রাজশাহীতে ভেজাল খেজুর গুড়ে সয়লাব

ডাঃ মোঃ হাফিজুর রহমান (পান্না),রাজশাহী ব্যুরোঃ চিনি মেশানো ভেজাল খেজুর গুড়ে সয়লাব রাজশাহীর বাজার। যাচ্ছে রাজধানী সহ দেশের সর্বত্র। রাজশাহী জেলার দুর্গাপুর, পুঠিয়া, বাগমারা, চারঘাট, বাঘা ৫টি উপজেলায় উৎপাদিত হয় সুমিষ্ট খেজুর গুড়।

মৌসুমের শুরুতেই রাজশাহীর নগর থেকে শুরু করে গ্রামের হাট বাজারে উঠতে শুরু করেছে খেজুর গুড়। কিন্ত এক শ্রেণীর অসাধু ব্যাবসায়ী চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে উপজেলা গুলোতে এখন সামান্য পরিমাণ খেজুর রসের সঙ্গে চিনি, আটা, হাইড্রোস, ফিটকারি, সোডা, চুন, নারিকেলের তেল ও রং মিশিয়ে তৈরি করছে ভেজাল খেজুর গুড়। আর এই গুড় ছড়িয়ে যাচ্ছে দেশে সব জায়গাতে।

শীত শুরুতেই নবান্নের আমেজ এখন শহর থেকে গ্রাম গঞ্জের প্রতিটি বাসা বাড়ীতে। চলছে নতুন ধানের আটায় (ময়দা) পিঠা পুলির উৎসব। আর পিটা বানাতে না জেনেই ক্রেতারা কিনছেন ভেজাল গুড়। পীড়া জনিত নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ওই গুড় দিয়ে শিশুদের জন্য কোন খাদ্য তৈরী করে খাওয়ালে লিভার ক্যন্সারের মতো ভয়াবহ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ভেজাল গুড় সনাক্তের মাধ্যমে দোষীব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বাজার মনিটরিং কমিটির কাছে জোরদাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল।

চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ খায়রুল আতার্তুক বলেন, চিনি মিশ্রত ভেজাল গুড় খেলে পেটের পীড়া সহ নানা জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবিষয়ে চারঘাটের বাজার গুলোতে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, গুড়ের চেয়ে চিনির দাম কম হওয়ায় খেজুর গুড়ে চিনি মেশাচ্ছে চাষীরা। ভোরবেলা গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করে বাড়ীতে নিয়ে এসে কড়াইয়ে রসজাল করে লালচে বর্নের হলেই চিনি ঢেলে দেয় কড়াইয়ে তারপর একটু জাল দিলেই চিনি গুলে রসের সাথে মিশে তৈরী হচ্ছে গুড়। খেজুর রসের সমপরিমান লিটার চিনি মিশ্রিত করছে। বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ৫২ টাকা আর গুড় বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। গুড়ে চিনি মিশিয়ে চাষীরা প্রতি কেজি গুড়ে বেশী দাম পাচ্ছে প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ২২ টাকা বেশী।

পুঠিয়া উপজেলার নাম না বলার শর্তে বলেন, গুড় তৈরীকারী চাষী বলেন, রস জাল করে লালচে বর্নের হলেই চিনি মিশিয়ে দেওয়া হয়। চিনি গলে গেলে হাইড্রোস, ফিটকারী রস গাড়ো হয়ে গিয়ে গুড়ের রং হয় উজ্জল। চিনি, হাইড্রোজ, ফিটকিরী মিশ্রিত গুড় দেখতে চকচকে ও অনেক সুন্দর লাগে। সে কারনে বাজারে চাহিদাও অনেক বেশী হয় উজ্জল রংয়ের গুড়ের। খেজুর রসের সাথে এক কেজি চিনি মেশালে এক কেজি গুড় হচ্ছে। গুড়ে চিনি মেশানোর জন্য প্রতিকেজি ২০ থেকে ২৫ বেশী টাকা পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, তিনি শুধু একা নয় বর্তমানে প্রতিটি গ্রামের চাষীরা একইভাবে গুড় তৈরী করছে।

পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারের গুড়ের আড়ৎদার আলম হোসেন বলেন, বর্তমানে হাট বাজারে আমদানীকৃত খেজুর গুড়ের অধিকাংশই চিনি মিশ্রিত ভেজাল গুড়। আমরা কেনার সময় চিনতে পারলেও কোন কিছু করার থাকেনা। কারন চিনি মিশ্রিত ব্যাতীত স্বচ্ছ খেজুর রসের তৈরী গুড় পাওয়া অত্যান্ত দুস্কর। বাজারে দুই এক জনের কাছে ভালো গুড় পাওয়া গেলেও চাহিদা মতো না পাওয়ায় ব্যবসার স্বার্থে বাধ্য হলেই কিনতে হচ্ছে ভেজাল গুড়।

এই গুড় জেলার বিভিন্ন হাট বাজার থেকে পাইকাররা রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করছেন। তিনি বলেন, ভেজাল প্রতিরোধে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা অন্যথায় গুড় ভেজাল প্রমানের মাধ্যমে দোষীব্যাক্তিকে সনাক্তে করে আইনের আওতায় নিয়ে না আসা পর্যন্ত ভেজাল দেওয়া বন্ধ হবে না। ভেজাল বন্ধে প্রশাসনের ভূমিকা ছাড়া কোন পথ নেই।

রাজশাহী সিভিল সার্জন ডাঃ কাজি মিজানুর রহমান বলেন, খেজুর রসের সাথে চিনি মিশ্রিত করে আগুনের মাধ্যমে জাল করে একত্রিত করলে সেটি বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। আর এই চিনি মিশ্রিত ভেজাল গুড় দিয়ে কোন খাদ্য দ্রব্য তৈরী করে খেলে পীড়া জনিত নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ওই গুড় দিয়ে শিশুদের জন্য কোন খাদ্য তৈরী করে খাওয়ালে লিভার ক্যন্সারের মতো ভয়াবহ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।