রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে: আওয়ামী লীগের ভয় বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিক পরিস্থিতি আস্তে আস্তে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। উত্তপ্ত হওয়ার চেয়েও রাজনীতিতে বিরোধী দলের শক্তি ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। আর বিরোধী দলের এই দৃশ্যমান শক্তি প্রথমদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ উপেক্ষা করলেও আস্তে আস্তে আওয়ামী লীগের ভয় বাড়ছে। আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে যদিও এ সমস্ত কর্মসূচিকে জনসম্পৃক্তহীন কর্মসূচি হিসেবে অভিহিত করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের ঘরোয়া আলোচনায়, আড্ডায় এসমস্ত কর্মসূচি নিয়ে নানারকম উদ্বেগ, ভয়-ভীতি ইত্যাদি প্রকাশিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ পাঁচ কারণে বিরোধী দলের এই সমস্ত সমাবেশ এবং আন্দোলনের কর্মসূচিতে ক্রমশ আতঙ্কবোধ করছে। এই কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-

১. অর্থনৈতিক পরিস্থিতি: আওয়ামী লীগ আন্দোলনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা একটি দল। আন্দোলন কখন কিভাবে দানা বাধে, কিভাবে আন্দোলন পুঞ্জিভূত হয় সে সম্পর্কে আওয়ামী লীগের চেয়ে ভালো অন্য কোনো রাজনৈতিক দল জানেনা। আর আওয়ামী লীগ এটাও জানে যে, একটি রাজনৈতিক আন্দোলন শক্তিশালী হওয়ার পিছনে অর্থনৈতিক সংকট বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাস গুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, যখনই অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয়েছে, সাধারণ মানুষের জীবনে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে, নানা রকম দৈনন্দিন সমস্যা বেড়ে গেছে তখন সাধারণ মানুষ আন্দোলনের দিকে ঝুঁকেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং সহ ইত্যাদি সংকটগুলো সাধারণ মানুষকে ক্রমশ অসন্তুষ্ট করে তুলছে। আর এই অসন্তোষ্টের কারণে ছিল বিরোধী দলের আন্দোলনের সামনে যে কোন সময় বড় রূপ নিতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছেন আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা।

২. আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল: আওয়ামী লীগ জানে যে, আওয়ামী লীগ যদি শক্তিশালী থাকে তাহলে কেউ তাকে পরাজিত করতে পারে না। আর আওয়ামী লীগের রাজপথে শক্তি এখনও অন্যান্য যেকোনো রাজনৈতিক দলের চেয়ে বহুগুণ বেশি। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ এটাও জানে যে, আওয়ামী লীগ যখনই বিভক্ত হয় তখনই আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের বিভক্তি রীতিমতো প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ের বিভক্তির এখন কোনো রাখঢাক নেই। দলে কোনো চেইন অফ কমান্ড নেই। এই সমস্ত কারণে আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, সামনের রাজনৈতিক আন্দোলন মোকাবিলার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।

৩. নেতৃত্বের সংকট: আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আর কোনো দৃশ্যমান নেতা নেই। যারা কর্মীদেরকে এখন উজ্জীবিত করতে পারেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ঘরে বসে বিবৃতি পাঠ করেন। আর অন্যান্য যে সমস্ত নেতারা কথাবার্তা বলেন তাদের সাথে কর্মীদের এক ধরনের দূরত্ব রয়েছে। যে সমস্ত নেতারা কর্মীবান্ধব রয়েছেন যেমন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম, মাহবুবউল আলম হানিফ সহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ তাদেরও সরকারের মধ্যে কোনো ভূমিকা নেই। যে কারণে আওয়ামী লীগ মনে পড়ছে যে, সরকার বিচ্ছিন্ন ক্ষমতাহীন এই সমস্ত জনপ্রিয় নেতাদের কথায় মাঠে কর্মীরা কতটুকু জাগবে।

৪. আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল: আওয়ামী লীগের ভয় বাড়ছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিস্থিতি দেখেও। কারণ এই সমস্ত আন্দোলনে ইন্ধন যোগায় পশ্চিমা দেশগুলোর কেউ কেউ। সাম্প্রতিক আন্দোলনেও পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে এ ধরনের ভূমিকা আছে বলে আওয়ামী লীগের সন্দেহ। আর সে কারণেই আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, সামনের দিনগুলোতে আওয়ামী লীগকে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।

৫. রাজনীতির মাঠে বন্ধুহীন: আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলোকে পাশে পাওয়া। ২০০১ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ ১৪ দল গঠন করেছিল। যে দলগুলোতে বাম এবং উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো ছিল। কিন্তু ২০১৮ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটের অন্যান্য শরিকদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই শরিক দলগুলো অনেকেই এখন আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনা করছে। সামনে বিএনপির আন্দোলনের যদি এই শরিকরা নিষ্ক্রিয় থাকে আবার কেউ কেউ ক্ষুব্ধ হয়ে যদি বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেয় তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য সেটি বড় ধরনের একটা চাপ সৃষ্টি করবে বলেই আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন।

আর এইসব কারণে আওয়ামী লীগ এখন বিএনপির আন্দোলনের ক্ষেত্রে আস্তে আস্তে একটু দৃষ্টি দিচ্ছে এবং কিছুটা হলেও চাপ অনুভব করছে।