সবাই এক হয়ে ভোটডাকাতদের বিদায় করি: ঐক্যফ্রন্ট

একাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভোটডাকাতি করে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ কাজ করেছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। রোববার বিকালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক বিক্ষোভ সমাবেশে ফ্রন্টের নেতারা এমন অভিযোগ করেন।

নির্বাচনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে ‘ভোটডাকাতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ’ করা হয়। এতে ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে শেষমুহূর্তে তিনি আসতে পারেননি বলে জানান নেতারা।

বিক্ষোভ সমাবেশের পর ফ্রন্টের নেতা ও জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে একটি মিছিল শুরু হলে পুলিশ কদম ফোয়ারের আগে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে মিছিলটি আটকে দেয়। এ সময় নেতাকর্মীরা সরকারের ভোটডাকাতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে নেতারা কর্মসূচি শেষ করে চলে যান।

এরপর প্রেস ক্লাবে ফিরে রব ঘোষণা করেন সোমবার মৎস্য ভবনের সামনে নাগরিক ঐক্যের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়ে আ স ম আবদুর রব বলেন, কোনো গ্রামে যদি ডাকাত পড়ে, চোর পড়ে মানুষ কী করে? মানুষ ঘেরাও করে চোর ধরে, ডাকাত ধরে। সারা বাংলাদেশের ভোট চুরি করেছে, দেশের ১৬ কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ডাকাতদের ধরতে হবে। ভোটডাকাতি করা রাষ্ট্রদ্রোহিতা। জনগণের ভোটডাকাতি করা সংবিধানবিরোধী কাজ।

তিনি বলেন, যেখানেই যাই জনগণ বলে আমাদের ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করে দেন। আমাদের ভোট পুনরুদ্ধার করতে হবে। রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে এদের বিদায় করতে হবে, বিতাড়িত করতে হবে। জনগণের সরকার যদি কায়েম করতে হয়, মুক্তিযুদ্ধের সরকার যদি কায়েম করতে হয়, জাতীয় সরকার যদি কায়েম করতে হয় তাহলে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে। আসুন, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এই ভোটডাকাত, ভোটচোরদের বাংলাদেশের মাটি থেকে বিদায় করি।

রব বলেন, এখানে অনেক আইনজীবী আছেন তাদের বলব, এই ভোটডাকাতদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ডাকাতি যারা করেছে তাদের সবাই চিনেন, তাদের চিহ্নিত করেন। রাস্তা-ঘাটে, পথে-প্রান্তরে যেখানে পারেন দেখলে জনগণকে বলেন, এই চোর যায়, ডাকাত যায়। চোর চোর ধর, ডাকাত ডাকাত ধর ধর।

তিনি বলেন, কী নির্লজ্জ বেহায়া, লজ্জা-শরম নেই ওদের। ওরা (আওয়ামী লীগ) ভোটডাকাতি করে বলে যে, আমরা ডাকাতি করিনি। চোরে চুরি করলে মাথানত করে থাকে আর এরা চুরি করে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। এদের মাথা থামিয় দিতে হবে। গ্রামে, মহল্লায়, পাড়ায় বাংলাদেশে কোথাও চোরদের বড় গলায় কথা বলার কোনো সুযোগ নেই, তাদের কথা বলার কোনো অধিকার নেই। এদের ঝেটে বিদায় করতে হবে।

ডাকসু ভবনের কাছে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা উল্লেখ করে সাবেক ভিপি আসম আবদুর রব বলেন, আজকেও ডাকসু ভবনের পেছনে কয়েকটা ককটেল ফাটানো হয়েছে। কারা ফাটায়? প্রক্টর জানেন না, ভাইস-চ্যান্সেলর জানেন না। এই ডাকসু থেকে স্বাধীনতা পতাকা উত্তোলিত হয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশে স্বাধীনতার পূর্বে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয়নি একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া।

রবের সভাপতিত্বে ও মোশতাক আহমেদ ও জাহাঙ্গীর আলম মিন্টুর পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নাগরিক ঐক্যে মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, কাজী আবুল বাশার, গণফোরামের অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, জগলুল হায়দার আফ্রিক, জেএসডির তানিয়া রব, সানোয়ার হোসেন তালুকদার, নাগরিক ঐক্যের শহিদুল্লাহ কায়সার, বিকল্পধারার অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, শাহ আহমেদ বাদল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

মঈন খান বলেন, আমরা স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই যে, যে নির্বাচনে ভোটডাকাতি ২৯ ডিসেম্বর হয়েছে, সেই নির্বাচন আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। এক কথায় স্পষ্টভাষায় বলতে হবে যে, সত্যিকার জনগণের প্রতিনিধি ছাড়া এ দেশে শাসন করার অধিকার কেউ রাখে না এবং এ দেশের সত্যিকার মালিক হচ্ছে জনগণ, এ দেশের সব ক্ষমতার উৎস্য হচ্ছে জনগণ।

তিনি বলেন, জনগণের অবিচল আস্থা রেখে এ দেশে পুনরায় আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে জনগণের অধিকার, জনগণের আমানত স্বাধীনতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেব। ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না, তারা একটি বিশ্বাসে রাজনীতি করে যে, এ দেশের মানুষকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে হবে, সত্যিকার স্বাধীনতা দিতে হবে, অর্থনৈতিক সাম্য দিতে হবে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা কর্মসূচি দেব। পাটকল শ্রমিক যদি কেউ মারা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর যদি অত্যাচার আরও বাড়ে, নারী নির্যাতন না কমে, গুম-খুন বন্ধ না হয়, আর আপনার (সরকার) মতো ফোরটুয়ান্টি গর্ভমেন্ট যদি চলে না যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে আমরা সামনে আসছি।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এক বছর আগে ভোটডাকাতির পর শুরু হয়েছে বাংলাদেশকে এক এক করে পৈতৃক সম্পত্তিতে পরিণত করা। আজকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি রাজনৈতিক দল এবং তার অঙ্গসংগঠন সবাই মিটিং করতে পারবে। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মিটিং করতে পারবে না, বিএনপি মিটিং করতে পারবে না। এটি কী কারো বাবার সম্পত্তি?

তিনি আরও বলেন, আজকে আমরা যে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেছি, আশা করছি জনগণ এই বিক্ষোভ মিছিল অব্যাহত রাখবে। আর তাতেই জনসাধারণের মুক্তি আসবে।