শহীদ বেলালের স্মৃতি কেউ মুছে ফেলতে পারবে না : বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম

ফরিদ আহম্মেদ, সরিষাবাড়ি (জামালপুর) প্রতিনিধিঃ জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার যে কয়েকটি জায়গায় পাক হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ সংগঠিত হয় তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কান্দাপাড়া বাজার।পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধ সংগঠিত হয় স্মৃতি বির্জরিত এই জায়গায়।এখানেই দেশের জন্য নিজের জীবন কে আত্নদান করেন শহীদ বেলাল। অথচো তার এই স্মৃতি কে মুছে ফেলতে গভীর যড়যন্ত্র করছে স্বাধীনতা বিরোধী একটি মহল। তাই বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বলেছেন,শহীদ বেলালের স্মৃতি কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।

সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) মুক্তিযোদ্ধা গবেষণা বিষয়ক জায়গাটি পরিদর্শনে আসলে কুচক্রী মহল কে উদ্দেশ্য করে এসব কথা বলেন,বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম।

শহীদ বেলাল সম্পর্কে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউনুস আলী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করার পূর্বশর্ত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংস করা ও ইতিহাস বিকৃতি করা। ১৯৭১ সালের আগষ্ট মাসের ২৬ তারিখে দুর্ধর্ষ পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সকাল সারে দশ ঘটিকার দিকে শুরু হয় মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ যুদ্ধ যা মুহূর্তের মধ্যেই রূপান্তরিত হয় সন্মূখ যুদ্ধে। তুমুল যুদ্ধে হতাহত হয় শত্রুপক্ষের পাঁচ জন সৈন্য। যুদ্ধের এক পর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয় বেলাল, আমজাদ এবং মান্নান । আমরা কোনরকমে নিরাপদ স্থানে সরে আসতে পারলেও পায়ে ব্রিটিশ এলএমজি’র ব্রাসফায়ারে ঝাঁঝড়া হওয়ায় বেঁচে ফিরতে পারেনি বেলাল। বর্বর পাক বাহিনীর হাত ধরা পরে বেলাল। ওর পা ধরে টেনে হিছড়ে নিয়ে যায় মাত্র ত্রিশ গজ দূরে অবস্থিত রেল লাইনের উপর। বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সর্বাংঙ্গ ক্ষতবিক্ষত এবং মাথার খুলি, রক্তে রঞ্জিত হয় মাটি। আর মাথার মগজ গলে পড়ে ঢেকে দেয় মাটি।

ভয়াবহ যুদ্ধক্ষেত্রে ১৯৭২ সালে ছোট্ট একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করে প্রতি বছর নিকটস্থ পোগলদিঘা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও আপামর জনসাধারণ প্রতি বছর শ্রদ্ধা নিবেদন করলেও আজ আর সে শ্রদ্ধা নিবেদন হয় না। কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারায় শহীদ মিনারের সন্মূখে পুর্ব পাশ প্রায় ঘেঁষে বিশাল পাঁকা মসজিদ, উত্তর পাশ ঘেঁষে হাফিজিয়া মাদ্রাসাঘর, দক্ষিণ পাশে লাইন ধরে কয়েকটি টয়লেট ও পশ্চিম পাশে বাংলাদেশ রেলওয়ের জমিতে পুকুর কাটা হয়েছে।শহীদ মিনারের পার ঘেঁষে কাটা হয়েছে পুকুর। অর্থাৎ শহীদ মিনারটি অবরুদ্ধ।

শহীদ বেলালের সম্পর্কে জানতে গত ১৯/০২/২০২১ তারিখে পরিদর্শনে আসেন জনাব রঞ্জন কুমার সিংহ এর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের পরিদর্শক দল। উনার সাথে আনিত কাগজপত্র হতে জানা যায়, ওখানে কোন যুদ্ধ হয়নি। ঐটি স্রেফ একটি বদ্ধভূমি। যাদুঘর প্রতিনিধি দলের সাথে আমাদের আলোচনায় বেরিয়ে আসে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র হতে রক্ষা করতে হলে, পূর্বের ন্যায় শ্রদ্ধা নিবেদন পূনরায় শুরু করতে হলে শহীদ মিনারের সংস্কার প্রয়োজন।

এ সম্পর্কে একটি আবেদনপত্র গত ২৫/০৩/২০২১ তারিখে ডিসি, জামালপুরের বরাবরে প্রেরণ করা হয় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সরিষাবাড়ীর সংসদ সদস্য ও মাননীয় তথ্য প্রতিমন্ত্রী, ডাক্তার মুরাদ হাসান এবং ইউএনও সরিষাবাড়ী বরাবরে প্রেরণ করা হলেও আশানুরূপ কোন কিছু হয়নি।

এমতাবস্থায় শহীদ বেলাল নগরের স্মৃতিচিহ্ন স্বরূপ “শহীদ বেলাল স্মৃতি যাদুঘর” এবং “স্মৃতি স্মারক” নির্মাণের ব্যবস্থা করে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন ও ইতিহাস মুছে ফেলার ষড়যন্ত্রের হাত হতে রক্ষার নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব মহোদয়ের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কন্যার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন শহীদ বেলালের সহযোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান, জিন্নাত আলী, ইউনুস আলীসহ অন্যান্যরা।