শৈলকুপায় ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়

এম হসান মুসা, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) থেকে: ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ভাটায় নিয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। যার ফলে আবাদি জমির পুষ্টি উপাদান কমে কৃষিপণ্যের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট ৩২ হাজার ৭৪৭ হেক্টর তিন ফসলি আবাদি জমি রয়েছে। এসব জমিতে ধান, পাট, পেঁয়াজ, গম, ভুট্টা, সরিষা, মরিচ, বেগুন, ডালসহ বিভিন্ন জাতের কৃষিপণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে সরকারি নিয়ম অমান্য করে এসব আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইট তৈরি করছেন ইটভাটার মালিকেরা।

ফসল উৎপাদনের জন্য শতকরা ৫ ভাগ যে জৈব উপাদান দরকার, তা সাধারণত মাটির ওপর থেকে ৮ গভীর পর্যন্ত থাকে। কিন্তু ইটভাটার মালিকেরা মাটির উপরিভাগের এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত কেটে নিচ্ছেন। এতে কেঁচোসহ উপকারী পোকামাকড় নষ্ট হচ্ছে।

শৈলকুপা উপজেলায় ২২টি ইটভাটা রয়েছে। সম্প্রতি অনুমতি না থাকায় পরিবেশ অধিদপ্তর ১০ টি ইটভাটা গুড়িয়ে দিলেও সেগুলো পুনরায় চালু করা হচ্ছে। সরকারি বিধি মোতাবেক সর্বোচ্চ সাড়ে চার বিঘা অকৃষি জমিতে একটি ইটভাটা নির্মাণের নিয়ম থাকলেও তা অনেক ড়্গেেত্র মানা হয়নি। এ ছাড়া বেশির ভাগ ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় যার ৬ টি ভাটা পৌরএলাকায় অবস্থিত।বেশিরভাগ ইটভটায় কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে হাজার হাজার মণ কাঠ।

ইটভাটা সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ভাটায় বছরে ৫০-৫৫ লাখ ইট তৈরি হয়। প্রতি হাজার ইট তৈরি করতে প্রায় ৮৮ ঘনফুট মাটি প্রয়োজন। সেই হিসেবে একটি ইটভাটায় বছরে প্রায় পাঁচ লাখ ঘনফুট মাটি দরকার হচ্ছে। মালিকেরা এক হাজার ঘনফুট মাটি মাত্র ৫০০-৭০০ টাকায় কৃষকের জমি থেকে কেনেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে থানা শহরের মধ্যদিয়ে।

ট্রাক্টর,নসিমন,নাটাহাম্বায় করে শহরের মধ্যদিয়ে মাটি পরিবহন করা হয়। এতে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। আর যানজট লেগেই থাকে। মাটি পরিবহনে মানা হয়না কোন নিয়ম কানুন। পাকা রাস্তায় মাটি পড়ে তা পথচারীদের বিড়ম্বনার সৃষ্টি করছে।

এলাকার অনেকে জানান, কৃষকেরা জমির উর্বরতাশক্তির ক্ষতির দিক চিন্তা না করে সাময়িক লাভের আশায় অবাধে এসব মাটি বিক্রি করছেন।

বড়–লিয়া গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, টাকার লোভে জমির মাটি বিক্রি করি। কিন্তু মাটিকাটা জমিতে ফসলের এতো বড় ক্ষতি হয়, তা আমরা জানি না।

একাধিক ইটভাটার মালিক বলেন, ইটভাটা তৈরি করতে কিছুটা অনিয়ম করা হয়। এ ছাড়া জমি ও মাটি পাওয়া যায় না। তাই জমির মালিকদের কাছ থেকে আমরা মাটি ক্রয় করে থাকি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আক্রাম হোসেন বলেন, কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ায় পুষ্টি উপাদান কমে গিয়ে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইটভাটা মালিকদের বিরম্নদ্ধে কৃষি বিভাগ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা লিজা জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা প্রদান করা হবে। এছাড়াও এ বিষয়ে জনসচেতনতা মূলক প্রচারনার ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।