শ্রীপুরে বাণিজ্যিকভাবে হচ্ছে টক বরইয়ের আবাদ

আবুসাঈদ

কুল বা বরইয়ের বৈজ্ঞানিক নাম (তরুরঢ়যঁং ুরুুঢ়যঁং)। বাংলাদেশে টক বা মিষ্টি সব ধরণের বরইয়ের চাহিদা রয়েছে। গাজীপুরের শ্রীপুরে বেশ কয়েক বছর যাবত বাণিজ্যিকভাবে বরইয়ের আবাদ হচ্ছে। প্রথম দিকে আপেল কুল ও বাউকুলের ব্যাপক চাষাবাদ ছিল। সময়ের ধারাবাহিকতায় বউ সুন্দর ও টক বরই চাষেও চাষীরা ঝুঁকছেন। কম খরচে অধিক ফলনে বরইয়ের উৎপাদন চাষীদের বাণিজ্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

শ্রীপুরের বরই যাচ্ছে ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। মিষ্টি বরইয়ের মতো টক বরইয়ের বাজারমুল্য পাচ্ছেন চাষীরা। ফলে টক বরইয়ের বাণিজ্যিক চাষও শুরু হয়েছে। ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত গাছে বরইয়ের ফলন আসবে বলে জানিয়েছেন এ চাষে সংশ্লিষ্টরা। বরই চাষে শ্রীপুরের চাষীরা বিপ্লব ঘটানোর ইঙ্গিতও দিয়েছেন।

গৃহিণী জুলেখা বেগম বলেন, বরই বাগান গড়ে তোলা ও ফসল ফলানো তার নেশা। স্বামীর সাথে জমিতে শ্রম দিয়েছেন। বরই কুড়ানো, সার, পানি, কীটনাশক, গোবর প্রয়োগসহ সকল ধরণের পরিশ্রম স্বামী-স্ত্রী একত্রেই করেন। ৮/১০টা সচ্ছল পরিবারের চেয়েও ভালভাবেই জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা। নতুন কোনো চাষী উদ্যোগ নিলে তাদেরকেও তারা পরামর্শ এবং সহযোগিতা করার আশ^াস দিয়েছেন।

শ্রীপুর পৌরসভার উজিলাবো গ্রামের বাগান মালিক কবির হোসেন মৃধা বলেন, প্রায় ১০ বছর যাবত টক ও আপেল কুলের চাষ করছেন। শ্রীপুরের আবহাওয়া ও মাটি বরই চাষের জন্য উপযোগী। যাদের চাষ করার মতো জমি রয়েছে তারা বরই চাষ করলে তাঁর মতো সফল হবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। নতুন চাষীরা এগিয়ে আসলে এ চাষে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব বলেও দাবী করেন তিনি। ইতোমধ্যে তার সফলতা দেখে আশপাশের গ্রামের চাষীরা পরামর্শ নিয়ে বরই বাগান করেছেন এবং তারাও লাভবান হচ্ছেন।

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বামদি গ্রামের মৃত জনাব আলী ফকিরের ছেলে ফল ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস বলেন, এবছর কেওয়া গ্রামে একটি বরই বাগান কিনেছেন ২ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। দৈনিক ৫ জন শ্রমিক বরই নামিয়ে থাকেন। ঢাকা, মাওনা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বরই বিক্রি করেন। আগামী ২ মাস পর্যন্ত মৌসুমের পুরো সময় তারা বরই বিক্রি করবেন। পাঁচজন শ্রমিক দুই মাসে বাগানে শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারা ব্যবসায়িকভাবেও অনেকটা লাভবান।

শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া গ্রামের বরই বাগান মালিক জামাল উদ্দিন পাঠান। তিনি বলেন, ৭০ শতক জমিতে ১১৬টি বরই গাছে দেড় মণ বরই পেয়ে থাকেন। এবার ২ লাখ ৭০ হাজার টাকায় বাগানটি পাইকারী বিক্রি করেছেন। বরইয়ের জমিতে রাসায়নিক সারের সাথে ৪/৫ বার পনি সেচ দিতে হয়। পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচাতে বরইয়ের ফুল আসার আগেই কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। ২০ হাজার টাকা খরচ করে দুই বছর আগে বরইয়ের বাগান করেন। এখন প্রতি বছর সার, পানি, গোবরসহ ১০ হাজার টাকা সর্বসাকুল্যে খরচ হয়। দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা বিক্রি করে তিনি লাভ পেয়েছেন ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তার সফলতা দেখে এলাকা ছাড়াও অন্যান্য গ্রামের চাষীরা নিজ উদ্যোগে বরই বাগান গড়ে তোলছেন।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এ এস এম মুয়ীদুল হাসান বলেন, ফল চাষের দিক থেকে শ্রীপুরে কাঁঠাল ও লিচুর পরেই রয়েছে কুলের অবস্থান। গত বছর ৪’শ ৫ হেক্টর জমিতে কুলের চাষ হয়েছে। বাজার এবং চাষীদের চাহিদা ও কৃষি সম্প্রসারণ ভিত্তিতে এবার ৪’শ ৫০ হেক্টর জমিতে কুলের আবাদ হয়েছে। শ্রীপুরে আপেল কুল, বাউকুল, বল সুন্দরী কুলের চাষের প্রচলন ছিল। কিন্তু বেশ কয়েক বছর যাবত বাণিজ্যিক ভিত্তিতে টক কুলের চাহিদাও বেড়েছে। চাষে আগ্রহী নতুন কেউ এিেগয়ে আসলে উন্নত জাতের কুলের চারা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সহযোগিতা করবে।