রিকশা চালিয়েই দিন কাটছে যার

এই আমার দেশ ডেক্স : স্বামী ছেড়ে চলে গিয়েছেন। সংসার পেতেছেন নতুন করে। কয়েক বছর আগে তিন সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়লেন বাংলাদেশের মোজাম্মত জেসমিন। গৃহবধূ জেসমিন কোনওদিন উপার্জন করেননি। ভেবেই দিশেহারা, কী করে তিনজন সন্তানের মুখে দু’বেলা ডালভাত তুলে দেবেন এই অবস্থায় নিম্নবিত্ত পরিবারের আর পাঁচজন মহিলা যা করেন, তাই করলেন জেসমিন। লোকের বাড়ি কাজ নিলেন। কিন্তু দেখলেন তাতে সমস্যার সুরাহা হল না । সংসারে অনটন থেকেই গেল। তার উপর, জেসমিন বাচ্চাদের দেখভালের সময়ও পাচ্ছিলেন না।লোকের বাড়ি ঠিকে কাজ ছেড়ে জেসমিন শুরু করলেন কারখানার কাজ। কিন্তু সেখানেও মজুরি কম। তার উপর শরীরের প্রচণ্ড যন্ত্রণা হতে থাকল। ফলে কারখানার শ্রমিক হয়ে থাকাও বেশিদিনের জন্য বজায় থাকল না।এ বার কি তবে ভিক্ষা? জেসমিনের মন থেকে সায় দিল না। আল্লাহ একজোড়া হাত আর একজোড়া পা দিয়েছেন। তার পরেও কেন বিনা পরিশ্রমে উপার্জন করবেন? ভাবলেন, এমন পথে যাবেন যেখানে মেয়েরা সাধারণত পা রাখেন না।পড়শির একটি সাইকেল রিকশা নিয়ে শুরু হল চেষ্টা।

প্রথমে দুঃসাধ্য মনে হলেও কয়েকদিনের মধ্যে আয়ত্তে এসে গেল। জেসমিন ঠিক করলেন তিনি রিকশা চালিয়েই উপার্জন করবেন কার্যত অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছেন জেসমিন। চট্টগ্রামের রাস্তায় রিকশা চালান তিনি, সম্ভবত বাংলাদেশের অন্যতম মহিলা রিকশাচালক। রিকশার প্যাডলই তাঁর এবং সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিয়েছে। তিন সন্তানের স্কুলের বেতনের জোগান দিয়েছে।জেসমিনের কাছে লড়াই শুধু অসম্ভব নয়। ছিল অত্যন্ত অসম।

প্রথম দিকে উড়ে এসেছে অসংখ্য টিপ্পনি। ‘এটা মেয়েদের কাজ নয়’, ‘এই কাজ ইসলামবিরোধী’, শুনতে হয়েছে এরকম বক্রোক্তি। কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন জেসমিন।প্রথম দিকে সওয়ারি পেতেন না তিনি। কিন্তু হাল ছাড়তে নারাজ জেসমিন। সংগ্রামের মূল্য পেয়েছেন তিনি। এখন যাত্রী পেতে সমস্যা হয় না। পুরনো যাত্রীরা তো আছেনই। নতুনরা প্রথমে একটু থমকে যান ঠিকই। কিন্তু শেষ অবধি জেসমিনই তাঁদের পৌঁছে দেন গন্তব্যে।অমানুষিক পরিশ্রম হয় জেসমিনের। কিন্তু নিজের জীবনে খুশি জেসমিন। রিকশা চালিয়ে প্রতি মাসে বাংলাদেশি মুদ্রায় তাঁর উপার্জন হয় ১৫ হাজার টাকার বেশি।মাথায় হেলমেট, পরনে ছাপা শাড়ি। রিক্সা চালানোর পরেও হাসি মিলিয়ে যায় না জেসমিনের মুখ থেকে। এ ভাবেই তিনি খুঁজে পেয়েছেন বেঁচে থাকার আনন্দ।