শ্লীলতাহানির অভিযোগে মণিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যানের করা মামলা পিবিআই তদন্তের সত্যতা মেলেনি

নূরুল হক, মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি: যশোরের মণিরামপুর উপজেলার মাসিক আইন শৃংখলা কমিটির সভায় একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানমের সাথে স্থানীয় ইউপি জনপ্রতিনিধিদের-বাগ-বিতন্ডা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিমন্ত্রীর এপিএসসহ ৪ জনপ্রতিনিধিদের নামে যশোর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানমের দায়েরকৃত মামলার পিবিআই তদন্তে সত্যতা মেলেনি।

মামলার এজাহার ও আইনজীবিদের মাধ্যমে জানাযায়, ২০২০ইং সালের ২২ জুলাই বুধবার যশোরের মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের আইন শৃংখলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য প্রধান উপদেষ্টা ও মামলার বাদী উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম নিজে উপদেষ্টা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

সভা চলাকালে বাদী উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম-মণিরামপুর পৌর শহরে ৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরি সংগঠিত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। এ সময়ে সভার বিধি ভঙ্গ করে এজেন্ডা বর্হিভূত একটি অযৌতিক বিষয় নিয়ে আসামী ৯নং ঝাঁপা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সামছুল হক মন্টু সভার মধ্যে হট্টগোল শুরম্ন করে দেয়। উপজেলা চেয়ারম্যানের পুত্র ফেসবুক আইডিতে জনপ্রতিনিধিদের কটাড়্গ করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ভিত্তিহীন এ ষ্টাটাস কেন প্রদান করেছেন? তার বিচার দাবী করেন তিনি।

বাদীর দাবী এ বিষয়ে তিনি যুক্তিসংগত জবাব প্রদান করলেও আসামীগণের পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক সভায় হট্টগোল শুরু করে এবং তাকে গালিগালাজ ও মারপিট করতে উদ্যত হয়। তিনি আসামীগণের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে দ্রুত সভাস্থল ত্যাগ করে পাশেই জীপ গাড়ীতে উঠার প্রাক্কালে আসামীরা কূরম্নচীপূর্ণ অঙ্গভঙ্গিসহ তার পরনের কাপড় টানাটানি করে শস্নীতাহানি ঘটায়। এ সময় তার ভ্যানিটি ব্যাগ হতে মূল্যবান কাগজপত্র ও ১টি শাওমি ১৮ হাজার টাকার মোবাইল সেট পড়ে গেলে আসামীরা কাগজপত্রসহ তার মোবাইল সেটটি নিয়ে চলে যায়। এ ঘটানার বিচার দাবী করে বাদী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমা খানম ২০২০ সালের ২৭ জুলাই যশোর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে-৫০০/৩৫৪/৩৭৯/৫০৬(২) ধারায় মামলা করেন। যার সিআর মামলা নং-২৫০/২০। মামলার আসামী করা হয় যথাক্রমে (১) ৯নং ঝাপা ইউপি চেয়ারম্যন-সামছুল হক মন্টু (৫২), (২) ৩নং ভোজগাতী ইউপি চেয়ারম্যান-মোঃ আব্দুর রাজ্জাক (৬০), (৩) উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান- কাজী জলি আক্তার (৩৮), (৪) উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান-উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু (৪৫) এবং (৫) প্রতিমন্ত্রীর এপিএস কবির খাঁন।

তৎকালিন সময়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মনজুরুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিকেশন (পিবিআই)কে নির্দেশ প্রদান করেন। সে আলোকে তদন্তপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক গাজী মাহ্বুবুর রহমান সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন, বাদী, বাদীর প্রদেয় সাক্ষীগণের সাক্ষ্য গ্রহণ এবং নিরপেক্ষ ৩ জন সাক্ষী যথাক্রমে (১) মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান, (২) মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম এবং (৩) মণিরামপুর পৌরসভার মেয়র কাজী মাহমুদুল হাসানের লিখিত জবানবন্দি গ্রহণসহ প্রকাশ্য ও গোপনে দীর্ঘ তদন্ত করেন।

পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক গাজী মাহ্বুবুর রহমান তদন্ত শেষে গত ৩ জানুয়ারী বিজ্ঞ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তিনি আসামীগণের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ চুরি, মানহানী বা শ্লীলতাহানি কিংবা বাদীকে হুমকি প্রদানের ঘটনা ৫০০/৩৫৪/৩৭৯/৫০৬ ধারার কোন অপরাধের সত্যতা পাইনি সেমোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তবে ২নং আসামী আব্দুর রাজ্জাকের বিরম্নদ্ধে পেনাল কোডের ৫০৬ ধারার অপরাধের প্রাথমিকভাবে সত্যতার প্রমাণ পেয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।

গত বৃহষ্পতিবার ২৫ ফেব্রুয়ারী এ মামলার ধার্য দিনে বাদী ও বিবাদীগণ তাদের আইনজীবিদের মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালতের কাছ থেকে তদšত্ম প্রতিবেদনের কপি হাতে পান।

বিবাদী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক প্রতিমন্ত্রীর এপিএস কবির খান বলেন, ‘আইন শৃংখলার সভায় আমি মাননীয় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যরে পাশেই ছিলাম। আমি সভা শেষ না পর্যšত্ম সভাস্থলের (উপজেলা মিলনায়তন) ভিতরে ছিলাম, বাইরে কি হয়েছে কিছুই জানিনা। উপজেলা চেয়ারম্যান প্রতিহিংসার বশবতি হয়ে আমার নামে এ মিথ্যা মামলা করেছেন। অবশ্যই এ মামলার কোন সত্যতা নেই। পিবিআই তদন্তে সেটা উঠে এসেছে।

জানতে চাইলে এ মামলার প্রধান বিবাদী ইউপি চেয়ারম্যন-সামছুল হক মন্টু বলেন, ‘যেহেতু ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট, সুতরাং তদšত্ম প্রতিবেদনে অবশ্যই সত্য ঘটনা উঠে এসেছে। বাদী প্রতিবেদনের বিপড়্গে নারাজি দিয়েছে। বিজ্ঞ আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। বাদীর অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে বাদীর বিরুদ্ধে যথাযথ আদালতে মানহানীর মামলা করবো। অন্যান্য বিবাদীরাও একই বক্তব্য প্রদান করেছেন।

জানতে চাইলে এ মামলার বাদী উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম বলেন, ‘আসামীরা আমাকে চরম অপমানসহ টানাহেচড়া ও শস্নাতাহানী করেছেন-এটা সত্য। আমি এ তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ওই দিনেই বিজ্ঞ আদালতে নারাজি পিটিশন করেছি। বিজ্ঞ আদালত অবশ্যই বিষয়টি আমলে নেবেন।