ঘর বেঁধেছিলেন ন্যূনতম চাওয়া-পাওয়ার মানুষগুলো। তবে, ভয়াবহ আগুনে তাদের সাজানো-গোছানো শত-সহস্র স্বপ্নগুলো চোখের সামনে নিমিষেই শেষ। সামনের দিনগুলোতে কি করবেন এমন দুশ্চিন্তা সবার চোখে মুখে।

শুক্রবারের আগুনে পুড়ে গেছে প্রায় ৫শ’ ঘর। ছাই হয়েছে আসবাবপত্রসহ সবকিছুই। তবুও, ধ্বংসস্তূপে সব হারানো মানুষগুলো খুঁজে ফিরছেন অবশিষ্ট সম্বল।

বস্তিবাসীরা জানান, আসবাবপত্র দূরে থাক কাপড়-চোপড় নিয়ে বের হব সেই সুযোগও হয়নি। এমনকি নিত্য ব্যবহার্য কোনো কাপড়-চোপড়ও নেই।

নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বেশিরভাগ মানুষই দীর্ঘ দিন ধরে আবাস গড়েছিলেন এই ঝিলপাড় বস্তিতে। যদিও আগুনে পুড়ে আবারো খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হচ্ছে তাদের। নিজেদের দুরাবস্থার বর্ণনা দিয়ে বলেন, কোথাও থাকার কোনো জায়গা নেই। এখন খোলা আকাশের নিচে রাস্তার ওপরই রাত কাটাতে হচ্ছে। আগুনে সব পুড়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়ায় সরকারের সহযোগিতা কামনা করছেন বস্তিবাসী।

বস্তিবাসীরা আগুন লাগার কারণ হিসেবে বলছে, ফরিদ নামের এক ব্যক্তির বাসা থেকে এই আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হলে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই এখনো ঈদের ছুটি কাটাতে গ্রামে আছেন। আর বেশিরভাগ আশ্রয় নিয়েছেন পাশের ছয়টি স্কুলে। শনিবার সকালে, তাদের সান্তনা জানাতে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন।

বস্তিবাসীকে সান্তনা জানাতে এসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অগ্নিকাণ্ডের নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।

আর গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এ অগ্নিকাণ্ডকে উদ্দেশ্যমূলক বলে মন্তব্য করেন। সেই সাথে, অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

তবে, আগুনের সুত্রপাত সম্পর্কে এখনো কিছু জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৫ কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন দিবে তারা। ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি, কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন বিষয় তদন্ত করছে।’

এদিকে, ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি নির্মাণ ও তাদের পুর্নবাসনের আশ্বাস দিয়েছেন, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র। সেই সঙ্গে, ক্ষতিগ্রস্তরা যেন তিন বেলা খেতে পারে সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং সব ধরনের সহযোগিতা আশ্বাস দেন মেয়র।

শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে বস্তিটিতে আগুন লাগে। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনে, ফায়ার সার্ভিসের ২৪টি ইউনিট। এ ঘটনায় চারজন আহত হন।